চট্টগ্রাম বন্দরমুখী পণ্যে সারচার্জ আরোপ ফ্রান্সের কোম্পানির

চট্টগ্রাম বন্দরফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার পরিবহনে সারচার্জ বা বাড়তি মাশুল আরোপের ঘোষণা দিয়েছে ফ্রান্সভিত্তিক শিপিং কোম্পানি সিএমএ-সিজিএম। আজ মঙ্গলবার কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। ২৬ অক্টোবর থেকে এই ‘সারচার্জ’ কার্যকর করা বলে নোটিশে জানিয়েছে কোম্পানিটি।

সিএমএ-সিজিএম কোম্পানির নোটিশে সারচার্জ আরোপের কারণ হিসেবে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মাশুল বাড়ানোর কারণে স্থানীয়ভাবে পরিচালন খরচ বেড়েছে। বাড়তি এই পরিচালন খরচ মোকাবিলা করতে তাই সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। এই সারচার্জ বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে প্রদান করতে হবে বলে জানানো হয়। ‘ইমার্জেন্সি কস্ট রিকভারি সারচার্জ’ বা জরুরি খরচ পুনরুদ্ধার নামে এই সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি খাতে কনটেইনার পণ্য পরিবহন করছে ৩৪১টি কোম্পানি। এসব কোম্পানির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সুইডেনের মায়ের্সক লাইন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ডের এমএসসি। প্রথম দুটি কোম্পানির সারচার্জ আরোপের খবর এখনো পাওয়া যায়নি। যদিও তৃতীয় অবস্থানে থাকা ফ্রান্সের সিএমএ-সিজিএম সারচার্জ আরোপের ঘোষণা দিল।

শিপিং কোম্পানিগুলো সূত্রে জানা গেছে, শুধু ফ্রান্সের কোম্পানিটিই নয়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কনটেইনার পরিবহনের ব্যবসা যারা করছে, তাদের সবাইকে বন্দরের বাড়তি মাশুলের খরচ পুষিয়ে নিতে হবে। সে জন্য ধারাবাহিকভাবে সবাই নানা নামে এই খরচ তুলে নেবে। ফ্রান্সের কোম্পানিটি প্রথমেই ঘোষণা দিয়ে খরচ তুলে নেওয়ার জন্য নোটিশ দিল।

কোম্পানিটির ঘোষণা অনুযায়ী, নতুন করে সারচার্জ আরোপের ফলে আমদানি-রপ্তানিকারকদের ফ্রান্সের কোম্পানিটির কাছ থেকে কনটেইনার সেবা নিতে কনটেইনারভেদে ৪৫ থেকে ৩০৫ ডলার পর্যন্ত বাড়তি মাশুল দিতে হবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৫ হাজার ৫২০ থেকে ৩৭ হাজার ৪১৪ টাকা। যেমন প্রতিটি ২০ ফুট লম্বা কনটেইনারে এই মাশুল বাবদ দিতে হবে ৫ হাজার ৫২০ টাকা। কনটেইনারের আকার যত বাড়বে, সারচার্জও তত বাড়বে। কোম্পানিটির মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এই মাশুল আদায় করা হবে।

এদিকে বন্দর ব্যবহারকারীদের আপত্তির মুখে গত ১৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন মাশুলের প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরের সব ধরনের সেবার ক্ষেত্রে মাশুল আগের তুলনায় গড়ে ৪১ শতাংশ হারে বাড়ানো হয়। সেই হিসাবে গড়ে কনটেইনারপ্রতি বাড়তি মাশুল দিতে হবে ৪ হাজার ৩৯৫ টাকা। এর মধ্যে আমদানি কনটেইনার হলে মাশুল বাড়বে ৫ হাজার ৭২০ টাকা। রপ্তানি কনটেইনার হলে মাশুল বাড়বে ৩ হাজার ৪৫ টাকা।

১৪ অক্টোবর রাত ১২টার পর থেকে বাড়তি এই মাশুল কার্যকর হবে বলে চট্টগ্রাম বন্দরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। সেই হিসাবে বন্দরের মাশুল কার্যকরের ১১ দিন পর ফ্রান্সের কোম্পানিটি তাদের কনটেইনারে পণ্য পরিবহনে বাড়তি মাশুল বা সারচার্জ আদায় শুরু করবে।

জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ যে মাশুল বাড়িয়েছে, তার একটা অংশ দিচ্ছে শিপিং কোম্পানিগুলো। যেমন বন্দরে জাহাজ আগমন ও জেটিতে ভেড়ানোসহ নানা খাতে মাশুল দিতে হয় শিপিং কোম্পানিগুলোকে। আবার কনটেইনার ওঠানো-নামানোর মাশুল পরিশোধ করে শিপিং কোম্পানিগুলো। তারা কনটেইনার পরিবহনবাবদ আমদানি-রপ্তানিকারক থেকে এই টাকা আদায় করে। বন্দর কর্তৃপক্ষ মাশুল বাড়ানোর কারণে শিপিং কোম্পানিগুলোও এখন আমদানি-রপ্তানিকারকদের থেকে বাড়তি মাশুল আদায় শুরু করতে যাচ্ছে। এর বাইরে কনটেইনার বন্দর চত্বরে রাখা বাবদ নানা মাশুল সরাসরি পরিশোধ করেন আমদানিকারকের প্রতিনিধিরা।

কনটেইনার পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, কনটেইনার পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত শিপিং কোম্পানিগুলো ছয় মাস কিংবা এক বছর মেয়াদে গ্রাহকদের সঙ্গে চুক্তি করে। ফলে বন্দর মাশুল বাড়ালেও সরাসরি এই টাকা আমদানি-রপ্তানিকারক বা গ্রাহকদের কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে আদায়ের সুযোগ নেই তাদের। এ জন্য বন্দর মাশুল কার্যকর হলে শুরুতে শিপিং ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার কোম্পানিগুলো বন্দরের এই বাড়তি খরচ দেয়। যদিও এরই মধ্যে সারচার্জ নামে ফ্রান্সের কোম্পানিটি বাড়তি খরচ তুলে নেওয়ার নোটিশ দিয়েছে।

জানতে চাইলে রপ্তানি পণ্য বিদেশি ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিতদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, শিপিং এজেন্টদের রপ্তানি খাতের সারচার্জ পরিশোধ করবে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাররা। এতে তাদের খরচ বাড়বে এবং ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।