আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে শিল্পকারখানার ব্যবস্থাপনায় দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে কারিগরি শিক্ষা ও পাঠ্যক্রম আধুনিকায়নে গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, শিল্প ও শিক্ষার মধ্যে কার্যকর সমন্বয় এখন সময়ের দাবি।
ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে কারিগরি শিক্ষায় আরও গুরুত্ব দিতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল বুধবার রাতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (বিআইএম) আয়োজিত ‘কারিগরি শিক্ষায় শিল্প খাতের চাহিদা: স্থানীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পসচিব মো. ওবায়দুর রহমান। সেমিনারে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষক, মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা, উদ্যোক্তা ও উন্নয়ন সহযোগীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পসচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের কারণে শিল্পকারখানার চাহিদার পরিবর্তন ঘটছে। তাই পাঠ্যক্রম যুগোপযোগী করা এখন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া কিংবা জার্মানির পাঠ্যক্রম আমাদের সামনে সাফল্যের উদাহরণ। এসব দেশের মতো আমাদের পাঠ্যক্রম আধুনিকায়ন করতে হবে। শিল্পকারখানা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়সাধন ও দক্ষতা বৃদ্ধির এই কাজে বিআইএমকে নেতৃত্ব দিতে হবে।’
সেমিনারে মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক পটভূমি তুলে ধরেন বিআইএমের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান মোহাম্মাদ নাজমী নেওয়াজ।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের মতো বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী বিশ্বের অনেক দেশেই নেই। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই তরুণদের দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু পুরোনো পাঠ্যক্রম বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া শিল্পকারখানার চাহিদা এবং প্রশিক্ষণকেন্দ্রের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব প্রকট।
বৈশ্বিক পটভূমি তুলে ধরে প্রবন্ধে বলা হয়:
যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮৫ শতাংশ স্কুলে শিক্ষার্থীদের অন্তত একটি বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ নিতে হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২০২৪ সালে ৮০ শতাংশ চাকরি পূরণ হয়েছে কারিগরি প্রশিক্ষণে সনদধারীদের মাধ্যমে।
চীনে মোট কর্মসংস্থানের ৯০ শতাংশই উচ্চতর কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী।
মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, কিন্তু আমাদের দেশে তরুণেরা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে কাঙ্ক্ষিত চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভোগেন।
সমাপনী বক্তব্যে বিআইএমের মহাপরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা শিল্পকারখানা ও উন্নয়নসহযোগীদের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে কাজ করতে চাই। গবেষণার আওতা বাড়ানোর সঙ্গে দক্ষতা বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে প্রশিক্ষণ পাঠ্যক্রমের আধুনিকায়ন দরকার।’
অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল খায়ের মো. আক্কাস আলী। তিনি বলেন, ‘আমাদের গবেষণাগার ও যন্ত্রপাতি আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে শিক্ষকদের দক্ষতাও বাড়াতে হবে।’
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, বর্তমানে শিল্পকারখানা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোর মধ্যে তেমন সমন্বয় নেই। এই পার্থক্য কীভাবে দূর করা হবে, সেটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারিগরি শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে সামাজিকভাবে তাদের উদ্বুদ্ধ করা দরকার।
এর আগে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইএমের পরিচালক প্রকৌশলী মো. তরিকুল ইসলাম। সেমিনারের বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি, প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও প্রশিক্ষকেরাও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।