দেশি রঙে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার চান উৎপাদকেরা
সরবরাহ পর্যায়ে প্রাইমারসহ রঙের ওপর সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পেইন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমএ)। গত সপ্তাহে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের কাছে এই দাবিতে চিঠি দিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি ও বার্জার পেইন্টস (বিডি) লিমিটেডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) ও পরিচালক মহসিন হাবিব চৌধুরী।
সংগঠনটি বলেছে, কয়েক বছর ধরে এমনিতেই এই খাত নানা সমস্যায় জর্জরিত। এখন স্থানীয় রং উৎপাদকদের ওপর নতুন করে সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করায় এ খাত আরও সমস্যায় পড়বে।
এ ধরনের কর বৃদ্ধি ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ এবং স্থানীয় নির্মাতাদের টিকে থাকার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। তাই আমরা বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি—মহসিন হাবিব চৌধুরী, সভাপতি, পেইন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন
৯ জানুয়ারি সরকার এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে সরবরাহ পর্যায়ে (এইচএস কোড ৩২.০৮ থেকে ৩২.১০) রঙের ওপর সম্পূরক শুল্কহার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে। ফলে স্থানীয় রং উৎপাদকদের ওপর করের ভার আরও বেড়েছে।
বাংলাদেশ পেইন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, বাড়তি সম্পূরক শুল্ক স্থানীয় রং উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের ওপর করের চাপ আরও বাড়াবে। আগামী দিনে রাজনৈতিক ও ব্যবসায় পরিবেশ অস্থিরতার মধ্যে থাকবে। তাই স্থানীয় উৎপাদকদের উৎপাদনের গতি ঠিক রাখা সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সংগঠনটি বলছে, ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ফলে রং এবং নির্মাণ ব্যবসায় ব্যাপক প্রভাব পড়বে। বাড়তি সম্পূরক শুল্ক রঙের দাম বাড়বে, তাতে চাহিদা কমবে। এতে এই খাতের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা স্থবির হতে পারে।
বাংলাদেশ পেইন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহসিন হাবিব চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘রং সরবরাহে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করায় স্থানীয় রংশিল্প চাপে পড়েছে। ইতিমধ্যে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়ায় আমরা নানা সমস্যার সম্মুখীন। রং কোনো বিলাস পণ্য নয়, এটি অবকাঠামো সুরক্ষার জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। এ ধরনের কর বৃদ্ধি ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ এবং স্থানীয় নির্মাতাদের টিকে থাকার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। তাই আমরা বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।’
এদিকে স্থানীয় উৎপাদনের পাশাপাশি ৯ জানুয়ারি আমদানি পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের রং ও বার্নিশের ওপর সম্পূরক শুল্কহার ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে আমদানি করা রং, বার্নিশের দামও বাড়তে পারে।
দেশি রঙের বাজার
বাংলাদেশ পেইন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, বাংলাদেশে ৩৩টির মতো দেশি কোম্পানি রং উৎপাদন করে। বর্তমানে রংশিল্পের বাজারের আকার ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রতিবছর গড়ে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার মতো শুল্ক-কর দেয় রং উৎপাদক কোম্পানিগুলো। দেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ রঙের চাহিদা মেটান দেশি রং উৎপাদকেরা। বাংলাদেশে মাথাপিছু রঙের ভোগ ১ দশমিক ৪ কেজি, যা ভারত, চীন ও আসিয়ান দেশগুলোর চেয়ে কম।
খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, অবকাঠামো উন্নয়নে রং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। তাই সব ধরনের রঙের ওপর সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা উচিত।
ওয়ার্ল্ড করোশন অর্গানাইজেশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, শিল্পোন্নত দেশের ক্ষয় প্রতিরোধ ওই দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) এক থেকে দেড় শতাংশের সমপরিমাণ। অর্থাৎ রং দিয়ে প্রতিবছর জিডিপির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ বাঁচায়।
কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েকটি ইস্যু নিয়ে দেশি রংশিল্প ভুগছে। প্রথমত, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি; দ্বিতীয়ত, ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের কারণে সরবরাহ শৃঙ্খলা বিঘ্নিত; তৃতীয়ত, টাকার অবমূল্যায়ন এবং ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে কঠোর শর্ত আরোপ।
এ খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই রঙের চাহিদা কমেছে। এ ছাড়া সরকার প্রকল্পের কাজের গতিও শ্লথ। তাই রংশিল্প সংকটে রয়েছে। এ অবস্থায় সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অনেকটা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো।