ঋণ পেতে ব্যাংকের সহযোগিতা চান উদ্যোক্তারা
দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) উদ্যোক্তারা অভিযোগ করেছেন, ব্যবসার জন্য ব্যাংকগুলো তাদের ঋণ দেয় না। ঋণপত্র (এলসি) খুলতে গড়িমসি করে। এমনকি পণ্য রপ্তানিতেও ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা তাঁরা পান না। ব্যাংকগুলোর এমন ‘বিমাতাসুলভ আচরণ’ পরিবর্তনের তাগিদ দিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
আইডিএলসি-প্রথম আলো এসএমই পুরস্কার ২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত ‘উদ্যোক্তা বৈঠকে’ তাঁরা এসব অভিযোগ করেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর সম্মেলনকক্ষে যৌথভাবে এই বৈঠকের আয়োজন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ও প্রথম আলো।
প্রথম আলোর ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসানের সঞ্চালনায় উদ্যোক্তা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ।
বৈঠকে বক্তব্য দেন বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএর পরিচালক মো. খোরশেদ আলম, বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির (বাইশিমাস) সভাপতি আবদুর রাজ্জাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) শিক্ষক মেলিতা মেহজাবীন, এসএমই ফাউন্ডেশনের উপমহাব্যবস্থাপক আবদুস সালাম সরদার, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান, লেদারিনার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাসলিমা মিজি, স্টুডিও বিবিআনার এমডি লিপি খন্দকার, কালিন্দীর নির্বাহী পরিচালক মুনিয়া জামান, বাণীস ক্রিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা তাহমিনা আহমেদ, তানিন স্পোর্টসের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউল হক, আর্টিফ্যাক্টের প্রতিষ্ঠাতা শোহেলী নাজনীন, আইডিএলসির হেড অব রিজিওনাল বিজনেস খন্দকার মারুফ মমিন ও মিডিয়া লিড মোহাম্মদ আছিফ হুসেইন।
তাসলিমা মিজি নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, উদ্যোক্তা হিসেবে তাঁর শুরুটা সুখকর ছিল না। একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাংক থেকে ন্যূনতম সহযোগিতা তিনি পাননি। তিনি আরও বলেন, ‘কেউ বলেনি তোমাকে সহযোগিতা করতে চাই। ব্যবসা করতে এসে আমার মনে হয়েছে বড় অপরাধ করে ফেলেছি।’ কর ও ভ্যাট দেওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
আরেক উদ্যোক্তা শোহেলী নাজনীন অভিযোগ করেন, ব্যবসার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন। পদে পদে হয়রানি করে। ঈদুল ফিতরের আগ থেকে অনেক চেষ্টা করেও ব্যাংকের অসহযোগিতার কারণে পণ্য রপ্তানি করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, একটি রেস্তোরাঁ করতে ১৩টি সংস্থা থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। একেকটি কর্তৃপক্ষ তৈরি করা হয় চাঁদাবাজির জন্য। এসব সংস্থা সহযোগিতা করে না; বরং কাজে বাধা দেয়। তিনি আরও বলেন, ‘রেস্তোরাঁ খাতে কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী এখানে খণ্ডকালীন কাজ শিখতে আসেন না। এ খাতে ব্যাংকও ঋণ দেয় না। ৩০ লাখ মানুষের এ খাতে এসব সমস্যার সমাধান কী কেউ জানে না।’
এফএম প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি গাজী তৌহিদুর রহমান বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য দেশে কোনো প্রদর্শনীকেন্দ্র নেই। দেশের উদ্যোক্তারা কী ধরনের পণ্য তৈরি করেন, বাইরের দেশের কেউ তা জানেন না।
এসএমই ফাউন্ডেশনের উপমহাব্যবস্থাপক আবদুস সালাম সরদার বলেন, পাঁচ বছরের একটি প্রকল্পের জন্য প্রস্তুতি নিতে সময় চলে যায় আড়াই বছর। বাকি আড়াই বছরে তখন কিছু করার সুযোগ থাকে না। তিনি বলেন, দেশে প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ডেও কোনো সমন্বয় নেই। একই বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আবার একই অংশগ্রহণকারী সব বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
মুনিয়া জামান বলেন, একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার জন্য দুই বছর মেয়াদি ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া যায় কি না, তার একটি উপায় বের করা দরকার। এ ছাড়া পণ্যের চাহিদার বিষয়ে বাজার যাচাই করে নতুন উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।
আইবিএর শিক্ষক মেলিতা মেহজাবীন বলেন, দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প নিয়ে কাজ করে। ২০ বছর ধরে এসএমই নিয়ে কাজ হলেও এ খাত তেমন এগোয়নি। এসএমই খাতে এত প্রতিষ্ঠানের কাজ করার দরকার আছে কি না, তা ভাবতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য খাতভিত্তিক জমির ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। এটি হবে সরকারের বিনিয়োগ। তিনি অভিযোগ করেন, সাভার চামড়াশিল্প নগরে বিপুল টাকা খরচ করে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার বানানো হলেও ব্যবহৃত হচ্ছে না। আমলাতন্ত্রে ভুল হলেও শাস্তি হবে না। এটিই এখন ধারা।
আইডিএলসির কর্মকর্তা খন্দকার মারুফ মমিন বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের আমাদের কাছে আসতে হয় না। আমরাই তাঁদের কাছে যাই।’
প্রতিটি ব্যবসার ধরন আলাদা, চ্যালেঞ্জও আলাদা। আমলাদের এসব বুঝতে হবে। একটি রেস্তোরাঁর নিবন্ধন নিতে এত সংস্থার কাছে যেতে হবে কেন। একটি সংস্থার আওতায় এটি করা যেতে পারে। কিন্তু তা করা হবে না। কারণ, অনেকের টাকা আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।আশরাফ আহমেদ, সভাপতি, ঢাকা চেম্বার
বিটিএমএর পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য দেশে ভালো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, যিনি প্রশিক্ষণ দেন, তিনি নিজেই ওই সম্পর্কে জানেন না। দেশীয় পণ্যের প্রচারণা বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, প্রতিটি ব্যবসার ধরন আলাদা, চ্যালেঞ্জও আলাদা। আমলাদের এসব বুঝতে হবে। একটি রেস্তোরাঁর নিবন্ধন নিতে এত সংস্থার কাছে যেতে হবে কেন। একটি সংস্থার আওতায় এটি করা যেতে পারে। কিন্তু তা করা হবে না। কারণ, অনেকের টাকা আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
আইডিএলসি–প্রথম আলো এসএমই পুরস্কার–২০২৩ এর আবেদন করতে ভিজিট করুন www.smeaward.com ।