ভারতে কাঁচা পাট রপ্তানির মেয়াদ বাড়াল বাংলাদেশ

ভারত সরকার বাংলাদেশি পাটপণ্য রপ্তানির ওপর প্রতি টনে প্রতিষ্ঠানভেদে ১৯ থেকে ৩৫২ মার্কিন ডলার পর্যন্ত অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে রেখেছে ২০১৭ সাল থেকে। কাঁচা পাটের ওপর অবশ্য অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেনি দেশটি। কারণ, ভারত বাংলাদেশি কাঁচা পাটের আমদানিকারক।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের আবেদন জানানো হলেও ভারত তা আমলে নেয়নি। যেহেতু আমলে নেয়নি, তাই বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে বহুবার আবেদন করা হয়, কাঁচা পাট রপ্তানিতে যাতে প্রতি টনে ২৫০ ডলার করে শুল্ক আরোপ করা হয়।

এ অবস্থার সুরাহা না হতেই সরকার কাঁচা পাট রপ্তানির মেয়াদ নতুন করে বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিবছর যে পরিমাণ কাঁচা পাট রপ্তানি করে, তার প্রায় পুরোটাই আমদানি করে ভারত।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসানকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, কাঁচা পাট রপ্তানি করা যাবে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। চিঠিতে অবশ্য দেশের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

রপ্তানি নীতি ২০২১-২৪ অনুযায়ী, কাঁচা পাট হচ্ছে শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানি পণ্য। আগে ৩০ জুন পর্যন্ত রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পরে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পাঁচ দিন পর নতুন করে আবার প্রায় দুই মাসের জন্য বাড়ানো হয় কাঁচা পাট রপ্তানির মেয়াদ।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন গত ২৭ জুলাই এ মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। যদিও বিজেএসএ বরাবরই কাঁচা পাট রপ্তানির বিপক্ষে।

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, তিন দশক আগেও দেশে ১২ লাখ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদিত হতো। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ লাখ ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে ওই অর্থবছরে ৬ লাখ ৮২ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়।

বিজেএসএ সূত্রে জানা যায়, বছরে দেশে ৭৫ থেকে ৮০ লাখ বেল কাঁচা পাট উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে পাটপণ্য উৎপাদনের জন্য লাগে ৬০ লাখ বেল। আর ১০ থেকে ১২ লাখ বেল কাঁচা পাট রপ্তানি করে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশি পাটপণ্যের বড় বাজার ছিল ভারত। কিন্তু পাটপণ্য রপ্তানির ওপর অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে রাখায় দেশটিতে পাট সুতা রপ্তানি কমে ২৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমেছে। বিজেএসএ বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীরের কাছে এক চিঠিতে কাঁচা পাট রপ্তানির ওপর প্রতি টনে ২৫০ ডলার রপ্তানি শুল্ক আরোপের দাবি জানিয়ে বলেছে, ভারতের অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপের কারণে বাংলাদেশ কমপক্ষে এক লাখ টন পাটপণ্য রপ্তানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর এক টন কাঁচা পাট রপ্তানিতে পাঁচ থেকে ছয়জন লোকের কর্মসংস্থান হয়। অথচ এক টন পাটপণ্য রপ্তানিতে কর্মসংস্থান হয় ৭০ থেকে ৮০ জনের।

বিজেএসএর ভাইস চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির প্রথম আলোকে বলেন, ‘অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় পাট খাত এখন সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে। অথচ বহুবার দাবি জানানো সত্ত্বেও সরকার তা অনুধাবন করতে পারছে না। কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ না করাটা কার স্বার্থে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা চাই, রপ্তানি বন্ধ না হলে অন্তত শুল্ক আরোপ করুক। তা–ও না হলে আপাতত কাঁচা পাট রপ্তানি সমুদ্র পথে করার ব্যবস্থা করা হোক।’

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি হয়েছে ১১৬ কোটি ডলারেরও বেশি। এ রপ্তানি শত কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল ২০১০-১১ অর্থবছরে। এরপর ২০১২–১৩ অর্থবছরে ১০৩ কোটি ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০২ কোটি ডলারের পাটপণ্য রপ্তানি হয়েছিল। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে কাঁচা পাট রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি ডলারের।