বিশ্ববাজারে স্ক্র্যাপের দাম কমলেও দেশে রডের দর কমছে না কেন
রড তৈরির প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে। গত জুনে প্রতি টন স্ক্র্যাপের গড় আমদানি মূল্য ছিল ৫৯০ দশমিক ৭৫ ডলার। গত সেপ্টেম্বরে তা কমে হয়েছে ৫২১ দশমিক ২৯ ডলার। রডের উৎপাদন ব্যয়ের ৬০-৬৫ শতাংশই কাঁচামাল। সেই হিসাবে চার মাসের ব্যবধানে স্ক্র্যাপের আমদানি মূল্য ১১ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পাওয়ার কারণে রডের উৎপাদন ব্যয় সাড়ে ৭ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব। আবার গত জুনে আমদানিতে ডলারপ্রতি খরচ করতে হয়েছে ১০৮-১১২ টাকা। আর বর্তমানে তা কিছুটা কমে ১০১-১০৫ টাকা হয়েছে।
বিশ্ববাজারে ক্র্যাপের দাম যখন কিছুটা কমেছে, দেশে তখন রডের দাম একবার বাড়ছে, আরেকবার কমছে। গত আগস্টে ভবন নির্মাণের অন্যতম এই উপকরণটির দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ উচ্চতায় ওঠে, টনপ্রতি ৯৩ হাজার টাকা। তারপর দাম কমে। আবার বাড়ে। বর্তমানে টনপ্রতি রডের দাম ৮৫ হাজার ৫০০ থেকে ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা। রডের প্রাথমিক ও মধ্যবর্তী কাঁচামাল এবং প্রস্তুত পণ্য আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক-হারে স্থানীয় ইস্পাতশিল্প সুরক্ষিত। অতিমাত্রায় সুরক্ষা প্রদানের কারণে স্থানীয় উৎপাদনকারীর দক্ষতা হ্রাস পায় ও উৎপাদন ব্যয় বাড়ে। তাতে সাধারণ ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় কাঁচামাল আমদানি এবং বিক্রয় পর্যায়ে শুল্ক ও কর কমানোর সুপারিশ করেছ সরকারের ট্রেড ও ট্যারিফ কমিশন। সম্প্রতি কমিশনের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমএস পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল এমএস স্ক্র্যাপ আমদানিতে অগ্রিম আয়কর যথাযথভাবে সমন্বয়ের লক্ষ্যে টনপ্রতি ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৩০০ টাকা করা যেতে পারে। একই সঙ্গে রডের বিক্রয় পর্যায়ের কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার সুপারিশও করেছে সরকারি সংস্থাটি।
ট্যারিফ কমিশনের এই প্রতিবেদনে মোট ৮ দফা সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, স্ক্র্যাপের দর আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল। সে জন্য স্থানীয় বাজারে পণ্যের দাম যথাযথভাবে সমন্বয়ের জন্য নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে তা সমন্বয় করতে হবে। এ ছাড়া কোম্পানিগুলো দাম বাড়ানোর আগে সরকারকে অবহিত করার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
কমিশন আরও বলেছে, ইস্পাতশিল্পের স্থানীয় মূল্য সংযোজনের বড় অংশ নির্ভর করে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের ওপর। সে জন্য স্থানীয় উৎপাদন ব্যয় স্থিতিশীল রাখার জন্য বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিতের পদক্ষেপ নিতে হবে।
ইস্পাত খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, রডের মূল্যবৃদ্ধির বড় দুটি কারণ হচ্ছে, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট। এতে কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন সক্ষমতার পুরোটা কাজে লাগাতে পারছে না কোম্পানিগুলো। পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলারের সাপেক্ষে টাকার অবমূল্যায়ন। এতে কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলায় জটিলতা বেড়েছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, বাজারে এখন প্রতি টন ৬০ গ্রেডের রডের দাম পড়ছে ৮৫ হাজার ৫০০ থেকে ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর ৪০ গ্রেডের রড বিক্রি হচ্ছে ৮৩ হাজার থেকে ৮৫ হাজার টাকার মধ্যে। শীতকাল নির্মাণকাজের ভরা মৌসুম।
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে দেশে রডের চাহিদা প্রায় ৭২ লাখ টন। উৎপাদন সক্ষমতা ৯০ লাখ টন। বড় কয়েকটি ইস্পাত কারখানা এই চাহিদার ৫০ শতাংশ সরবরাহ করে থাকে। ইস্পাতের চাহিদার ৬০ শতাংশ সরকারি কাজে, গৃহনির্মাণে, ২৫ শতাংশ বাসাবাড়ি এবং বাকি ১৫ শতাংশ ব্যবহার হয় বাণিজ্যিক নির্মাণকাজে। বর্তমানে দেশে ছোট, বড় ও মাঝারি মিলিয়ে প্রায় ৪০০ ইস্পাত কারখানা আছে।