পরিকল্পিত নগরায়ণেই টেকসই আবাসন

ঢাকার একটি আবাসন প্রকল্পছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশে নগরায়ণ দ্রুতগতিতে চলছে। কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও উন্নত জীবনযাত্রার সুযোগের জন্য প্রতিদিনই মানুষ শহরমুখী হচ্ছেন। এর প্রভাব সরাসরি পড়ছে আবাসন খাতে। বিশেষ করে জমির ওপর চাপ বেড়েছে। তবে নগর–পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি এবং আবাসন–বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রকৃত চ্যালেঞ্জ হলো জমির অভাব নয়; বরং জমির পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারা।

স্থপতি কাজী গোলাম নাসির বলেন, ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় জমির মূল্য দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরিকল্পিত সম্প্রসারণ নগরের ভারসাম্যও নষ্ট করছে। তবে সঠিক নীতি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে টেকসই আবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব। পরিকল্পিত আবাসন প্রকল্পে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার, খোলা জায়গা সংরক্ষণ এবং সুষম বসতি নিশ্চিত করলে সীমিত জমিতেও আরও বেশি মানুষ নিরাপদ, মানসম্মত এবং সাশ্রয়ী আবাসনে থাকতে পারবে—এমনটাই মনে করছেন তিনি।  

সাবেক প্রধান নগর–পরিকল্পনাবিদ কাজী গোলাম নাসির বলেন, ‘নির্দিষ্ট মানুষের জন্য আবাসন পরিকল্পনা করলে বাকিরা মানবেতর হবে, এমন চিন্তা নয়। সবাইকে অন্তর্ভুক্তিমূলক নকশায় রাখা প্রয়োজন। আগে একরপ্রতি ৭০ পরিবার বসত করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখন বলা হচ্ছে, একরপ্রতি ৫০ পরিবার হওয়া উচিত। বাস্তবতা যাচাই করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এ ছাড়া কৃষিজমি, বনভূমি ও জলাধার সংরক্ষিত রাখতে হবে।’

বিলাস দাস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এশিয়ান টাউন ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড
উন্নত অবকাঠামো, পরিকল্পিত বসতি ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ—সব মিলিয়ে প্রকল্পগুলোয় একটি আধুনিক জীবনধারার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
বিলাস দাস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এশিয়ান টাউন ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের শহরগুলোতে জমির পরিমাণ মোটেও কম নয়। সমস্যা হলো দীর্ঘদিন ধরে জমির ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার অদক্ষভাবে করা হচ্ছে। অনেক এলাকায় অতিরিক্ত ঘনত্ব দেখা দেয়, আবার কোথাও খালি জায়গা অপ্রয়োজনীয়ভাবে পড়ে থাকে। এলাকা অনুযায়ী ভবনের উচ্চতা ও ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) নির্ধারণ না থাকায় জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না।

পরিকল্পিত নগরায়ণের মূল ধারণা হলো শহরের প্রতিটি অংশের জন্য আলাদা ভূমিকা নির্ধারণ করা। আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক অঞ্চল, শিল্পাঞ্চল, সবুজ খোলা জায়গা ও যোগাযোগব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় থাকলে নগর বসবাসযোগ্য হয়। ঢাকার ওপর অতিরিক্ত চাপ কমাতে উপশহর ও নতুন শহর গড়ে তোলাও অপরিহার্য। পূর্বাচল, ঝিলমিল, গজারিয়া, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের মতো এলাকাগুলো পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠলে আবাসনের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকায় জমি ও প্লটের সংকটই আবাসন খাতের বড় চাপের জায়গা। নতুন জমি প্রায় নেই, ফলে বিদ্যমান জমির মূল্য ক্রমাগত বাড়ছে। জমির দাম বাড়লে একই প্লটে কম ইউনিট নির্মাণ সম্ভব হয়, যার প্রভাব পড়ে প্রতিটি ফ্ল্যাটের দামে। ড্যাপ ও ফার-সংক্রান্ত নীতিগত সীমাবদ্ধতাও অনেক এলাকায় জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারকে বাধাগ্রস্ত করছে।’

ওয়াহিদুজ্জামান আরও বলেন, পরিকল্পিত নগরায়ণের বিকল্প নেই। ঢাকার বাইরে উপশহর ও ছোট শহরভিত্তিক আবাসন পরিকল্পনা গ্রহণ করলে জমির ওপর চাপ কমবে এবং সাশ্রয়ী আবাসনের সুযোগ তৈরি হবে। উন্নত পরিবহনব্যবস্থা থাকলে মানুষ শহরের বাইরে থেকেও স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারবে। সরকার, নীতিনির্ধারক এবং বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগই পারে জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে আবাসনকে সাধারণ মানুষের নাগালে আনতে।

এশিয়ান টাউন ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক  বিলাস দাস বলেন, উন্নত অবকাঠামো, পরিকল্পিত বসতি ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ—সব মিলিয়ে প্রকল্পগুলোয় একটি আধুনিক জীবনধারার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। তবে উন্নয়নের এই যাত্রায় মানুষের মানসিক শান্তি, সামাজিক বন্ধন ও প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান নিশ্চিত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

বিলাস দাস আরও বলেন, ‘এসব বিশ্বাস থেকেই এশিয়ান ডুপ্লেক্স টাউনের ভাবনা। আমরা এমন একটি আবাসন পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই, যেখানে পেশাজীবী পরিবার, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও নতুন প্রজন্ম নিরাপদ, ভারসাম্যপূর্ণ ও মানবিক জীবন যাপন করতে পারবে।’