পোশাক রপ্তানি কি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে

চলতি মাসের প্রথম ২৪ দিনে ২৭৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের আগস্টের একই সময়ের চেয়ে এই রপ্তানি ৫১ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি।

সুত্র: বিজিএমইএ

বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতির চাপে পড়েছেন ভোক্তারা। ফলে তৈরি পোশাক বিক্রির দোকানগুলোতে কেনাবেচা কমে গেছে। গুদামে পণ্যের মজুত বাড়ছে। তাতে আগামী দুই মৌসুমের নতুন ক্রয়াদেশ আসার হার কমছে। আবার চলতি ক্রয়াদেশও স্থগিত হওয়ার ঘটনা ঘটছে।

গত জুনে শেষ হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৫ শতাংশ। নতুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাইয়ে ৩৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। তখন প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১৬ শতাংশ। জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় পরের মাসগুলোতে প্রবৃদ্ধি কমবে বলে ধারণা হচ্ছিল। তবে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য বলছে, যেমনটি ধারণা করা হচ্ছিল, আগস্টে রপ্তানি সেভাবে কমছে না।

সাধারণত মাস শেষে রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তবে প্রতিদিন কী পরিমাণ পোশাক রপ্তানি হচ্ছে, ইপিবি ছাড়াও তার খোঁজখবর রাখে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটির প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম ২৪ দিনে ২৭৪ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫১ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। গত বছরের আগস্টের প্রথম ২৪ দিনে ১৮১ কোটি ৪৬ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। আর ওই মাস শেষে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৭৫ কোটি ডলারের।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ হাজার ২৬১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি তার আগের বছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ১৪৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।

জানতে চাইলে তুসুকা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএর পরিচালক আরশাদ জামাল প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানই চীন থেকে তাদের ব্যবসার উল্লেখযোগ্য অংশ সরিয়ে আনতে চাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সবারই প্রথম পছন্দ বাংলাদেশ। একাধিক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়াবে, সেই ইঙ্গিত দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বিক্রি কমে যাওয়ায় ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো চলমান ক্রয়াদেশ স্থগিত করছে। নতুন ক্রয়াদেশও কম আসছে। ফলেদুই-তিন মাস আমাদের ব্যবসা খারাপ যাবে।

এদিকে সাময়িক সময়ের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানি যে সত্যি সত্যি কিছুটা কমতে পারে, তার ইঙ্গিত মিলছে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট আগস্টে সারা বিশ্বের উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া শত শত কোটি ডলার মূল্যের পণ্য কেনার আদেশ বাতিল করেছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছে বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ী। কারণ, বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের শীর্ষ ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ওয়ালমার্ট।

জানতে চাইলে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘রপ্তানি এখন পর্যন্ত খারাপ বলা যাবে না। আমরা বলছি, নতুন ক্রয়াদেশ আসার হার খুবই কম। চলমান ক্রয়াদেশের কাজ পিছিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। তাতে আগামী অক্টোবর থেকে রপ্তানি কিছুটা কমতে পারে।’

মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, ‘বাণিজ্যযুদ্ধ, করোনার বিধিনিষেধ ও চীনের তুলা ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে চীন থেকে ব্যবসা সরাচ্ছে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান। তাতে আমাদের রপ্তানি বাড়তে পারে। তবে বিক্রি আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় ও তুলার দাম নিম্নমুখী থাকায় ক্রেতারা নতুন ক্রয়াদেশ দিতে কিছুটা সময় নিচ্ছেন। আশা করছি, দ্রুতই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’