ব্যবসায়ীরা দেশে স্থিতিশীলতা দেখতে চান বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী স্কয়ার গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো এরই মধ্যে অধৈর্য হয়ে পড়েছে। কে দেশ চালাবে, সেটি ভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। তবে আমরা দেশের স্থিতিশীলতা দেখতে চাই।’
অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে তপন চৌধুরী বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার অল্প কয়েক দিন হলো দায়িত্ব নিয়েছে। তারা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তাদের ইতিবাচক মনোভাব দৃশ্যমান। আমার বিশ্বাস, তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) একটা উপযুক্ত সময়ে নির্বাচন দেবে। আশা করছি, যাঁরা রাজনৈতিক দল পরিচালনা করেন, তাঁরা মানুষের প্রত্যাশা বুঝবেন।’ তিনি আরও বলেন, দেশটা রাজনীতিবিদেরাই চালাবেন। তবে বিগত দিনে যে ধরনের রাজনীতি দেখেছি, তা সাধারণ মানুষ পছন্দ করেনি। আমাদের প্রত্যাশা, দেশটা ভালোভাবে চলবে। সবার মধ্যে পরিবর্তন আসবে।’
অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) আয়োজনে ‘ইআরএফ সদস্যদের সঙ্গে কথোপকথন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে আজ বুধবার এসব কথা বলেন তপন চৌধুরী। রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় স্বাগত বক্তব্য দেন ইআরএফের সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
অনুষ্ঠানে স্কয়ার ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। পাশাপাশি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
ধীরে ধীরে ব্যবসায়ীদের আস্থা ফিরে আসছে বলে মন্তব্য করেন তপন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর যে ধরনের ভাঙচুর ও অসন্তোষ শুরু হয়েছিল, সেখান থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ফলে আমরা আশাবাদী।’ সরকারের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংলাপ হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দেশের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিমুখী খাত তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তপন চৌধুরী বলেন, তৈরি পোশাকশিল্পে অস্থিতিশীল অবস্থার কারণে ইতিমধ্যে কিছু ক্রয়াদেশ অন্য দেশে চলে গেছে। এটা হাইটেক ইন্ডাস্ট্রি না। ফলে ব্যবসা সরতে বেশি সময় লাগে না। একসময় শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধের কারণে এই ব্যবসাটি বাংলাদেশে এসেছিলেন। এখন আমাদের দেশে অস্থিতিশীল হওয়ায় আবার ক্রেতারা শ্রীলঙ্কার দিকে নজর দিচ্ছে।
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তপন চৌধুরী। তিনি বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল। তবে উত্তরণের বিষয়ে ধীরে গেলে ভালো। কারণ, এলডিসি হিসেবে আমরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি, সেটি একসঙ্গে চলে গেলে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে।
স্কয়ার গ্রুপের নতুন কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তপন চৌধুরী বলেন, ‘পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমরা হাবুডুবু খাচ্ছি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি চালানো চ্যালেঞ্জিং। কারণ, জবাবদিহি। জবাবদিহি এত সোজা নয়। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির লাভ-লোকসান যা–ই হোক, কোনো সমস্যা নেই। তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে হাজার হাজার শেয়ারধারী থাকেন। তাঁদের প্রত্যেকের দায়িত্ব নিতে হয়।’ তবে স্কয়ারের আজকের অবস্থানে আসার পেছনে পুঁজিবাজারের অবদান রয়েছে বলে স্বীকার করেন তপন চৌধুরী।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশে ধরে রাখতে না–পারা দেশের সবচেয়ে বড় লোকসান বলে মন্তব্য করেন তপন চৌধুরী। তিনি বলেন, মেধাবী তরুণেরা দেশে থাকছে না। দেশে মেধাবীদের মূল্যায়ন করা হয় না। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের সময় প্রার্থীদের বাবা-দাদারা কোন রাজনৈতিক দলের, সেটি বিবেচনা নেওয়ার চর্চা খুবই দুঃখজনক। এখানে পরিবর্তন না এলে মেধাবীদের ধরে রাখা যাবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ব্যবসা পরিচালনার খরচ কমছে কি না, জানতে চাইলে তপন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা স্বস্তিবোধ করছি। সরকারি দপ্তরে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে এনবিআরের চেয়ারম্যান কিংবা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন লক্ষণীয়। আমরা আশাবাদী। অন্তর্বর্তী সরকারকে কম সময়ে বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। দুর্ভাগ্য হবে যদি আমরা পরিবর্তন না করতে পারি।’