সহযোগিতা পেলে নারী উদ্যোক্তারা আরও এগিয়ে যাবেন

আইডিএলসি-প্রথম আলো এসএমই পুরস্কার-২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত উদ্যোক্তা বৈঠকে উপস্থিত নারী উদ্যোক্তারা। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশে মেধাসম্পদ বা ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি (আইপি) নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের জটিলতা রয়েছে। দেশে মেধাসম্পদকে স্থাবর সম্পদের মতো বিবেচনা করা হয় না। তাই মেধাসম্পদনির্ভর ব্যবসায় ব্যাংকঋণ পাওয়া যায় না। এসব সমস্যার কারণে অনেক উদ্যোক্তা মেধাসম্পদনির্ভর ব্যবসার জন্য দেশের বাইরে অন্য দেশে প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করছেন।

আইডিএলসি-প্রথম আলো এসএমই পুরস্কার–২০২৩ উপলক্ষে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে আয়োজিত ‘উদ্যোক্তা বৈঠকে’ বক্তারা এসব কথা বলেন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ও প্রথম আলো। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান।

বৈঠকে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিডব্লিউসিসিআই) পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী, উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্সের সভাপতি নাসিমা আক্তার, দ্য মারভেল-বি ইউয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহজাবীন ফেরদৌস, সাজগোজ লিমিটেডের সহপ্রতিষ্ঠাতা সিনথিয়া শারমিন ইসলাম, মার্কোপোলো এআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তাসফিয়া তাসবিন, মনের বন্ধুর সিইও তৌহিদা শিরোপা ও এসআরআরকে আইটির চেয়ারম্যান ফারজানা কবির। এ ছাড়া উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলেন তানিস বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা তানিয়া নাজনীন, পূর্ণতা শিল্পশালার এমডি সুলতানা জান্নাত, বিটেক কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কনসালটিংয়ের এমডি নাজমুন নাহার, আইডিএলসি ফাইন্যান্সের জ্যেষ্ঠ ক্রেডিট ম্যানেজার মালিহা তারান্নুম, এমবিএ বাংলাদেশের পরিচালক রাহাত সোহেল ও সহকারী মিডিয়া পরিচালক আফসানা হোসেন।

বৈঠকে নারী উদ্যোক্তারা তাঁদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, নারী উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন অর্থায়ন নিয়ে। এ ছাড়া মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব, তথ্যের ঘাটতি ও উপযুক্ত পরামর্শকের অভাবেও তাঁদের ব্যবসা পরিচালনায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

দেশে মেধাসম্পদের স্বীকৃতি নিয়ে সমস্যার কথা জানান একাধিক নারী উদ্যোক্তা। প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান মার্কোপোলো এআইয়ের সিইও তাসফিয়া তাসবিন বলেন, ‘দেশেই আমাদের প্রতিষ্ঠানের মেধাসম্পদের নিবন্ধনের জন্য বহুবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই প্রক্রিয়া অনেক জটিল ও সময়সাপেক্ষ। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধন করিয়েছি।’

একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানান মনের বন্ধুর সিইও তৌহিদা শিরোপা। তিনি জানান, দেশে মেধাসম্পদের নিবন্ধন করাতে গিয়ে তাঁকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এ ছাড়া দেশে নিবন্ধন করা প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অর্থায়নে কম আগ্রহ দেখান।

অর্থায়নের চ্যালেঞ্জ বিষয়ে দ্য মারভেল-বি ইউয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহজাবীন ফেরদৌস বলেন, সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোয় কার্যাদেশের বিপরীতে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফলে এ খাতে বিশেষ ধরনের সুনির্দিষ্ট ঋণের ব্যবস্থা করলে উদ্যোক্তারা উপকৃত হবেন।

অনুষ্ঠানে উদ্যোক্তারা জানান, ব্যাংকগুলো সব সময় নারী উদ্যোক্তাদের সহজে ঋণ দেওয়ার কথা বলে। অথচ অনেক নারী উদ্যোক্তা নথিপত্র দেওয়ার পরও ঋণ পান না। এমনকি ঢাকার বাইরের ব্যাংক কর্মকর্তারা নারী উদ্যোক্তাদের ঋণসুবিধার বিষয়ে অনেক কিছুই জানেন না বলে অভিযোগ করেন উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্সের সভাপতি নাসিমা আক্তার। তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি ব্যাংকের কর্মীদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার।

তবে নারী উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন বিষয়ে ব্যাংকের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলে জানান আইডিএলসি ফাইন্যান্সের জ্যেষ্ঠ ক্রেডিট ম্যানেজার মালিহা তারান্নুম। তিনি বলেন, এরপরও বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নানা শর্তের বিষয়টিও তাঁদের বিবেচনায় রাখতে হয়।

বিডব্লিউসিসিআই পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী জানান, ‘নারী উদ্যোক্তাদের যেসব চ্যালেঞ্জের কথা বলা হচ্ছে, তা নতুন কিছু নয়। দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে এসব সমস্যা দূর করতে হবে। নারীদের জন্য তহবিল বরাদ্দ রাখা হয়; সেই বরাদ্দ আবার ফেরতও চলে যায়। অর্থাৎ, নারীরা ঋণ পান না। এ জন্য আমরা ঋণ প্রদানের প্রক্রিয়া সহজ করার দাবি জানাই।’

নারী উদ্যোক্তারা ইতিবাচক বার্তাও দিয়েছেন। যেমন, সাজগোজ লিমিটেডের সহপ্রতিষ্ঠাতা সিনথিয়া শারমিন ইসলাম বলেন, যেখানে সমস্যা আছে, সেখানে সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে সমস্যা সমাধানে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

আইডিএলসি-প্রথম আলো এসএমই পুরস্কার ২০২৩-এর জন্য আবেদনের করতে ভিজিট করুন www.smeaward.com