চলতি মাসেও ইতিবাচক ধারায় ফিরছে না রপ্তানি

সামগ্রিক রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশের জোগানদাতা তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানি চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে ১৮.৬৭ শতাংশ কমেছে।

বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমতির দিকে থাকায় দেশের অর্থনীতি কিছুটা চাপের মধ্যে আছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান দুই খাত প্রবাসী আয় ও পণ্য রপ্তানিতেও সুখবর নেই। গত মাসে একসঙ্গে দুই খাতের আয় কমেছে। চলতি মাসেও পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফেরার সম্ভাবনা কম। কারণ, সামগ্রিক রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশের জোগানদাতা তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানি চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে ১৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমেছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের বরাত দিয়ে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে (১ থেকে ২০ অক্টোবর) ১৭৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম। গত বছরের অক্টোবর মাসের প্রথম ২০ দিনে রপ্তানি হয়েছিল ২১৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।

পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তাতে ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্রে পোশাকের বিক্রিতে ধস নেমেছে। অবিক্রীত পণ্যের মজুত বেড়ে যাওয়ায় নতুন ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিয়েছে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। চলমান অনেক ক্রয়াদেশও স্থগিত বা পিছিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আবার গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণেও কারখানাগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য উৎপাদন করতে পারছে না। সব মিলিয়ে পোশাকের রপ্তানি কমে গেছে। আগামী জানুয়ারি মাসের আগে তৈরি পোশাকের রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফেরার সম্ভাবনা কম।

মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল তৈরি পোশাক রপ্তানি। শেষ পর্যন্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ হাজার ২৬১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৫ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ভালো করেছে পোশাকশিল্প। জুলাই ও আগস্ট মাসে যথাক্রমে ৩৩৬ ও ৩৭৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে খাতটি, তাতে জুলাইয়ে ১৬ ও আগস্টে ৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। টানা ১৩ মাস ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পর গত মাসে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমে যায়। এই মাসে রপ্তানি হয় ৩১৬ কোটি ডলারের পণ্য, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ কম।

জানতে চাইলে ফতুল্লা অ্যাপারেলসের স্বত্বাধিকারী ফজলে শামীম এহসান প্রথম আলোকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির উন্নতি নেই। বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কাও দিন দিন ঘনীভূত হচ্ছে। অন্যদিকে বিক্রয়কেন্দ্রে পোশাকের বিক্রি কম। সে জন্য ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান প্রাথমিক কাজ সেরে রাখলেও চূড়ান্ত ক্রয়াদেশ দিচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, গ্যাস-সংকটের কারণে নিট কাপড় ডাইংয়ের ক্ষেত্রে সংগ্রাম করতে হচ্ছে, মানও ধরে রাখা যাচ্ছে না। এতে বর্তমানে যেটুকু ক্রয়াদেশ আছে, তা-ও শেষ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

করোনা মহামারির আগে বাংলাদেশ থেকে নিট পোশাকের চেয়ে ওভেন পোশাকই বেশি রপ্তানি হতো। তবে করোনোর পর সেটি পুরোপুরি উল্টো হয়ে গেছে। বিদায়ী অর্থবছরে ২ হাজার ৩২১ কোটি ডলারের নিট পোশাকের বিপরীতে ১ হাজার ৯৩৯ কোটি ডলারের ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে। নিট পোশাকের ৯০-৯৫ শতাংশ কাপড়ই দেশে উৎপাদিত হয়। তবে সম্প্রতি গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংকটের কারণে সুতার কলগুলো দিনে গড়ে ১২ ঘণ্টাই উৎপাদন চালাতে পারছে না। কাপড় রং করার প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে নিট পোশাকের রপ্তানি ধরে রাখা নিয়ে শঙ্কায় আছেন নিট পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমের ক্রয়াদেশ আসতে শুরু করে। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের বড় বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ থেকে ক্রয়াদেশ আসার হার খুবই কম। রপ্তানি কবে ইতিবাচক ধারায় ফিরবে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, সবকিছু নির্ভর করছে বৈশ্বিক পরিস্থিতির ওপর।