যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিযোগী দেশগুলোর তৈরি পোশাক রপ্তানির বাজার দখলের সম্ভাবনা দেখছে ভারত। মূলত বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তুলনামূলক উচ্চ হারে পাল্টা বা রেসিপ্রোক্যাল শুল্ক আরোপ করায় ভারতের সামনে সুযোগ তৈরি হয়েছে। তারা সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে চায়।
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (এসবিআই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। খবর দ্য ইকোনমিক টাইমস ও দ্য হিন্দু বিজনেস লাইনের।
এসবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এখন ভারতের হিস্যা ৬ শতাংশ। এর সঙ্গে প্রতিযোগী দেশগুলোর কাছ থেকে ৫ শতাংশ বাজার হিস্যা নিতে পারলে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) শূন্য দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রাসায়নিক খাতে শক্তিশালী অবস্থানের পাশাপাশি বস্ত্র খাতে তুলনামূলক সুবিধা থাকায় ভারতের তৈরি পোশাক ও পোশাকশিল্পের সরঞ্জাম যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিয়মিত রপ্তানি হয়। তবে এই খাতে বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা রয়েছে ভারতের।
প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভারতের প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম সুবিধাজনক শুল্ককাঠামো পাচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার ওপর পাল্টা শুল্কহার তুলনামূলক বেশি হওয়ায় তারা ভারতের চেয়ে অধিক চাপে রয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পাশাপাশি কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি হিস্যা দখল করতে পারেন ভারতের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষ পাঁচ রপ্তানি পণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাক অন্যতম। যেমন—যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির প্রায় ৮৮ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ৩১ শতাংশ ও ইন্দোনেশিয়ার ১৫ শতাংশ তৈরি পোশাক। এই দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কের মুখে পড়ায় ভারতের সামনে বাজারটিতে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে, এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে এসবিআইয়ের প্রতিবেদনে।
এদিকে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চলতি বছর চীনকে টপকে শীর্ষস্থানে পৌঁছেছে ভিয়েতনাম। গত বছর এই বাজারে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬৫১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল চীন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভিয়েতনামের রপ্তানি ছিল ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার। তারপরের অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ, যারা রপ্তানি করেছে ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এ ছাড়া ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি ছিল যথাক্রমে ৪৬৯ ও ৪২৫ কোটি ডলার।
৭ জুলাই বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ মোট ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে শুল্কহার নির্ধারণের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তাতে বাংলাদেশি পণ্যে বাড়তি শুল্ক প্রযোজ্য হবে ৩৫ শতাংশ। হোয়াইট হাউসের ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির সময়সীমা শেষ হয়ে আসছে। তার আগেই ট্রাম্প ঘোষণাটি দেন। ৯ জুলাই থেকে শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও সেটি পিছিয়ে ১ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে দর–কষাকষি করতে পারলে শুল্কহার কমতে পারে, অন্যথায় ঘোষিত হার কার্যকর হবে। যদিও তিন মাস আগে সব দেশের পণ্য রপ্তানির ওপর ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করেছে দেশটি।
চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ২১টি দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তার মধ্যে বাংলাদেশের পণ্যে ৩৫ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৩৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, মিয়ানমারের পণ্যে ৪১ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক হতে পারে ২০ শতাংশ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত উভয় দেশের মধ্যে চুক্তি হয়নি। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে শিগগিরই চুক্তি হবে এমন ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ভারতের ক্ষেত্রে পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশের নিচে নামতে পারে এমন কথা বলছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।
পাল্টা শুল্ক কমাতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মধ্যে আলোচনা চলমান রয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্ব একটি প্রতিনিধিদল আলোচনা করতে শিগগিরই ওয়াশিংটন যাবে। ইন্দোনেশিয়া ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করে পাল্টা শুল্ক ৩২ থেকে ১৯ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। শেষ পর্যন্ত কোন দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক কত হবে সেটি এখনো নিশ্চিত নয়।