দাম ভালো, তাই বেশি চামড়া সংগ্রহের আশা ব্যবসায়ীদের

রাত পোহালেই শুরু হবে কোরবানি ও চামড়া সংগ্রহের ব্যস্ততা। চলতি বছর কোরবানির সময় ১ লাখ ৬০ হাজার পিস কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন রাজধানীর পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকার আড়তদারেরা। তাঁরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার লবণযুক্ত চামড়ার দাম বেড়েছে। এ ছাড়া আবহাওয়াও এখন পর্যন্ত ঠিক আছে। তাই লবণ দেওয়ার উদ্দেশ্যেলক্ষ্য অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ করতে পারবেন বলে আশা তাঁদের।

রাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তার চামড়ার আড়তগুলো কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্যতম বড় জায়গা। এই এলাকায় বর্তমানে ৩৭টি কাঁচা চামড়ার আড়ত আছে। গতকাল শনিবার সকালে পোস্তা এলাকায় দেখা যায়, কোরবানির আগে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ত সময় পার করছেন পোস্তার পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তাঁরা চামড়া সংরক্ষণের সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, আড়তগুলো ধুয়েমুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন কর্মীরা; আড়তে থাকা পুরোনো চামড়া পাঠিয়ে দিচ্ছেন ট্যানারি ও গোডাউনে। এ ছাড়া নতুন চামড়ায় লবণ দিতে আগেভাগেই অনেকে লবণ কিনে রেখেছেন।

চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, সারা বছরে যে পরিমাণ চামড়া পোস্তায় আসে, তার প্রায় অর্ধেকই আসে কোরবানির ঈদের মৌসুমে। এ জন্য বাড়তি প্রস্তুতি রাখতে হয় তাঁদের। কোরবানির ঈদের দিন সকাল থেকেই চামড়া সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করেন পোস্তার আড়তদারেরা। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনেন তাঁরা। এরপর আড়তে এনে লবণ দেন তাঁরা। ঈদের তৃতীয় দিন পর্যন্ত চলে চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ কার্যক্রম।

লবণযুক্ত চামড়ার দাম বাড়ানোয় ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহে বেশি আগ্রহী হবেন। পশু কাটার সময় চামড়া ঠিকভাবে ছাড়ানো হলে এবং তা যথাসময়ে লবণ দেওয়া হলে নির্ধারিত দামেই চামড়া বেচাকেনা হবে।
মো. আফতাব খান, পোস্তার ব্যবসায়ী

চামড়া সংগ্রহে নানা ধাপ

রাজধানীর অদূরে সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়াশিল্প নগরী-সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ১০০টি চামড়া সংগ্রহের আড়ত আছে। কয়েক বছরের মধ্যে এসব আড়ত গড়ে উঠেছে। পোস্তা এলাকা থেকেও অনেকে সেখানে গেছেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশে এটিই এখন চামড়া সংগ্রহের বড় জায়গা। পোস্তার মতো সেখানেও আড়তগুলো ধুয়েমুছে তৈরি করা হয়েছে।

কোরবানির পর বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানার লোকেরা বা মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিক্রির জন্য কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেন। এরপর তা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী বেচাকেনার হাটে নিয়ে যান তাঁরা। সেখান থেকে বিভিন্ন ট্যানারি প্রতিষ্ঠান, আড়তদার ও ব্যাপারীরা একপ্রকার অনুমাননির্ভর দামে কাঁচা চামড়া কিনে তা লবণ দেন। পরবর্তী সময়ে এই লবণ দেওয়া চামড়া নির্ধারিত দামে ট্যানারিতে বিক্রি করা হয়।

ব্যবসায়ীরা বলেন, ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কোরবানির চামড়া নষ্ট হয়। ঢাকার বাইরের জেলাগুলোয় চামড়ার দাম একটু কম থাকে। তাই অনেকে বেশি দামের আশায় রাজধানীতে কাঁচা চামড়ানিয়ে আসেন। এতে অনেক সময় চামড়ার গুণগত মান কমে যায় বা নষ্ট হয়। এ জন্য নিকটস্থ এলাকাতেই চামড়া বিক্রি ও লবণ দেওয়ার পরামর্শ দেন ব্যবসায়ীরা।

পোস্তার কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আফতাব খান বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি নিয়েছি। সাভার, হেমায়েতপুর, আমিনবাজার, বেড়িবাঁধ, জিঞ্জিরা, কেরানীগঞ্জ, টঙ্গী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশের বেশ কিছু এলাকায় লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছি।’

বেড়েছে চামড়ার দাম

পোস্তার ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজারে বর্তমানে বড় দানার লবণের সরবরাহ ঠিক আছে। গত বছর কোরবানির সময়ের তুলনায় এবার লবণের দাম কমেছে। গত বছর ৭৪ কেজির বড় দানার লবণের প্রতি বস্তার দাম ছিল ১ হাজার ৩৫০ টাকা; এ বছর তা কমে ১ হাজার ৫০ টাকা হয়েছে। তবে চামড়ায় লবণ দেওয়ার জন্য শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। এ বছর প্রতিটি চামড়ায় লবণ দেওয়ার বিপরীতে ৮৫-১০০ টাকা মজুরি চাচ্ছেন কারিগরেরা। গত বছর এই মজুরি ছিল ৭০-৭৫ টাকা।

এদিকে প্রতিবছরের মতো এবারও পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এ বছর ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, গত বছর যা ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, গত বছর যা ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা; অর্থাৎ এ বছর ঢাকায় গরুর লবণযুক্ত চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট গত বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা আর ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ সাত টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

পোস্তার ব্যবসায়ী মো. আফতাব খান বলেন, লবণযুক্ত চামড়ার দাম বাড়ানোয় ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহে বেশি আগ্রহী হবেন। পশু কাটার সময় চামড়া ঠিকভাবে ছাড়ানো হলে এবং তা যথাসময়ে লবণ দেওয়া হলে নির্ধারিত দামেই চামড়া বেচাকেনা হবে।

দেশে এবার চাহিদার তুলনায় কোরবানির পশুর সংখ্যা বেশি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা ১ কোটি ৭ লাখ। সেখানে এ বছর গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট মিলিয়ে কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ পশু; অর্থাৎ ২২ লাখের বেশি পশু বাড়তি আছে।