সাক্ষাৎকার

সিরামিকশিল্পের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ প্রয়োজন

রফিকুজ্জামান ভুঞা , প্রধান নির্বাহী ,ফু-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড

প্রথম আলো:

বর্তমানে সিরামিকশিল্পে সবচেয়ে বড় সমস্যা কী? এ সমস্যা কীভাবে মোকাবিলা করছেন?

রফিকুজ্জামান ভুঞা: বর্তমানে সিরামিকশিল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কাঁচামালের জোগান, আপনারা জানেন টাইলসশিল্পে ব্যবহৃত ৯০ শতাংশ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ডলারের মূল্যের অস্বাভাবিক উত্থানের (৮৬ থেকে ১১৭ টাকা) কারণে এবং ডলার–সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো সময়মতো ঋণপত্র (এলসি) দিতে পারছে না, কাঁচামাল পরিবহনের জন্য কনটেইনার ভাড়া বেড়েছে, এসব কারণে কাঁচামালের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পণ্য উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। কাঁচামালের সঠিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমরা ব্যাংক এবং আমাদের সরবরাহকারীদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছি। বেশি দাম দিয়ে কাঁচামাল কিনতে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগ করতে হচ্ছে।

প্রথম আলো:

ডলার সমস্যার কারণে কাঁচামাল আমদানিতে কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে কি না?

রফিকুজ্জামান ভুঞা: আপনারা জানেন ডলারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ডলার–সংকটের কারণে কাঁচামাল সরবরাহকারীদের অতিরিক্ত মূল্যে পেমেন্ট করতে হচ্ছে। ফলে কাঁচামাল আমদানি প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, কাঁচামালের পরিবহন খরচ বৃদ্ধিসহ সামগ্রিক উৎপাদন খরচ বেড়েছে, ডলার–সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো আমাদের চাহিদামাফিক ঋণপত্র (এলসি) যথাসময়ে দিতে পারছে না। এ ছাড়া স্থানীয় বাজারে চাহিদা হ্রাসের কারণে সবকিছু মিলিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে আমরা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছি।

প্রথম আলো:

গ্যাস–সংকট কীভাবে মোকাবিলা করছেন?

রফিকুজ্জামান ভুঞা: সিরামিকশিল্পের উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় গ্যাসের ভূমিকা অপরিহার্য। এখানে গ্যাসের সমস্যার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং পণ্যের গুণগত মানেও প্রভাব পড়ে। তাই এ শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের প্রয়োজন। গ্যাস–সংকটের কারণে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের জোগান না পাওয়ায় আমরা আমাদের পণ্য উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় কিছুটা পরিবর্তন এনেছি। ভবিষ্যতে আমরা আধুনিক ও গ্যাসসাশ্রয়ী মেশিন স্থাপন করব।

প্রথম আলো:

বর্তমানে যেসব প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছেন, সেগুলো থেকে বের হতে কী কী সুপারিশ করবেন?

রফিকুজ্জামান ভুঞা: বর্তমানে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সিরামিকশিল্পের জন্য একটি বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ খুবই প্রয়োজন। টাইলসের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে। ডলার–সংকট মোকাবিলায় আমদানিকৃত টাইলসের ওপর ট্যারিফ বৃদ্ধি করতে হবে। কারখানাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎসেবা দিতে হবে। ব্যাংকগুলোর এলসি প্রক্রিয়ায় গতিশীলতা প্রয়োজন। বল ক্লে ও চায়না ক্লে জাতীয় কাঁচামালের আমদানি পর্যয়ে শুল্কায়নের সময় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মূল্য বাদ দিয়ে শুল্কায়ন করতে হবে। সিরামিকশিল্পের প্রধান কাঁচামাল গ্যাস। সুতরাং গ্যাসের মূল্য হ্রাস করে সিরামিকশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হবে।

প্রথম আলো:

টাইলসশিল্পের বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের উপায় কী? কোনো সুপারিশ আছে কি?

রফিকুজ্জামান ভুঞা: টাইলসশিল্প বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। কারণ, আমদানিনির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় উৎপাদনে ক্রেতার চাহিদা পূরণে এ শিল্পের সাফল্য দৃশ্যমান। দেশীয় কোম্পানিগুলো ৮৬ শতাংশ ক্রেতার চাহিদা পূরণ করছে এবং ১৪ শতাংশ আমদানিনির্ভর। ক্রেতার চাহিদামাফিক মানসম্পন্ন পণ্যের জোগান দিয়ে দেশীয় কোম্পানিগুলো আমদানিনির্ভরশীলতা কমিয়ে দিচ্ছে প্রতিবছর। সিরামিকশিল্পের অন্যতম কাঁচামাল বল ক্লে চায়না ক্লে, এসব কাঁচামালের সঙ্গে মিশে থাকে পানি, আর্দ্রতা, অব্যবহার্য রাসায়নিক উপাদান, যার ৩০-৩৫ শতাংশ, আমরা ব্যবহার করতে পারি না। কিন্তু শুল্কায়নের সময় এই ৩০-৩৫ শতাংশের ওপর শুক্লায়ন করা হয়।