বিজিএমইএর সদস্যদের মধ্যে ১,৬০০ কারখানা সরাসরি তৈরি পোশাক রপ্তানির আদেশ পায়

তৈরি পোশাকশিল্প খাত
ছবি: প্রথম আলো

বর্তমানে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সদস্য কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ৩৩৯। এর মধ্যে মাত্র ১ হাজার ৬০০টি কারখানা বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি কার্যাদেশ পেয়ে পণ্য রপ্তানি করছে। বাকি কারখানাগুলো সাব-কনট্রাক্টিংয়ের মাধ্যমে, অর্থাৎ যারা সরাসরি কার্যাদেশ পায়, তাদের কাছ থেকে কাজ নিয়ে নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে।

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা চূড়ান্ত করার পর মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকেরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার বিবৃতিটি দিয়েছেন।

বিবৃতিতে ফারুক হাসান জানান, চার দশক ধরে এ দেশে তৈরি পোশাকশিল্প গড়ে উঠেছে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার ৮৮৫টি পোশাক কারখানা বিজিএমইএর সদস্য হয়েছে। বিভিন্ন কারণে ৩ হাজার ৯৬৪টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু করোনার সময়েই ৩১৭টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। অবশিষ্ট ২ হাজার ৯২১টি সদস্য কারখানার মধ্যে ২ হাজার ৩৩৯টি কারখানা বিজিএমইএতে তাদের সদস্যপদ নবায়ন করেছে। কিন্তু ব্যাংকঋণ ও বিভিন্ন দায়দেনার কারণে সব কারখানা সরাসরি পোশাক রপ্তানির আদেশ পায় না, মানে নিতে পারে না। এসব কারখানার মধ্যে মাত্র ১ হাজার ৬০০টি কারখানা ক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয়াদেশ এনে কাজ করছে। তবে বিজিএমইএর বাইরেও বেশ কিছু তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে।

ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমআইবি) সর্বশেষ তথ্যানুসারে, দেশে বর্তমানে রপ্তানিমুখী ৪ হাজার ১১৪টি তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য ২ হাজার ৮৩১। আর এই দুই সংগঠনের সদস্য নয়, এমন কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ২৮৩। এমআইবির তথ্যমতে, বর্তমানে তৈরি পোশাকশিল্প খাতে ৩০ লাখ ৩ হাজার ৫১৭ শ্রমিক কাজ করছেন। যদিও এ সংখ্যা কারও কারও মতে ৪০ লাখের কিছু কমবেশি।

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান
প্রথম আলো ফাইল ছবি

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, রপ্তানিকারক কারখানাগুলো বাদে বাকিদের অনেকেই বিভিন্ন ব্যাংকের দেনা ও দায়ের কারণে সরাসরি ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছে না। ফলে ক্রেতাদের কাছ থেকে তারা রপ্তানি আদেশ নিতে পারছে না। তারা মূলত সাব-কনট্রাক্টের মাধ্যমে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে। অনেক উদ্যোক্তা বিভিন্ন ব্যাংকের দায়দেনা মাথায় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

তৈরি পোশাকশিল্পকে দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে ফারুক হাসান বলেন, এ খাত শুধু দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারকেই সমৃদ্ধ করেনি, একই সঙ্গে নিশ্চিত করেছে প্রায় ৪৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। এ ছাড়া পশ্চাৎ ও সম্মুখ সংযোগ শিল্প মিলিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে পোশাক খাত। এ অর্জনের পেছনে উদ্যোক্তা, শ্রমিক, সরকার, বিদেশি ব্র্যান্ড বা ক্রেতা, উন্নয়ন সহযোগীসহ সংশ্লিষ্ট সবার অবদান রয়েছে।

পোশাকশিল্পকে ‘আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড’ বলে উল্লেখ করেন ফারুক হাসান। বলেন, এ শিল্পের অভ্যন্তরে গভীরতম সংকটের বিষয়টি সেভাবে প্রকাশিত হচ্ছে না। কোনো কারণে এ শিল্প খাত বিনষ্ট হলে অর্থনীতির ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে। এ জন্য দেশের অর্থনীতির স্বার্থে তৈরি পোশাকশিল্পকে সুদৃঢ়ভাবে টিকিয়ে রাখতে প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান বিজিএমইএর সভাপতি।