ঈদে ৩০% নগদ ছাড় যমুনার পণ্যে  

দুই ঈদের সময় দেশে ফ্রিজের চাহিদা বেড়ে যায়। কোম্পানিগুলোও এ সময় বিক্রি বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেয়। আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে এবার দেশের ফ্রিজের বাজারের কী পরিস্থিতি, তা নিয়ে বিশেষ আয়োজন করেছে প্রথম আলো। বিশেষ এই আয়োজনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মনিকা নাজনীন ইসলাম

প্রথম আলো:

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের উচ্চমূল্য, জ্বালানি ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির চাপে ব্যবসার খরচ কেমন বেড়েছে? এ খরচ সামাল দিতে আপনারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন?

মনিকা নাজনীন ইসলাম: করোনার ধাক্কায় বিপর্যস্ত অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করে, তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সেই প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করে। শুধু তা-ই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে খাদ্য ও পণ্যের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। আর মুদ্রাস্ফীতির চাপে পড়েছে মানুষ। ডলার-সংকট ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে পণ্য উৎপাদনে কাঁচামাল আমদানিতে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী ও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন ধরনের জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে পরিবহন খরচসহ অন্যান্য খাতে উৎপাদন খরচ বহুগুণ বেড়ে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করতে হচ্ছে। নানামুখী চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আমরা পণ্যের অতিরিক্ত দাম না বাড়িয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য তুলে দিচ্ছে ক্রেতাদের হাতে। কারণ, আমরা ব্যবসা করি দেশ ও দশের কল্যাণের কথাটি মাথায় রেখে।

প্রথম আলো:

মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে, আবার নিত্যনতুন প্রযুক্তি আসছে। এসব সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আপনারা কী ধরনের ব্যবসায়িক কৌশল নিয়েছেন?

মনিকা নাজনীন ইসলাম: মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে দিন দিন গৃহস্থালি ইলেকট্রনিকসামগ্রীর ব্যবহার বাড়ছে। একসময় যেটি ছিল বিলাসী পণ্য, এখন সেটিই দৈনন্দিন প্রয়োজনের উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরাও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ফ্রিজ ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে বদ্ধপরিকর। একটি ভালো বা উন্নতমানের ফ্রিজ শুধু খাবারের পুষ্টিমানই রক্ষা করে না, জীবনযাপনেও অনেক স্বাচ্ছন্দ্য আনে। সাশ্রয়ী মূল্য, গুণগতমান ও টেকসই পণ্য আর দেশের মানুষের চাহিদা এবং দেশের আবহাওয়া উপযোগী পণ্য হওয়ার কারণে যমুনার ফ্রিজের প্রতি কোটি মানুষের আস্থা রয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির নিয়মিত ফ্রিজ ছাড়াও আমাদের রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ইন্টেলিজেন্ট ইনর্ভাটার প্রযুক্তির স্মার্ট ডাবল ডোর, টি-ডোর, ক্রস ডোর ফ্রিজ। এসব ফ্রিজ এরই মধ্যে বাজারে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। যেকোনো শিল্পে সুযোগের পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জ থাকবেই। আর এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে যমুনা ইলেকট্রনিকস কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা সংখ্যায় বিশ্বাসী নই, দেশের মানুষকে গুণে-মানে সেরা পণ্যটিই দিতে চাই।

প্রথম আলো:

সাধারণত দেখা যায়, দুই ঈদকে কেন্দ্র করে ফ্রিজের বিক্রি বাড়ে। বিক্রি বাড়াতে আপনারা কী ধরনের অফার দিচ্ছেন? এবারের ঈদে কত ফ্রিজ বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন?

মনিকা নাজনীন ইসলাম: ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজার চাঙা হয়। উৎসবের এ সময়ে ফ্রিজের চাহিদা ও বিক্রি বাড়ে। ক্রেতাদের বাড়তি এই চাহিদা পূরণে ইতিমধ্যে যমুনা ইলেকট্রনিকস সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ঈদের খুশিকে বাড়িয়ে দিতে যমুনা ইলেকট্রনিকস নিয়ে এসেছে ডাবল খুশি অফার। ঈদে আমাদের যমুনা প্লাজা, পরিবেশক বা অনলাইনে যমুনা ফ্রিজ বা অন্যান্য গৃহস্থালি পণ্য কিনে নিবন্ধন করলে মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, এসি, স্মার্ট টিভি, মাইক্রোওয়েভ ওভেনসহ অসংখ্য গৃহস্থালিসামগ্রী জেতার সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া পাবেন সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ নগদ ছাড়।

প্রথম আলো:

গত দেড় দশকে ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনে একটা পর্যায়ে এসেছে বাংলাদেশ। বাজারের বড় অংশ এখন দেশীয় কোম্পানির দখলে। এ বাজারে দেশীয় কোম্পানিগুলোর হিস্যা আরও বাড়াতে করণীয় কী?

মনিকা নাজনীন ইসলাম: গত দেড় দশকে ইলেকট্রনিকসের গৃহস্থালি পণ্য উৎপাদন-সংশ্লিষ্ট শিল্প খাতে বিপুল অগ্রগতি হয়েছে। মানুষের জীবনমানের উন্নতিতে দৈনন্দিন জীবনযাপনে গৃহস্থালি ইলেকট্রনিকসের ব্যবহার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। গ্রাম থেকে শহর, কিংবা শহরতলি সবখানেই এখন ইলেকট্রনিক পণ্যের শোরুম দেখা যায়। স্থানীয় শিল্প বিকাশে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশি ইলেকট্রনিক পণ্যের গুণগতমান ও সরকারি নীতিসহায়তার ফলে বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের বাজারও দিন দিন বড় হচ্ছে। বৈশ্বিক মন্দা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সামগ্রিক রপ্তানি আয় কিছুটা কম হলেও ইলেকট্রনিকস খাতে ইতিবাচক রপ্তানি হয়েছে। ফ্রিজ, এসি, এলইডি টিভিসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এ তালিকায় আমাদের পণ্যও রয়েছে। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ আর দক্ষ শ্রমশক্তি থাকায় বাংলাদেশ এখন প্রতিযোগিতামূলক দামে মানসম্পন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য রপ্তানি করছে।
বিশ্বে গৃহস্থালি ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজারে নেতৃত্ব দেওয়ার যথেষ্ট সামর্থ্য বাংলাদেশের রয়েছে। এরই মধ্যে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোকে পেছনে ফেলে স্থানীয় বাজারে নিজেদের একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি করেছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো, যা এ দেশের ব্র্যান্ডগুলোর সামর্থ্যেরই বহিঃপ্রকাশ। আমি আশা করছি, সরকারের রপ্তানি প্রণোদনা ও অন্যান্য নীতিসহায়তা পেলে গৃহস্থালি ইলেকট্রনিকশিল্পও একটি বড় রপ্তানি খাত হয়ে উঠবে। দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে এই খাত।