কৃত্রিম চামড়া তৈরিতে নতুন বিনিয়োগ আরএফএলের

  • আগামী ছয় মাসের মধ্যে উৎপাদনে যাবে আরএফএলের কারখানাটি।

  • কারখানাটিতে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ২০০ লোকের।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কারখানায় তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম চামড়াছবি: প্রাণ-আরএফএলের সৌজন্যে

দেশে কৃত্রিম চামড়া (সিনথেটিক) দিয়ে তৈরি পণ্যের বাজার বড় হচ্ছে, রপ্তানিতেও ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু এসব নন-লেদার পণ্যে ব্যবহৃত কাঁচামালের বেশির ভাগই আমদানি হয়। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী পণ্য তৈরিতে বহুল ব্যবহৃত পলিইউরিথেন (পিইউ) ধরনের কৃত্রিম চামড়া সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। আশার কথা হচ্ছে দেশে প্রথমবারের মতো এই পিইউ লেদার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ–আরএফএল।

আরএফএল ইতিমধ্যে তাদের হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কারখানায় পলিভিনাইল ক্লোরাইড (পিভিসি) ধরনের কৃত্রিম চামড়ার উৎপাদন শুরু করছে। সেখানেই এখন প্রায় ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগে পিইউ লেদার তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে আরএফএল। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, আগামী ছয় মাসের মধ্যে তারা পিইউ লেদার উৎপাদনে যেতে পারবে। এ কারখানায় কর্মসংস্থান হবে প্রায় ২০০ মানুষের।

এই শিল্প পার্কে পলিইউরিথেন (পিইউ) ধরনের কৃত্রিম চামড়ার কারখানা স্থাপনে ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে দেশের এই শিল্পগোষ্ঠী।

চামড়া খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দেশের বাজারে যেসব জুতা পাওয়া যায়, তার বড় অংশই সিনথেটিক বা কৃত্রিম চামড়া দিয়ে তৈরি। এ ছাড়া পোশাক, ব্যাগ, আসবাব, গৃহসজ্জার সামগ্রী, গাড়িসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃত্রিম চামড়া ব্যবহৃত হয়। কৃত্রিম চামড়ার প্রধান দুটি ধরন হচ্ছে পিভিসি ও পিইউ। এর মধ্যে দেশি কয়েকটি কোম্পানি পিভিসি চামড়া তৈরি করছে। তবে পিইউ ধরনের চামড়া এখনো সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর।

পলিইউরিথেন বা পিইউ লেদার হচ্ছে থার্মোপ্লাস্টিক পলিমার (একধরনের প্লাস্টিক) দিয়ে তৈরি এক প্রকারের কৃত্রিম চামড়া। অন্যান্য চামড়ার পণ্যের তুলনায় সাশ্রয়ী দাম, দীর্ঘস্থায়িত্ব ও সহজ রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধার কারণে অনেকেই পিইউ লেদারের জিনিস পছন্দ করেন।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, ‘বাংলাদেশ থেকে যেসব নন-লেদার পণ্য রপ্তানি হয়, তার পুরোটাই পিইউ লেদারের তৈরি। বর্তমানে আমাদের দেশের রপ্তানিকারকেরা পিইউ লেদার আমদানি করে পণ্য তৈরি করে থাকেন।’

চাহিদা যেমন

কৃত্রিম চামড়ার (নন-লেদার) তৈরি পণ্যের দেশীয় ও রপ্তানি বাজার দিন দিন বাড়ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে চামড়াবিহীন (কৃত্রিম চামড়া) জুতা রপ্তানির মাধ্যমে দেশের আয় হয়েছে ৪৭ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে কৃত্রিম চামড়ার পণ্য উৎপাদকদের তথ্য অনুসারে, দেশে কৃত্রিম চামড়ার বাজার প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার। প্রতিবছর এই বাজার ১০ শতাংশ করে বাড়ছে। দেশে বছরে সাড়ে সাত কোটি বর্গমিটার কৃত্রিম চামড়ার চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩০ শতাংশের জোগান আসে দেশীয় উৎপাদকদের কাছ থেকে। বাকিটা চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি করা হয়।

বর্তমানে দেশে যমুনা লেদার, ফারিয়া লেদার, ইউনাইটেড কোম্পানি, রয়েল, সানিয়ার্ড, লিবার্টি কোম্পানিসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান কৃত্রিম চামড়া উৎপাদন করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সবগুলোই পিভিসি ধরনের চামড়া উৎপাদন করে। আরএফলও ২০২০ সাল থেকে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে পিভিসি লেদার উৎপাদন করে আসছে। এ জন্য কোম্পানিটি প্রায় ৩৫ কোটি বিনিয়োগ করেছে। আরএফএলের কারখানাটির বছরে ৮৫ লাখ বর্গমিটার কৃত্রিম পিভিসি চামড়া উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। এই কারখানায় উৎপাদিত পিভিসি চামড়া দেশের ৩০টির বেশি কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে আরএফএল।

তবে রপ্তানিমুখী নন-লেদার পণ্যে সাধারণত পিইউ লেদার ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সেটি উৎপাদনের প্রস্তুতিই আরএফএল এখন শুরু করেছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘পিইউ লেদার দেশে তৈরি হলে আমদানিনির্ভরতা কমবে। তাতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে লিড টাইম কমে আসবে। পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে।’

এদিকে কৃত্রিম চামড়ার বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানিতে ক্ষেত্রভেদে ৩১ থেকে ৫৯ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হয়। এই শুল্ক কমানো প্রয়োজন বলে জানান কামরুজ্জামান কামাল।