পণ্যের মান বাড়ানোর পরামর্শ 

চামড়াশিল্প খাতে বাংলাদেশের সক্ষমতা কেমন এবং এ দেশে তৈরি কোন ধরনের পণ্য বিদেশে রপ্তানি সম্ভব, এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে তা তুলে ধরা হচ্ছে। 

ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় চলছে বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো বা ব্লিস প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর একটি স্টলে পণ্য দেখছেন দর্শনার্থীরা। গতকালের
ছবি। প্রথম আলো

তৈরি পোশাকের বাইরে দেশের যে খাতের সবচেয়ে বেশি রপ্তানি সম্ভাবনা আছে, সেটি হলো চামড়া। পাশাপাশি বৈশ্বিক বাজারে চামড়াজাত পণ্যের জন্য বাংলাদেশ বড় কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু এই খাতের বড় সমস্যা হচ্ছে দক্ষ শ্রমিকের অভাব এবং দেশি চামড়ার আন্তর্জাতিক মান না থাকা। তাই রপ্তানি বাড়াতে হলে পণ্যের ও শ্রমের মান বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা।

দেশের চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় চলছে তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদারগুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো বা ব্লিস প্রদর্শনী। সেখানে এই খাতের উদ্যোক্তারা এসব কথা বলেন।

১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। প্রদর্শনীটি চলবে আজ রাত ৮টা পর্যন্ত। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) যৌথভাবে ব্লিস প্রদর্শনী আয়োজন করেছে। 

আয়োজকেরা জানান, চামড়াশিল্প খাতে বাংলাদেশের সক্ষমতা কেমন এবং এ দেশে তৈরি কোন ধরনের পণ্য বিদেশে রপ্তানি সম্ভব, এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে তা তুলে ধরা হচ্ছে। এতে দেশি-বিদেশি মোট ৪৬টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে আছে চামড়াজাত পণ্য, চামড়ার জুতা, খেলার জুতা, ব্যাকপ্যাক ও বিভিন্ন কাঁচামাল উৎপাদক, সরবরাহকারী, বিমা ও মূল্যায়ন প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া শতাধিক বিদেশি ক্রেতা মেলা পরিদর্শন করবেন। 

এলএফএমইএবির সভাপতি ও অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, চামড়াশিল্পের রপ্তানি সম্ভাবনা আরও বাড়াতে এ নিয়ে চতুর্থবার এই প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার ব্লিসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে আলাদা একটি চামড়াশিল্প উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, চামড়া খাত নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পৃথকভাবে কাজ করছে। ফলে একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হলে সবার কাজের মধ্যে সমন্বয় আসবে। তবে এই কর্তৃপক্ষে যেন চামড়া খাতের বড় প্রতিনিধিত্ব থাকে এবং এর শীর্ষ পদে বেসরকারি খাত থেকে যেন কাউকে দেওয়া হয়, সেটাই তাঁদের চাওয়া।

প্রদর্শনীতে অ্যাপেক্স ও বের মতো বিভিন্ন বড় কোম্পানির পাশাপাশি এই খাতের মাঝারি ও ছোট প্রতিষ্ঠানও অংশ নিয়েছে। থ্রি-টেক নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী মো. তাসনিম আলম জানান, তিনি দ্বিতীয়বারের মতো প্রদর্শনীতে এসেছেন। গত বছর প্রদর্শনী শেষে প্রায় ৩০ লাখ টাকার পণ্যের কার্যাদেশ পেয়েছিলেন তিনি।

পণ্য ছাড়াও পরিষেবা কিংবা বিনিয়োগকারী খুঁজতেও প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে কিছু প্রতিষ্ঠান। যেমন জেনিস শুজ লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শু সিটি লিমিটেড; এরা গাজীপুরের মৌচাকে প্রায় ৩৬ একর জায়গায় জুতাশিল্প এলাকা তৈরি করছে। সেখানে জুতা তৈরির সব ধরনের প্রাথমিক কাঁচামাল তৈরির কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা আছে তাদের।  

দক্ষ শ্রমিক ও ভালো পণ্যের অভাব

চামড়া পণ্য প্রস্তুতকারকেরা বলেছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে পণ্য রপ্তানির ক্রয়াদেশ আগের চেয়ে কমেছে। তবে তাঁরা বলেছেন, বড় সমস্যা হচ্ছে দেশে দক্ষ শ্রমিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্মত চামড়া না পাওয়া।  

দেশে ৩০টির বেশি চামড়াজাত পণ্য তৈরির কারখানায় এজ কালার (রং) সরবরাহ করে ফ্রিশবা নামের একটি চীনা কোম্পানি। বিক্রয় বিভাগের প্রধান ফানাউল্লাহ সাব্বির বলেন, গত এক-দেড় বছরে রাসায়নিক পণ্যের দাম ২৫-৩০ গুণ বেড়েছে। 

চীনা কোম্পানি গোল্ডেন ইউনিয়ন লেদার ইন্ডাস্ট্রিজের প্রশাসন বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. নাজমুল হুসাইন বলেন, ‘মূলত চীন ও পাকিস্তান থেকে চামড়া এনে পণ্য তৈরি করে ইউরোপের বাজারে আমরা রপ্তানি করি। ডলারের দর বেড়ে যাওয়ায় খরচও অনেক বেড়েছে। এ অবস্থায় দেশ থেকে ভালো চামড়া জোগাড় করতে পারলে খরচ অন্তত ৪০ শতাংশ কমে যেত; কিন্তু দেশে উৎপাদিত অধিকাংশ চামড়াই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করতে পারছে না। এ ছাড়া দক্ষ কর্মীর সংকট তো আছেই।’