পণ্য রপ্তানি টানা চার মাস ধরে কমছে কেন

চট্টগ্রাম বন্দরফাইল ছবি

দেশের পণ্য রপ্তানি চার মাস ধরে কমছে। গত নভেম্বরে রপ্তানি হয়েছে ৩৮৯ কোটি ডলারের পণ্য। এ রপ্তানি গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ কম। গত বছরের নভেম্বরে রপ্তানি হয়েছিল ৪১২ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য।

টানা চার মাস রপ্তানি কমলেও চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সামগ্রিকভাবে পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। গত জুলাই-নভেম্বর সময়ে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৩ কোটি ডলারের পণ্য। এ রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) পণ্য রপ্তানির এ হালনাগাদ পরিসংখ্যান গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, শীর্ষ পাঁচ খাতের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ছাড়া বাকিগুলোর রপ্তানি নভেম্বর মাসে কমেছে। খাতগুলো হলো তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষিপ্রক্রিয়াজাত পণ্য ও হোম টেক্সটাইল। এ ছাড়া চামড়াবিহীন জুতা, হিমায়িত খাদ্য ও প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানিও কমেছে।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত নভেম্বরে ৩১৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। তবে চলতি বছরের পাঁচ মাসের হিসাবে পোশাক রপ্তানি এখনো ইতিবাচক রয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৬১৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এ রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ বেশি।

রপ্তানি কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কার্যকরের কারণে মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান তৈরি পোশাকের দাম ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়িয়েছে। সে জন্য মার্কিন বাজারে পণ্যের চাহিদা কিছুটা কমে গেছে। সে জন্য বাজারটিতে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচন ও নির্বাচন-পরবর্তী অস্থিরতার কারণে ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতারা ক্রয়াদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা রক্ষণশীল অবস্থান নিয়েছেন।

তৈরি পোশাকের পর দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত হচ্ছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। গত নভেম্বরে এ খাতের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৮৯ মার্কিন ডলার। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছর এখন পর্যন্ত (জুলাই-নভেম্বর) ৫১ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

দেশের তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত কৃষিপ্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানিতে ব্যাপক ধস নেমেছে। গত মাসে রপ্তানি হয়েছে ৮ কোটি ২৮ লাখ ডলারের পণ্য। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসের হিসাবেও রপ্তানি কমেছে। এ সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৪৬ কোটি ডলারের পণ্য, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ কম।

চতুর্থ শীর্ষ রপ্তানি খাত পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি গত মাসে সাড়ে ১০ শতাংশ কমেছে। এ সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৬ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের পণ্য। গত বছরের নভেম্বরে রপ্তানি হয়েছে ৭ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের পণ্য। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ৩৫ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান তাপস প্রামাণিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাঁচা পাটের বাজার অস্থিতিশীল। দাম অনেক বেশি। সে জন্য উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। আমরা বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিযোগিতামূলক দাম দিতে পারছি না। ফলে রপ্তানি কমছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে পাটের বাজার স্থিতিশীল করার দাবি করছি। সেটি হলে কৃষক ও শিল্প দুটোই বাঁচবে।’

পঞ্চম শীর্ষস্থানীয় রপ্তানি খাত হোম টেক্সটাইলের রপ্তানিও কমেছে। গত নভেম্বরে রপ্তানি হয়েছে ৬ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল। এ রপ্তানি গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় পৌনে ৮ শতাংশ কম। যদিও সামগ্রিকভাবে এখনো হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি ইতিবাচক আছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৩৪ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অতীতেও নির্বাচনের আগে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার এলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ফিরবে। তখন আমরা এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে। তবে পণ্য রপ্তানিতে ট্রাম্প ট্যারিফের প্রভাব নির্বাচনের পরও অব্যাহত থাকবে।’