জলবায়ু পরিবর্তনে ভুগছেন শ্রমিকেরা

বিলসের আয়োজনে ‘পোশাকশ্রমিকদের জীবনে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত বিষয়সমূহে প্রভাব নিরূপণ এবং ট্রেড ইউনিয়নের করণীয়’ শীর্ষক গবেষণা ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে অতিথিরা। আজ রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনেছবি: বিলসের সৌজন্যে

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে টঙ্গী ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে তৈরি পোশাক খাতের প্রায় ৫০ শতাংশ শ্রমিক ভুগছেন। এ কারণে কর্মস্থলে অনুপস্থিতি বেড়েছে ২৩ শতাংশ, কর্মদক্ষতা কমেছে ৮ শতাংশ, উৎপাদন কমেছে ৬ শতাংশ এবং আয় হ্রাসের পাশাপাশি চাকরিতে নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে ১৩ শতাংশ শ্রমিকের। এ ছাড়া সবাই কমবেশি রোগে ভুগছেন। গরমে দুর্ভোগ বেড়েছে ৬৫ শতাংশের। অতি বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতায় নাকাল হচ্ছেন ৪২ শতাংশ তৈরি পোশাকশ্রমিক।

‘পোশাকশ্রমিকদের জীবনে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত বিষয়সমূহে প্রভাব নিরূপণ এবং ট্রেড ইউনিয়নের করণীয়’ শীর্ষক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। জিআইজেডের সহযোগিতায় গবেষণাটি করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)। এতে বলা হয়, শুধু জলবায়ু নয়, পরিবেশদূষণের কারণেও শ্রমিকেরা দুর্ভোগের মধ্যে পড়ছেন।

রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আজ বুধবার এক সংলাপে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন বিলসের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম। টঙ্গী ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের ৪০২ পোশাকশ্রমিকের ওপর জরিপ চালিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওই দুই অঞ্চলের ৯৯ শতাংশ শ্রমিকই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন। তার মধ্যে ৩৬ শতাংশ শ্রমিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, ফসল উৎপাদন না হওয়া, কীটপতঙ্গের আক্রমণ বৃদ্ধি, উৎপাদন হ্রাস ইত্যাদি কারণে স্থানান্তরিত হয়ে আসেন। ৭ শতাংশ পোশাকশ্রমিক নদীভাঙনের শিকার হয়ে এখানে স্থানান্তরিত হন।

গবেষণার তথ্যানুযায়ী, পরিবেশদূষণের কারণে পানিদূষণ ১৮ শতাংশ বেড়েছে। আগে ৭৪ শতাংশ পানি বিশুদ্ধ ছিল, যা বর্তমানে ৫১ শতাংশে নেমেছে। অন্যদিকে বায়ুদূষণ বেড়েছে ৬৪ শতাংশ। ফলে শ্রমিকদের মধ্যে ২১ শতাংশের মাথাব্যথা, ১৪ শতাংশের মাথা ঘোরানো, ২০ শতাংশের ক্লান্তি ও ২৫ শতাংশের শ্বাসকষ্ট বেড়েছে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতার কথা বলেছেন ৭ শতাংশ শ্রমিক।

গবেষণায় প্রতিবেদনমতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পোশাক কারখানার ভেতরের পরিবেশেও প্রভাব পড়ছে। ৬০ শতাংশ শ্রমিকের মতে, কারখানার ভেতরের তাপমাত্রা বেড়েছে। তাঁদের অধিকাংশই জানান, বছরের ৫-৬ মাস মাত্রাতিরিক্ত গরম থাকে কারখানার ভেতরে। অতিরিক্ত তাপ ও গরমের কারণে স্বাস্থ্য সমস্যা, নতুন রোগ, অনুপস্থিতি, কম উৎপাদনশীলতা, কর্মসংস্থানে নিরাপত্তাহীনতা, সহিংসতা ও আয় হ্রাসের তথ্য দেন শ্রমিকেরা।

জরিপে অংশ নেওয়া ৫৫ শতাংশ শ্রমিক জানান, তাঁদের আবাসিক এলাকায় পরিবেশগত সমস্যাগুলো অমীমাংসিত থাকে। ২২ শতাংশের মতে, সমস্যার সমাধান হয় স্থানীয় সরকার পর্যায়ে। ১০ শতাংশের দাবি, সমস্যার সমাধান হয় কমিউনিটি পর্যায়ে। এ ছাড়া ৫৪ শতাংশ শ্রমিকের মতে, পরিবেশগত সমস্যা মোকাবিলায় ট্রেড ইউনিয়নের নীতিগত দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে।

বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য আবু তাহের, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. রাজা মিয়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব নাজমুল হক, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মির্জা আসাদুল কিবরীয়া, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিরসনে সরকার, স্থানীয় সরকার, মালিকপক্ষ ও ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। এ ছাড়া শ্রমিকদের জন্য সামাজিক ও পরিবেশগত মানদণ্ড তৈরি করতে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে।