পোশাক কারখানার পরিবেশের উন্নতি হলেও যথেষ্ট নয়

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস
ফাইল ছবি

তৈরি পোশাকশিল্পের ইতিহাসে রানা প্লাজা ধসকে সবচেয়ে ভয়ানক দুর্ঘটনা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। এরপর তৈরি পোশাক খাতের কর্মপরিবেশের উন্নতি হলেও মার্কিন রাষ্ট্রদূত মনে করেন, এখনো তা যথেষ্ট নয়।

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে দেশটির কাছে আরও প্রত্যাশা আছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারের আজিমুর রহমান সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পিটার ডি হাস এসব কথা বলেন। ‘শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার: আমরা এখন কোথায়’ শীর্ষক এই গোলটেবিল অনুষ্ঠান আয়োজন করে সলিডারিটি সেন্টার বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক কুতুবউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, তদন্তে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার দায় প্রমাণিত হলেও তাঁর যথেষ্ট শাস্তি হয়নি। এ ছাড়া যাঁরা এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী, তাঁদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য তিনটি পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, স্মার্ট ও উন্নত দেশের কাতারে যেতে হলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও শ্রম অধিকারকে মূল্যবোধের গভীরে প্রোথিত করতে হবে। তাঁর পরামর্শ, প্রথমত, বাংলাদেশ যে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তার স্বীকৃতি দিতে হবে। একই সঙ্গে শিল্প নিরাপত্তা কেবল রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতে সীমিত থাকলে চলবে না, অন্যান্য খাতেও তা নিশ্চিত করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, শ্রমিকদের স্বাধীনভাবে ইউনিয়ন গঠন ও তাতে যোগ দেওয়ার অধিকার এবং কর্মস্থলের পরিবেশ উন্নয়নে যৌথভাবে দর-কষাকষির অধিকার আরও জোরালোভাবে নিশ্চিত করতে হবে।

তৃতীয়ত, কর্মস্থলের নিরাপত্তা ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সব অংশীদারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

সলিডারিটি সেন্টার বাংলাদেশের উপপ্রধান মনিকা হার্টসেল বলেন, ‘বর্তমান ব্যবস্থার মধ্যে অন্যায্যতা আছে, যার কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। অথচ এ ধরনের দুর্ঘটনা ঠেকানো যায়। নিহত ও আহত শ্রমিকদের স্মৃতির উদ্দেশে আসুন, আমরা নিরাপদ ও ন্যায্য কর্মস্থলের আন্দোলনে যুক্ত হই।’

আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তার মার্কিন ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানান, তাঁরা যেন কারখানাগুলোকে শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের দায়ে বাধ্যতামূলকভাবে দায়ী করেন।

দেশের বেশির ভাগ তৈরি পোশাক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন নেই বলে অভিযোগ করেন শ্রমিকনেতা ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন। তিনি আরও বলেন, যেসব কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন আছে, সেগুলোও একধরনের ‘পকেট ইউনিয়ন’। সেগুলো মালিকদের নিয়ন্ত্রণে চলে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সলিডারিটি সেন্টার বাংলাদেশের কর্মসূচি পরিচালক এ কে এম নাসির উদ্দিন প্রমুখ।