বন্ধ কারখানা বেসরকারি উদ্যোগে চালু হচ্ছে

পাটকলটি ৩০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে ফরচুন গ্রুপের সহযোগী এক প্রতিষ্ঠানকে। নতুন করে উৎপাদন শুরুর প্রক্রিয়া চলছে।

বন্ধ হওয়া দৌলতপুর জুট মিলস এবার চালু হচ্ছে ব্যক্তিমালিকানায়। এখন চলছে পাটকলটির অকেজো ও জং ধরা যন্ত্রপাতি মেরামতের কাজ
ছবি: প্রথম আলো

সাড়ে তিন বছর বন্ধ থাকার পর খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল দৌলতপুর জুট মিলটি ফরচুন গ্রুপের কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এখন বেসরকারি খাতের ফরচুন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনি ওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যার টেকনোলজি সেখানে নতুন করে উৎপাদন কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই মধ্যে নিয়োগ করা হয়েছে শ্রমিক-কর্মচারী। কেনা হয়েছে পাটও। পাটপণ্যের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি ওই পাটকলে জুতাও তৈরি করবে।

এদিকে বন্ধ সব রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সরকারি মালিকানায় চালু ও শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের দাবিতে নাগরিক ও শ্রমিকদের বেশ কয়েকটি সংগঠন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

গত রোববার দৌলতপুর পাটকল সরেজমিনে দেখা যায়, মিলের প্রধান ফটকে বড় করে লেখা—‘দৌলতপুর জুট মিলস লিমিটেড, পরিচালনায় ইউনিওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যার টেকনোলজি’। কারখানার ভেতরে শ্রমিকেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন। পাটকলের পুরোনো যন্ত্রপাতিগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। কৃষকের কাছ থেকে কেনা পাটের মান যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। 

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)  সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫৩ সালে স্থাপিত দৌলতপুর জুট মিলটি ২০০২ সালে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১২-১৩ অর্থবছরে মিলটি পুনরায় চালু করা হয়েছিল। কিন্তু লোকসানের কারণে ২০২০ সালের জুলাইয়ে আবারও বন্ধ হয়ে যায় পাটকলটি। গত ৪ সেপ্টেম্বর মূল কারখানাসহ পাটকলের প্রায় ১৪ একর জায়গা ইজারা দেওয়া হয় ফরচুন গ্রুপকে। মাসিক সাড়ে ৯ লাখ টাকায় ৩০ বছরের জন্য এই ইজারা দেওয়া হয়েছে। প্রতি ৫ বছর পরপর ১০ শতাংশ করে ভাড়া বাড়ানো হবে। এরই মধ্যে তিন বছরের ভাড়া অগ্রিম পরিশোধ করেছে ফরচুন গ্রুপ।

ফরচুন গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ) মো. ইসহাক আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন করে মিলটি আমরা আবার চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি, আগামী মাসে উৎপাদনে যেতে পারব। এ মিলে উৎপাদিত পাটপণ্য ভারত, তুরস্ক, কানাডা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হবে।’

মো. ইসহাক আলী আরও বলেন, ‘জুতার ব্যবসা থেকে পাটের ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছি। জুতা তৈরিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি লাগবে। এ জন্য নতুন যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলা হয়েছে। জুতার কারখানার জন্য আমাদের অন্য কারখানা থেকে ১০০ কর্মীকে প্রাথমিকভাবে খুলনায় বদলি করে আনা হয়েছে। জুতার কারখানার জন্য প্রায় ১ হাজার ২০০ শ্রমিক লাগবে। চলতি বছরের শেষে জুতা উৎপাদন শুরু করার আশা করছি।’

আমির হোসেন হাওলাদার ২০২০ সালে পাটকল বন্ধের সময় তিনি দৌলতপুর জুট মিলে লাইন সরদার ছিলেন। তিনি বলেন, এখন বেতন  কম। তারপরও কাজের সংস্থান হওয়ায় খুশি।

নতুন করে চালু হতে যাওয়া এ কারখানার ব্যবস্থাপক ফরচুন গ্রুপের মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, কারখানাটিতে প্রায় ২৫০ তাঁত আছে। এর মধ্যে ১৫০ তাঁত ঠিক করা হয়েছে। এরই মধ্যে এ অঞ্চলের বিভিন্ন পাটকলে কাজ করা শ্রমিকদের মধ্য থেকে ৭০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মিল চালুর আগে সব মিলিয়ে ৫০০ শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হবে।

বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, খুলনা অঞ্চলের বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের মধ্যে যশোরের জেজেআইকে আকিজ গ্রুপের কাছে, খুলনার দৌলতপুর জুট মিল ফরচুন গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইজারাগ্রহীতারা এসব মিলে পাটপণ্যই উৎপাদন করবেন। এ ছাড়া খুলনার ক্রিসেন্ট, খালিশপুর, ইস্টার্ন এবং যশোরের কার্পেটিং জুট মিলেরও ইজারার বিষয়ে অনুমোদন মিলছে। খালিশপুর জুট মিল রেডিয়্যান্ট গ্রুপ, যশোরের কার্পেটিং ও ইস্টার্ন জুট মিলকে ভারতের একটি কোম্পানি নিতে চাচ্ছে। আর খুলনার স্টার ও প্লাটিনাম জুট মিল ইজারা দেওয়ার জন্য আবারও দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে। 

বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সমন্বয়কারী গোলাম রব্বানী বলেন, ইজারা দেওয়ার উদ্যোগটা খুব ভালো। আবার এ অঞ্চলে শ্রমিকদের কর্মচঞ্চলতা ফিরবে। আর পুরো মিল ইজারা দেওয়া হচ্ছে না, আবার দীর্ঘ মেয়াদেও দেওয়া হচ্ছে না। ইজারার বাইরে যে অংশ, সেটি বিজেএমসির ব্যবস্থাপনায় থাকছে।

পাটকল রক্ষায় গঠিত সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক কুদরত ই খুদা বলেন, অতীতে দেখা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত থেকে বেসরকারি খাতে দেওয়া কোনো পাটকলই ভালোভাবে চলেনি। এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে লুটপাট করার জন্য এসব মিল ইজারা নেয়। মিলগুলো শ্রমিকের কারণে লোকসান হয়নি, লোকসান হয়েছে ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি ও দুর্নীতির কারণে। তাই ইজারার মাধ্যমে নয়, রাষ্ট্রীয় মালিকানায় মিলগুলো চালু করা দরকার।