সরকারি দুই বস্ত্রকল চালু করবে প্রাণ-আরএফএল, নীতিগত অনুমোদন

এখন পর্যন্ত ৭টি কল চালুর চূড়ান্ত প্রক্রিয়া হয়েছে। বাকি আছে আরও ১৭টি। ইজারা ও পিপিপিতে বাকিগুলো চালুরও চেষ্টা করছে বিটিএমসি।

আবার জেগে উঠবে ২৭ বছর ধরে বন্ধ সরকারি দুটি বস্ত্রকল। একটি হচ্ছে সীতাকুণ্ডের আর আর টেক্সটাইল মিল, আরেকটি রাজশাহী টেক্সটাইল মিল। তবে এবার মিল দুটি চালু হবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) ভিত্তিতে। পিপিপির ভিত্তিতে প্রাণ-আরএফএল শিল্পগোষ্ঠীর প্রাণ কনসোর্টিয়াম বস্ত্রকল দুটির জায়গা ব্যবহার করে উৎপাদনে ফিরবে।

গতকাল সোমবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়–সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের এ প্রস্তাব বৈঠকে উপস্থাপন করে। বস্ত্রকল দুটি বর্তমানে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের এ অনুমোদনের তথ্য জানান।

অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে নীতিগত অনুমোদনের চিঠি পাওয়ার পর আমরা প্রাণ-আরএফএল গ্রুপকে চুক্তি করার জন্য চিঠি দেব। তাদের সঙ্গে পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে এক থেকে দুই মাস সময় লাগবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জিয়াউল হক, চেয়ারম্যান, বিটিএমসি

সীতাকুণ্ডের আর আর টেক্সটাইল মিল ১৯৬৩ সালে ১৯ দশমিক ৪৮ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত এর উৎপাদন কার্যক্রম চলমান ছিল। এর আগে ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর অর্থনৈতিক বিষয়–সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এটি পিপিপির ভিত্তিতে পরিচালনার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।

পরবর্তী সময়ে বেসরকারি অংশীদার নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে অংশ নেয় তিনটি প্রতিষ্ঠান, যারা কারিগরিভাবে যোগ্য (রেসপনসিভ) হয়। প্রস্তাব মূল্যায়নকারী কমিটি (টিইসি) সর্বোচ্চ স্কোর অর্জনকারী হিসেবে প্রাণ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদে চুক্তি সইয়ের পক্ষে মত দেয়।

আর আর টেক্সটাইলের জায়গা ব্যবহারের জন্য এককালীন ১০ কোটি টাকা বিটিএমসিকে দেবে প্রাণ কনসোর্টিয়াম। তার বদলে পাবে তিন বছর গ্রেস পিরিয়ড। গ্রেস পিরিয়ড শেষে প্রতিবছর ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা বিটিএমসিকে দেবে। চুক্তির মেয়াদ হবে ৩০ বছরের। তবে কার্যক্রম সন্তোষজনক হলে মেয়াদ শেষে তা নবায়নযোগ্য হবে।

রাজশাহী টেক্সটাইল মিল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৫ সালে। এটি ২৬ দশমিক ৩৪ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ বস্ত্রকলও বন্ধ ১৯৯৭ সাল থেকে। আর আর টেক্সটাইলের মতো এটিও পিপিপি ভিত্তিতে পরিচালনার জন্য ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়–সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন পায়।

পরে বেসরকারি অংশীদার নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে চরকা টেক্সটাইল নামে একটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়, যা পরে কারিগরিভাবে যোগ্য বলেও বিবেচিত হয়। প্রস্তাব মূল্যায়নকারী কমিটি চরকা টেক্সটাইলের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদে চুক্তির সুপারিশ করে। বলা হয়, বেসরকারি অংশীদার কলটির জায়গা ব্যবহারের জন্য এককালীন ৬ কোটি টাকা পরিশোধ করবে। এ ছাড়া ৩ বছর গ্রেস পিরিয়ড পাবে। গ্রেস পিরিয়ড শেষে পরবর্তী বছর থেকে প্রতিবছরের জন্য ১ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে বিটিএমসিকে দেবে।

বিটিএমসি সূত্রে জানা গেছে, বিটিএমসির বন্ধ বস্ত্রকল মোট ২৪টি, এর মধ্যে ১৬টি পিপিপিতে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় বিটিএমসি। বস্ত্রকল চালু করার জন্য সংস্থাটি অবশ্য ইজারা এবং পিপিপি—দুইভাবেই এগোচ্ছে। তবে ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল ও মাগুরা টেক্সটাইল চালুর ব্যাপারে তিনবার আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করলেও কেউ অংশ নেয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পিপিপিতে ঢাকার আহমেদ বাওয়ানী টেক্সটাইল মিলস হস্তান্তরের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। গাজীপুরে কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলের জমি ওরিয়ন-কাদেরিয়া টেক্সটাইলস লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের ভালিকা উলেন মিলস, সিলেট টেক্সটাইল মিলস এবং কুড়িগ্রাম টেক্সটাইল মিলস ইজারা পদ্ধতিতে পরিচালনার জন্য সরকার অনুমোদন দিয়েছে।

জানতে চাইলে বিটিএমসির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জিয়াউল হক প্রথম আলোকে জানান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের দুটিসহ এখন পর্যন্ত সাতটি কল চালুর চূড়ান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বাকি আছে আরও ১৭টি। ইজারা ও পিপিপি—উভয় দিক থেকে বাকিগুলো চালুরও চেষ্টা করা হবে।

বিটিএমসির চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদিত নীতিগত সিদ্ধান্তের চিঠি পাওয়ার পর আমরা প্রাণ-আরএফএল গ্রুপকে চুক্তি করার জন্য চিঠি দেব। গ্রুপটি একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা জমা দিয়েছে। তাদের সঙ্গে পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে এক থেকে দুই মাস সময় লাগবে। এরপর তারা নির্মাণকাজ শুরু করতে পারবে।’

বিটিএমসি আরও ১০টি কলকে পিপিপিতে আনার জন্য চিহ্নিত করেছে বলে জানা গেছে। এগুলো হচ্ছে আমিন টেক্সটাইল, দ্য এশিয়াটিক টেক্সটাইল, জলিল টেক্সটাইল, বেঙ্গল টেক্সটাইল, সুন্দরবন টেক্সটাইল, দিনাজপুর টেক্সটাইল, টাঙ্গাইল টেক্সটাইল, দারোয়ানী টেক্সটাইল ও আফসার টেক্সটাইল।

বন্ধ বস্ত্রকলগুলো চালুর স্বার্থে ১৫ মে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পিপিপির শর্ত শিথিল করার সুপারিশ করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বৈঠকে টেক্সটাইল অঞ্চলগুলোর জায়গায় টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপনেরও সুপারিশ করা হয়। স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জাতীয়করণ করা ৭৪টি বস্ত্রকল নিয়ে ১৯৭২ সালের ১ জুলাই থেকে যাত্রা শুরু করে বিটিএমসি।