প্রশিক্ষণের অভাবে দক্ষতায় পিছিয়ে শ্রমিকেরা

বাংলাদেশের উন্নয়ন মূলত অদক্ষ শ্রমিকদের হাত ধরে হয়েছে। তৈরি পোশাকশ্রমিক থেকে কৃষিশ্রমিক—সব খাতেই অদক্ষ শ্রমিকের আধিক্য। প্রবাসী আয় যাঁরা পাঠাচ্ছেন, তাঁদেরও বড় অংশ অদক্ষ। ২০ বছর ধরে এ ধারা চলছে। কিন্তু এখন অর্থনীতিকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে হলে কর্মীবাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট করতে সেবা খাতের বিকাশ ঘটাতে হবে।

অন্যদিকে শ্রমিকদের দক্ষতার অভাবে ধুঁকছে দেশের কৃষি ও শিল্প খাত। অদক্ষ শ্রমিকের হাতে উৎপাদিত পণ্য অনেক সময়ই মানসম্পন্ন হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ ধরনের পণ্য দক্ষ শ্রমিক দিয়ে দ্বিতীয়বার তৈরি করিয়ে নিতে হয়। প্রবাসী শ্রমিকদের অনেকে দক্ষতার অভাবে নামমাত্র মজুরি পান।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘দক্ষতার চাহিদা, সরবরাহ এবং এই দুয়ের ব্যবধান’ শীর্ষক ওই গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইআইপি) কর্মসূচির আওতায় এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

ওই গবেষণায় দেখা যায়, শীর্ষ ১০ শিল্প খাতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্তির চিত্র আরও উদ্বেগজনক—মাত্র ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ শ্রমিক প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ ৯৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ শ্রমিক প্রশিক্ষণের আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। দক্ষতা অর্জনে কাজের অভিজ্ঞতাই বড় ভরসা। এ কারণে দক্ষতা ঘাটতি প্রায় ৩০ শতাংশ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দীর্ঘদিন সামরিক, অগণতান্ত্রিক ও চাপিয়ে দেওয়া শাসনব্যবস্থার কারণে মানসম্পন্ন শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। তবে ১৩ বছর ধরে সরকার শিক্ষার মান উন্নয়নে চেষ্টা করছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষি, বনায়ন ও মৎস্য খাতের শ্রমিকদের মাত্র শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ বছরে একবার প্রশিক্ষণ পান। ১০ শিল্প খাতের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রশিক্ষণের সুযোগ পান নির্মাণশ্রমিকেরা—মাত্র শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার দুর্বলতার কারণে দক্ষতা উন্নয়ন কাঙ্ক্ষিত হারে হচ্ছে না। আগামী অন্তত এক দশক দক্ষতার ঘাটতি বাধা হয়ে থাকবে।