কাল ব্যবসায়ী সম্মেলন, আলোচনায় সরকারি দলকে সমর্থন
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশ এখন ট্রিলিয়ন (এক লাখ কোটি) ডলারের অর্থনীতি হওয়ার পথে। সম্ভাবনাময় এই যাত্রাপথে কিছু সমস্যাও রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে যে ব্যবসায়ী সম্মেলন হতে যাচ্ছে তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে সেই সম্ভাবনা ও সমস্যাগুলো তুলে ধরবেন ব্যবসায়ীরা।
আজ শুক্রবার দুপুর পৌনে ১২টায় রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআইয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মো. জসিম উদ্দিন। এতে এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে আগামীকাল শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিতব্য ব্যবসায়ী সম্মেলনের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ; বর্তমান জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী, সহসভাপতি এম এ মোমেন, সালাউদ্দিন আলগমীর ও হাবিব উল্লাহ ডন, এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহবুব উর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জসিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘এফবিসিসিআইয়ের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত মার্চে আমরা তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ ব্যবসা সম্মেলন আয়োজন করি। ওই সম্মেলনে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে ১৬টি অধিবেশনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা উঠে আসে। সেগুলো একত্র করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। কালকের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সেই প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে।’
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জানান, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে অনুষ্ঠিতব্য ব্যবসায়ী সম্মেলনে সারা দেশের চেম্বার, বিশেষায়িত চেম্বার, পণ্যভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠন, রপ্তানিকারক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠনের নেতারা যোগ দেবেন। পাশাপাশি শীর্ষস্থানীয় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরাও অংশ নেবেন। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
হঠাৎ করেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের কথা বলে ব্যবসায়ী সম্মেলনের আয়োজন করছে এফবিসিসিআই। গত সোমবার সম্মেলনের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় সংগঠনটি। এর পর থেকে ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সম্মেলন থেকে বর্তমান সরকারের প্রতি সরাসরি সমর্থন জানানো হতে পারে। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও এফবিসিসিআইয়ের আয়োজনে ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতা চাওয়ার কথা জানান দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
আগামীকালকের সম্মেলনে বর্তমান সরকারের প্রতি সমর্থন জানানো হবে কি না— সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, ‘সম্মেলনে যাঁরা বক্তব্য দেবেন তাঁরা বক্তব্যে কী বলবেন, সেটি আমি কী করে বলব। তবে এফবিসিসিআই এই সম্মেলন কেন আয়োজন করছে, সেটি ইতিমধ্যে আমি বলেছি। কালকে কোনো ব্যবসায়ী নেতা যদি তাঁর মতো করে বক্তব্য দেন...। তবে আমরা এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে চাচ্ছি, ব্যবসা-বাণিজ্য ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। সরকারের একটা গাইডলাইন আছে, বাংলাদেশ কীভাবে এগিয়ে যাবে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে এখানে কাজ করতে চাই।’
এ প্রসঙ্গে জসিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘প্রশ্নের উত্তরটা ওইভাবে আমার কাছে নাই। এখানে আজাদ ভাই (এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ) আছেন। আজাদ ভাই কালকের সম্মেলনে কী বক্তব্য দেবেন, সেটা তাঁর ওপর নির্ভর করছে। আমি মনে করি, আপনি (সাংবাদিক) বুঝতে পেরেছেন।’
চলতি বছরের শেষ দিকে বা আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তা সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো ইতিমধ্যে কর্মসূচি-পাল্টা কর্মসূচি দিতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষ এবং বিদেশিদের মধ্যেও এ নিয়ে উদ্বেগ আছে। শনিবারের সম্মেলনে রাজনীতি নিয়ে উদ্বেগের কথা ব্যবসায়ীরা বলবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, ‘আমরা ব্যবসা করি, আমরা চাই, দেশে যেন স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেন ভালো থাকে। এগুলো না থাকলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের আজকের অর্থনীতি ১০ বছর আগের চেয়ে ভিন্ন। আগের মতো আমরা অনেক কিছুই সহ্য করতে পারব না। আগে হরতাল ছিল। এখন কি হরতাল সহ্য করা যাবে? যাবে না। আমরা ব্যবসায়ীরা সব সময়ই চাই দেশ শান্তিপূর্ণভাবে চলুক। তাহলেই আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির জন্য ভালো।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীরা চাই, বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও অর্থনীতি যেন কোনোভাবেই বিঘ্নিত না হয়। রাজনীতিবিদেরাও নিশ্চয়ই বোঝেন, অর্থনীতি না থাকলে দেশে আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকবে না। এখানে ব্যবসায়ীরা অতীতের মতোই বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবেন।’