যুক্তরাষ্ট্রের তুলা আমদানিতে সুবিধা চান ব্যবসায়ীরা
যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের আরোপ করা পাল্টা শুল্ক কমাতে দেশটি থেকে তুলা আমদানির চুক্তি করেছিলেন বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন বস্ত্রকলমালিক। তারপর এক মাস হতে চললেও তুলা আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তাঁরা। কারণ, তৈরি পোশাকশিল্পের প্রয়োজনীয় এ কাঁচামাল আমদানির আগে সরকারের কাছ থেকে কিছু প্রণোদনা চান ব্যবসায়ীরা।
অবশ্য আমদানিকারকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের তুলার দাম অন্য দেশের তুলনায় কিছুটা বেশি। আবার দেশটি থেকে তুলা আনতেও সময় বেশি লাগে। তাই সরকারের কাছ থেকে কিছু সুযোগ-সুবিধা না পেলে দেশটি থেকে তুলা আমদানি করে প্রতিযোগিতায় টেকা যাবে না। আবার কিছু সুযোগ–সুবিধা দেওয়া হলে তাতে অন্যরাও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানিতে আগ্রহী হবেন।
গত ৩১ জুলাই বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। হোয়াইট হাউসের এ ঘোষণার আগে সরকারের প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করে। পাশাপাশি সফররত বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারাও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি কমিয়ে আনতে নানামুখী পদক্ষেপ নেন। তাঁরা পণ্য আমদানির জন্য সমঝোতা ও অঙ্গীকার করেছেন। সরকারি-বেসরকারি খাতের সম্মিলিত চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ১৯ হাজার টন তুলা আমদানির সমঝোতার চুক্তি করে বাংলাদেশের বস্ত্র খাতের তিনটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সালমা গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের কার্গিল ইনকরপোরেটের কাছ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ ডলারে ৬ হাজার টন তুলা আমদানির চুক্তি করে। এশিয়া কম্পোজিট একই রকম আরেকটি চুক্তি করে। এ ছাড়া মোশাররফ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস মার্কিন লুইস ড্রেফুস গ্রুপ থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ৭ হাজার টন তুলা আমদানির চুক্তি করেছিল।
এই চুক্তি করতে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বিটিএমএর পরিচালক ও মোশাররফ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মোশারফ হোসেন, বিটিএমএর পরিচালক ও এশিয়া কম্পোজিট মিলসের এমডি মাসুদ রানা, সালমা গ্রুপের পরিচালক চৌধুরী মোহাম্মদ হানিফ শোয়েব।
যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে বিটিএমএর নেতারা দেশটি থেকে বছরে এক বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানির অঙ্গীকার করেন। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা ব্যবহার করে রপ্তানি করলে যাতে রপ্তানিতে সুবিধা পাওয়া যায়, সেই দাবিও জানিয়েছিলেন তাঁরা।
এশিয়া কম্পোজিট মিলস যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছয় হাজার টন তুলা আমদানির চুক্তি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো ঋণপত্র খোলেনি। চুক্তি অনুযায়ী, আগামী এক বছরের মধ্যে তাদের এ তুলা আমদানির কথা। এ বিষয়ে এশিয়া কম্পোজিট মিলসের এমডি মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানিতে খরচ বেশি। সে খরচ কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলেই দেশটি থেকে তুলা আমদানি বাড়বে। আগামী মাসে আমরা তুলা আমদানির ঋণপত্র খুলব।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছয় হাজার টন তুলা আমদানির চুক্তি করেছিল সালমা গ্রুপ। তারাও এখনো এই আমদানি চুক্তির বিপরীতে কোনো ঋণপত্র খোলেনি। আগামী জানুয়ারিতে ঋণপত্র খোলা শুরু করবে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সালমা গ্রুপের পরিচালক চৌধুরী মোহাম্মদ হানিফ শোয়েব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের তুলা ব্যবহার করতে চাই। তবে দাম বেশি হওয়ার কারণে এত দিন তা পারিনি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের তুলার দাম অন্যান্য দেশের তুলার চেয়ে প্রতি পাউন্ডে ৩-৪ সেন্ট বেশি। আশা করছি, আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে সরকার কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ নেবে।’
মোশাররফ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস প্রথমে সাত হাজার টন আমদানির চুক্তি করেছিল। পরে আরও তিন হাজার টনের চুক্তি করে। এসব তুলা তাদের ছয় মাসের মধ্যে আমদানি করার কথা। সম্প্রতি তারা এক হাজার টন তুলা আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মোশাররফ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলসের এমডি মো. মোশারফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি পাউন্ড তুলার দাম ৮৭-৮৮ সেন্ট। অন্যদিকে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দাম ৭৮ থেকে ৮৩ সেন্ট। এ ছাড়া সমুদ্রপথে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আনতে দুই থেকে আড়াই মাস সময় লেগে যায়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার জন্য আমরা তুলা আমদানিতে বিলম্ব করছি, সেটি ঠিক নয়। তবে কিছু সুযোগ-সুবিধা পেলে আরও অনেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানিতে আগ্রহী হবেন।’
ব্যবসায়ীরা জানান, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে দুই বছর আগে প্রতিষ্ঠানপ্রতি তিন কোটি ডলার ঋণ পাওয়া যেত। পরে সেটি কমিয়ে দুই কোটি ডলার করা হয়। এ ছাড়া আগে ঋণের সুদ ১ দশমিক ৮ শতাংশ থাকলেও এখন বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ। এখন আবার ইডিএফ থেকে ঋণের পরিমাণ ও সুদহার আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়া হলে তাতে আমদানিকারকদের জন্য সুবিধা হয়।
জানতে চাইলে বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল গত সপ্তাহে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামী (চলতি) সপ্তাহে আমরা সরকারকে একটি লিখিত প্রস্তাব দেব। আমরা ইডিএফ থেকে ১ শতাংশ সুদে ঋণের সুবিধা চাইব। এখন তো ডলার উদ্ধৃত আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাধ্যতামূলকভাবে ডলার কিনে নিচ্ছে। ফলে আমরা যদি রপ্তানি বাড়াতে ডলার ব্যবহার করতে পারি, তাহলে অসুবিধা কোথায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার মার্কিন তুলার জন্য ওয়্যারহাউস করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে। সেটি হলে আমাদের উদ্যোক্তারা এক সপ্তাহের মধ্যেই তুলা পেয়ে যাবেন।’