ময়দা, চিনির দাম বাড়ায় বিপাকে উৎপাদকেরা

সরকার গত জানুয়ারিতে গ্যাসের দাম গড়ে ৮২ শতাংশ বাড়িয়েছে। শিল্প খাতে বেড়েছে অনেক বেশি ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ।

হালকা খাবার হিসেবে বিস্কুট জনপ্রিয়। চায়ের সঙ্গে অনেকের বিস্কুট না হলে চলে না। বাজারের অন্য হালকা খাবারের চেয়ে বিস্কুট সাশ্রয়ী
সাবিনা ইয়াসমিন

দেশে ১ বছর আগে ১ কেজি খোলা ময়দার দাম ছিল সর্বনিম্ন ৩৫ টাকা। এখন সেই ময়দা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি সর্বনিম্ন ৭২ টাকায়। মানে হলো ময়দার সর্বনিম্ন দর প্রায় ১০৬ শতাংশ বেড়েছে।

বিস্কুট তৈরির মূল উপাদান ময়দার দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ ব্যাপকভাবে বেড়েছে বিস্কুট উৎপাদনকারীদের। অবশ্য শুধু ময়দা নয়, দাম বেড়েছে বিস্কুট তৈরির উপাদান চিনি, ভোজ্যতেল, ডালডা, ডিম ইত্যাদির। সঙ্গে সরকার বাড়িয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম।

বাংলাদেশ ব্রেড, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, উপকরণের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। গ্যাস বিল বেড়েছে অনেক। আগে যে গ্যাসের বিল ৬০ হাজার টাকা আসত, এখন আসছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

দেশে বিস্কুট তৈরিতে সাধারণত পাম তেল ব্যবহার করা হয়। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, ২ বছর আগে ১ লিটার পাম তেলের দাম ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, যা এখন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য এক বছর আগে পাম তেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ১৬৫ থেকে ১৭২ টাকা।

চিনির দাম বেড়েছে ব্যাপকভাবে। টিসিবির হিসাবে এক বছর আগে চিনির প্রতি কেজির দর ছিল ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। এখন সেই চিনি উঠেছে প্রতি কেজি ১২০–১৪০ টাকায়।

কোনো কোনো বিস্কুটে ডিম ব্যবহার করতে হয়। ডিমের দাম এক বছরের বেশি সময় ধরে চড়া। সাধারণত ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের প্রতি ডজনের দাম ১০০ থেকে ১১০ টাকা থাকে। এখন তা ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা।

বিস্কুটে স্বাদ ও ঘ্রাণ (ফ্লেভার) যোগ করতে নানা উপকরণ লাগে। এসব উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেগুলোর আমদানি খরচ বেড়েছে। গত বছরের মে মাসে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকার আশপাশে, তা এখন ১০৬ টাকার বেশি।

সরকার গত জানুয়ারিতে গ্যাসের দাম গড়ে ৮২ শতাংশ বাড়িয়েছে। শিল্প খাতে বেড়েছে অনেক বেশি, ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ। বিস্কুট কারখানা বা বেকারি সাধারণ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের আওতায় পড়ে। ক্ষুদ্র শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ১৭৮ শতাংশ। মাঝারি শিল্পে বেড়েছে ১৫৫ শতাংশ। এ বছর তিন দফায় বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ করে বাড়ানো হয়েছে।

বিস্কুট খাতের কোম্পানিগুলো বলছে, উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও বিস্কুটের দাম ব্যাপকভাবে বাড়ানো যায়নি। কারণ, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ততটা নেই। এ কারণে কিছু কিছু কৌশল নিয়েছে কোম্পানিগুলো। কেউ বিস্কুটের প্যাকেটে পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে দাম আগের মতোই রেখেছে। কেউ কেউ দাম কিছুটা বাড়িয়েছে, আবার পরিমাণেও কমিয়েছে।

রিদিশা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডে গ্যাস জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। সেই বিদ্যুতে কারখানা চলে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির চেয়ে বেশি অসুবিধা তৈরি করেছে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি।