লাইটার জাহাজ পরিচালনায় আসছে নতুন উদ্যোগ

লাইটার জাহাজফাইল ছবি: প্রথম আলো

দুই দশক ধরে নদীপথে পণ্য পরিবহনে লাইটার জাহাজ পরিচালনা করে আসছে ‘ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল’ বা ডব্লিউটিসি। এবার এই সংস্থা থেকে বেরিয়ে চট্টগ্রামভিত্তিক জাহাজমালিকদের একটি সংগঠন আলাদা করে লাইটার জাহাজ পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে। এ জন্য কাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে একটি সভা ডেকেছে সংগঠনটি।

জাহাজমালিকদের সংগঠনটি হলো ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগাং বা আইভোয়াক। সংগঠনটি কাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম থেকে দেশের নানা গন্তব্যে পণ্য পরিবহন পরিচালনা কার্যক্রম শুরুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র ছাপিয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাসান মাহমুদ উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা–৭ আসনের সংসদ সদস্য মো. সেলিম ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকার কথা রয়েছে। সভায় পণ্য পরিবহন কার্যক্রম শুরুর দিনক্ষণ ঠিক হতে পারে বলে আয়োজকেরা জানান।

অভ্যন্তরীণ নদীপথে পণ্য পরিবহন হয় ছোট আকারের জাহাজ বা লাইটার জাহাজে। মূলত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্য প্রথমে বড় জাহাজ থেকে লাইটার জাহাজে স্থানান্তর করা হয়। এরপর নদীপথ ব্যবহার করে সারা দেশের নানা গন্তব্যে নেওয়া হয়। গত অর্থবছরে বন্দর থেকে ৬ কোটি ৬৮ লাখ টন পণ্য পরিবহন হয়েছে এসব জাহাজে। এত দিন মূলত ডব্লিউটিসির পরিচালনাধীন লাইটার জাহাজ এবং শিল্পমালিকদের নিজস্ব জাহাজের মাধ্যমে লাইটার জাহাজে বন্দর থেকে সারা দেশের নানা গন্তব্যে পণ্য পরিবহন হতো। এখন নতুন করে আইভোয়াকের নেতৃত্বে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

লাইটার জাহাজমালিকদের সংগঠনগুলো নিয়ে প্রায় দুই দশক আগে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল বা ডব্লিউটিসি গঠন করা হয়েছিল। সব লাইটার জাহাজ যাতে এক জায়গা থেকে পরিচালনা করা যায়, সে জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে দীর্ঘ সময় ধরে এই সংস্থার একক কর্তৃত্ব চলে যায় জাহাজমালিকদের বড় অংশ ‘বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ বা বিসিভোয়ার হাতে। জাহাজ পরিচালনার নানা বিষয় নিয়ে মতভেদ তৈরি হয় জাহাজমালিকদের আরেকটি গ্রুপ আইভোয়াকের সঙ্গে। গত ১৯ নভেম্বর সংগঠনটি ডব্লিউটিসির আহ্বায়ককে চিঠি দিয়ে সংস্থাটি থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। ওই চিঠিতে ডব্লিউটিসির কোনো হিসাব নির্বাহী কমিটির সভায় না তোলার অভিযোগ আনা হয়।

জানতে চাইলে আইভোয়াকের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহাজমালিকদের সংগঠন বিসিভোয়ার কিছু নেতা ডব্লিউটিসিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে আসছে। সাধারণ জাহাজমালিকদের স্বার্থ যেমন দেখা হয়নি, তেমনি পণ্যের আমদানিকারকেরাও পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ পাননি। বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে কোথায় ব্যয় করা হয়েছে, তার হিসাবও পাওয়া যায়নি। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করেও কোনো ফল না পাওয়ায় নতুন এই উদ্যোগ নিয়েছি আমরা।’

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ডব্লিউটিসির আহ্বায়ক মো. নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ডব্লিউটিসি সরকার স্বীকৃত সংস্থা। এই সংস্থাকে ডিঙিয়ে নতুন করে লাইটার জাহাজ পরিচালনার কোনো উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ নেই।

প্রায় দুই দশক আগে ডব্লিউটিসি গঠনে ভূমিকা রেখেছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বারের তৎকালীন পরিচালক আমিরুল হক। বর্তমানে প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, অভ্যন্তরীণ নদীপথে জাহাজভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ের রাখা এবং এই খাতে শৃঙ্খলার জন্য ডব্লিউটিসি গঠন করা হয়েছিল। তবে এক দশকের বেশি সময় ধরে সংস্থাটি ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার হয়ে আসছিল। আলোচনা না করে ভাড়া বৃদ্ধি, দুর্নীতি–অনিয়ম, পণ্য পরিবহনে বাধাদানের মতো ঘটনা ঘটিয়ে সব পক্ষকেই ক্ষুদ্ধ করে তুলেছিল। এ জন্যই এই ভাঙন তৈরি হয়েছে।