সিরামিক টাইলস লাগাতে সিমেন্ট বালুর বিকল্প ‘টাইল অ্যাডহেসিভ’

শহরে থেকে গ্রাম, সব অঞ্চলেই দালান নির্মাণে টাইলসের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।ছবি: প্রথম আলো

ভবনের দেয়ালে কিংবা মেঝেতে টাইলস লাগাতে এখন আর সিমেন্ট আর বালু না হলেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ, বিকল্প হিসেবে টাইল অ্যাডহেসিভ ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এই উপকরণটিতে কেবল নির্দিষ্ট পরিমাণে পানি ব্যবহার করে মণ্ড তৈরি করে দেয়াল বা মেঝেতে হালকা প্রলেপ দিয়েই টাইলস লাগানো যায়। এতে পরিবেশদূষণ তুলনামূলক অনেক কম হয়।

বাংলাদেশের বাজার জন্য টাইল অ্যাডহেসিভ উৎপাদন করছে খাদিম সিরামিকস। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটি সিলেটে খাদিমনগরে নিজেদের কারখানায় নির্মাণসামগ্রীটি উৎপাদন করছে। ২৫ কেজির এক বস্তা টাইল অ্যাডহেসিভের মূল্য প্রকারভেদে ৭৬০ থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা।

খাদিম সিরামিকস জানায়, সাধারণ সিমেন্টের তুলনায় টাইল অ্যাডহেসিভ দিয়ে টাইলস লাগালে তা বেশি শক্তিশালী হয়। এমনকি সিরামিক টাইলস ছাড়াও মার্বেল বা গ্রানাইট পাথর টাইল অ্যাডহেসিভ দিয়ে সহজেই লাগিয়ে ফেলা যায়।

টাইলসের জন্য বিশেষ ফর্মুলায় তৈরি করা হয় টাইল অ্যাডহেসিভ। ইউরোপ আর আমেরিকায় টাইলস ঠিকঠাকভাবে বসানোর জন্য এই নির্মাণসামগ্রী প্রায় সব বাড়িতেই ব্যবহার করা হয়। চীনের অনেক জায়গায় নির্মাণের স্থানে সিমেন্টের মিশ্রণ তৈরি করা সম্পূর্ণ নিষেধ। ফলে ব্যবহারের সহজ প্রক্রিয়া ও গুণগত মানের কারণে টাইল অ্যাডহেসিভ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের বাজার জন্য টাইল অ্যাডহেসিভ উৎপাদন করছে খাদিম সিরামিকস।
ছবি: খাদিম সিরামিকস

সিমেন্টের মূল উপাদান লাইমস্টোন বা চুনাপাথর। নির্মাণকাজের জন্য সিমেন্টের সঙ্গে মেশাতে হয় প্রয়োজনীয় পরিমাণে পানি ও বালু। অন্যদিকে চুনাপাথরের সঙ্গে সেলুলোজ আর পলিমারভিত্তিক মিশ্রণ দিয়ে তৈরি হয় টাইল অ্যাডহেসিভ। এই দুই ধরনের উপাদান বেশি পরিমাণে থাকায় অ্যাডহেসিভের বন্ধনক্ষমতা বেশি হয়।

খাদিম সিরামিকসের কর্মকর্তারা বলেন, টাইল অ্যাডহেসিভ আগে থেকেই ফর্মুলা অনুযায়ী মিশ্রণ করা হয়ে থাকে। ফলে টাইলস লাগাতে খুবই সহজেই এই নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা যায়। আবার অ্যাডহেসিভ ব্যবহার করার পর এটি নিজে নিজেই কিউরিং করে খুব কম সময়েই শুকিয়ে যায়। অন্যদিকে অন্যান্য ধরনের মর্টার ব্যবহারের পর বেশ কয়েক দিন পর্যন্ত এতে পানি ঢালতে হয়। তা না হলে কিউরিং ছাড়া দ্রুত শুকিয়ে গেলে তা ফেটে যেতে পারে। এ কারণে ইটের সঙ্গে সিমেন্টের ব্যবহার সুবিধাজনক। বাইরে থেকে পানি দেওয়া যায়। কিন্তু টাইলস একবার লাগিয়ে ফেলার পর এর ভেতর দিয়ে পানি দেওয়াটা খুব মুশকিলের একটা কাজ। অ্যাডহেসিভ সেই ক্ষেত্রে আপনার কষ্ট কমাতে বেশ ভূমিকা রাখে।

টাইল অ্যাডহেসিভ দিয়ে টাইলস লাগানো হচ্ছে
ছবি: সংগৃহীত

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সিমেন্ট শুকিয়ে যাওয়ার পর আয়তনে খানিকটা কমে যায়। এই কমে যাওয়ার পরিমাণ আসলে একেবারেই কম, দশমিক শূন্য ৫ শতাংশের কাছাকাছি। কিন্তু এর ফলে ইটের দেয়ালে সিমেন্ট-বালুর মিশ্রণ ভালোভাবে কাজ করলেও টাইলস বা মার্বেল বসানোর ক্ষেত্রে, বিশেষ করে দেয়ালে, ঠিক অনুপাতে না বসালে সমস্যা দেখা দিতে পারে। টাইল অ্যাডহেসিভ এই সমস্যাগুলো থেকে টাইলসকে রক্ষা করে। দ্রুত শুকিয়ে আর দেয়াল বা মেঝের সঙ্গে দ্রুত বন্ধন তৈরি করে নির্মাণকাজের সময় বাঁচিয়ে দেয়।

আবার টাইলস লাগাতে সিমেন্টের সঙ্গে যে বালু ব্যবহার করা হয়, তার মধ্যে অনেক সময় আবর্জনা, কাদামাটি কিংবা পাথর থেকে যেতে পারে। তবে টাইল অ্যাডহেসিভ আগে থেকেই পরিশোধিত করায় পণ্যটির ভেতরে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তু আর পাওয়া যায় না। এতে প্রায় প্রতিটি কণা প্রায় সমান আয়তন ও ওজনের হয়ে থাকে।

খাদিম সিরামিকসের টাইল অ্যাডহেসিভে ব্যবহার করা হয় সিলেটের থেকে পাওয়া মিহিদানার বালু। বাংলাদেশে মূলত নদী থেকে উত্তোলন করা বালু ব্যবহার করা হয়, যার ভেতর পানি শোষণক্ষমতা বেশি হওয়ার ফলে তা নির্মাণে অনেক সমস্যা তৈরি করে। এমনকি এই অ্যাডহেসিভ ব্যবহার করে আগের বসানো টাইলসের ওপর আরও এক স্তর টাইলস বসানো যায়।

যদিও বাংলাদেশে সিমেন্টের ব্যবহার বেশি, তবু পোরসেলিন টাইলসের সৌন্দর্য আর চাকচিক্য বজায় রাখতে সবারই হিমশিম খেতে হয়। আবার বাজারে নির্দিষ্ট নকশার টাইলস একটা সময় পর আর পাওয়া যায় না। তাই সঠিক মানের মিশ্রণ ব্যবহার না করার কারণে কোনো একটি টাইলস নষ্ট হলে তা বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন পুরো একটি ঘরের দেয়াল বা মেঝের টাইলসই পরিবর্তন করতে হয়। এ কারণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে চাইলে টাইল অ্যাডহেসিভ ব্যবহার করা উচিত।