নির্মাণে ভাটা, উপকরণের দাম কমছে

ছবি: এআই/প্রথম আলো

কয়েক বছর ধরে বাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল নির্মাণসামগ্রীর লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি। রড, সিমেন্ট, ইটসহ প্রায় সব উপকরণের দামই একসময় আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে। তবে গত এক বছরে এ চিত্র কিছুটা বদলেছে। অধিকাংশ নির্মাণ উপকরণের দাম কমলেও নির্মাণকাজে গতি ফেরেনি। বরং আগের তুলনায় কাজ কমেছে। একই সঙ্গে নির্মাণসামগ্রী বিক্রিতেও ভাটা পড়েছে। অন্যদিকে ফ্ল্যাটের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই।

রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা নির্মাণসামগ্রীর বাজার ঘুরে দেখা যায়, নির্মাণের প্রধান উপকরণ রড বর্তমানে প্রতি টন ৭৫ থেকে ৮৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর ছিল ৮০ থেকে ৮৬ হাজার টাকা। ২০২৩ সালের মধ্যভাগে রডের দাম বেড়ে এক লাখ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়ার হার কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে রডের চাহিদায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ব্যক্তিপর্যায়ের বাড়ি নির্মাণও আগের তুলনায় কমেছে।

রডের পাশাপাশি স্টিলজাত অন্যান্য উপকরণের দামও কমেছে। বর্তমানে প্রতি টনে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা কমে অ্যাঙ্গেল বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৮৭ হাজার টাকায়। মোটা প্লেটের দাম টনপ্রতি প্রায় ১৫ হাজার টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ টাকায়। পাতলা প্লেট বিক্রি হচ্ছে প্রতি টন ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। স্থানভেদে এই দামের হেরফের হতে পারে।

নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ ইট ও সিমেন্টের দামেও স্বস্তি এসেছে। একসময় ১৩ থেকে ১৪ টাকা পর্যন্ত ওঠা ইট এখন মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১২ হাজার টাকায়। ট্রাকভাড়াসহ ৩ হাজার ইট বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে ৩১ থেকে ৩২ হাজার টাকায়। যেখানে গত বছর একই পরিমাণ ইট কিনতে ট্রাকভাড়াসহ খরচ পড়ত ৪২ থেকে ৪৩ হাজার টাকা। সিমেন্টের দামও কমেছে। প্রতি বস্তায় ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে বর্তমানে সিমেন্ট বিক্রি হচ্ছে ৪৯৫ থেকে ৫২০ টাকার মধ্যে। গত বছর এই দাম ছিল ৫৫০ থেকে ৫৬০ টাকা পর্যন্ত।

তবে অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বালুর দাম কমেনি। বরং সাম্প্রতিক সময়ে বালুর দাম বেড়েছে। রাজধানীর নির্মাণসামগ্রী ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে প্রতি ঘনফুট (সিএফটি) সাদা বালু বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকায়, যা ছয় মাস আগেও ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা। লাল বালুর দাম আরও বেশি। বর্তমানে প্রতি সিএফটি লাল বালু বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৬২ টাকায়, ছয়–সাত মাস আগে এর দাম ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা।

নির্মাণসামগ্রীর বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে আল্লাহর দান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি নির্মাণকাজে গতি অনেক কমে গেছে। আগে যে পরিমাণ বেচাকেনা হতো, এখন তার অর্ধেকও হচ্ছে না।’ তিনি জানান, শীত মৌসুম শুরু হওয়ায় এখন নির্মাণের সময় এসেছে। ধীরে ধীরে চাহিদা কিছুটা বাড়তে পারে বলে তিনি আশা করছেন।

বালুর মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা অবৈধ উত্তোলন বন্ধের বিষয়টি তুলে ধরছেন। ঢাকার বালু ব্যবসায়ী মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে নদীতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে বালু উত্তোলন অনেক কমে গেছে। সরবরাহ কম থাকায় সব ধরনের বালুর দাম বেড়েছে।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নির্মাণসামগ্রীর দাম কমলেও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আবাসন খাতে বিনিয়োগে স্থবিরতার কারণে নির্মাণকাজ প্রত্যাশিতভাবে বাড়ছে না। ফলে বাজারে স্বস্তি এলেও নির্মাণ খাত এখনো পুরোপুরি চাঙা হয়নি।