হাজারীবাগের ‘রেড জোন’ প্রত্যাহার চান ট্যানারিমালিকেরা

ব্যাংকঋণ পরিশোধ, পুঁজিসংকট কাটানো ও বিনিয়োগ বাড়াতে হাজারীবাগের জমির ওপর থাকা ‘নিষেধাজ্ঞা’ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ট্যানারিমালিকেরা। তাঁরা জানান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কয়েক বছর ধরে হাজারীবাগের ট্যানারি এলাকার জায়গা লাল অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে রেখেছে। ফলে ট্যানারিমালিকেরা তা ব্যবহার করে ঋণ নেওয়া বা অন্য কোনো কাজে লাগাতে পারছেন না।

আজ বুধবার রাজধানীর সোবহানবাগের মেট্রো শপিং মলে অবস্থিত ধানমন্ডি ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিটিএর চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ।

কোরবানির ঈদের মৌসুমে কাঁচা চামড়ার ক্রয়-বিক্রয় ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিটিএ। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিটিএর সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্যাহ, জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান ইলিয়াছুর রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে বিটিএর নেতারা জানান, ট্যানারিগুলো রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে চলে যাওয়ার পর হাজারীবাগের জমিকে রাজউক ‘রেড জোন’ হিসেবে ঘোষণা করে। এটিকে সবুজ অঞ্চল বা ব্যবহারযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করার জন্য বিভিন্ন সময়ে দাবি জানিয়েছেন তাঁরা, কিন্তু রাজউকের ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) এই জমি এখনো লাল অঞ্চল হিসেবেই আছে।

বিটিএর চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে অনেক সম্ভাবনা থাকলেও আন্তর্জাতিক মান না থাকা ও পুঁজিসংকটের কারণে ট্যানারিমালিকেরা রপ্তানির লক্ষ্য অর্জন করতে পারছেন না। হাজারীবাগের জমি যদি ব্যবহার করা যেত, তাহলে চামড়াশিল্পের মালিকেরা সেই জমির উন্নয়ন বা তা বিক্রি করতে পারতেন; কিংবা সেই সম্পত্তি দেখিয়ে ব্যাংকঋণ নিতে পারতেন, এতে পুঁজির সংকট দূর হতো।

অনেক ট্যানারিমালিক ঋণখেলাপি হয়ে আছেন জানিয়ে শাহীন আহমেদ বলেন, হাজারীবাগ থেকে সাভারের চামড়াশিল্প নগরে ট্যানারি স্থানান্তরের পর শতাধিক ব্যবসায়ী ঋণখেলাপি হয়েছেন। অনেক ট্যানারিমালিক চলতি মূলধন নিয়ে শিল্পনগরে বিনিয়োগ করেছেন; নতুন করে ঋণ নিতে পারেননি। উল্টো হাজারীবাগের প্রায় ১০০ একর জায়গা ব্যাংকে বন্ধকি ঋণ বা মর্টগেজ হিসেবে আছে। ব্যবসায়ীদের ঋণের বোঝা কমাতে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের ঋণের সুদ মওকুফের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ বা এলডব্লিউজি সনদ অর্জনে সরকারি সহায়তা চেয়েছেন বিটিএর সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্যাহ। তিনি বলেন, ‘এলডব্লিউজি সনদ না থাকায় আমরা কাঙ্ক্ষিত রপ্তানি লক্ষ্য অর্জন করতে পারছি না। শিল্পনগরের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) আরও কার্যকর করতে আলাদা ক্রোম রিকভারি ইউনিট স্থাপন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি চামড়া খাতের রপ্তানি সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকারের আরও নীতিসহায়তা দরকার।’

সংবাদ সম্মেলনে কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। জবাবে বিটিএর চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, ‘জটিলতা এড়াতে কাঁচা ও লবণ দেওয়া দুই ধরনের চামড়ার দাম নির্ধারণ করা যেতে পারে। আগামী দিনে সরকারের কাছে এই প্রস্তাব আমরা পেশ করব। তবে এ বছর ট্যানারিমালিকেরা সরাসরি বেশি পরিমাণে চামড়া কেনায় মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কিছুটা কমেছে। ’

এ ছাড়া চামড়া প্রক্রিয়াকরণের রাসায়নিক সহজভাবে পেতে সুপারভাইজড বন্ড ব্যবস্থা বহাল রাখা, পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদান, শিল্পনগরের জমির বরাদ্দ নীতিমালা হালনাগাদ করার দাবি জানান ট্যানারিমালিকেরা।