মোখার প্রভাবে চট্টগ্রামে ইস্পাতের সাত কারখানা বন্ধ

চট্টগ্রামে বিএসআরএমের একটি কারখানাফাইল ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে কক্সবাজারের মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে শুক্রবার রাত ১১টা থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাতে চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাসনির্ভর ইস্পাতের সাতটি কারখানাও বন্ধ হয়ে গেছে। যেসব কারখানা চালু আছে, সেগুলোতেও আংশিক উৎপাদন চালু রয়েছে।

চট্টগ্রামে গ্যাসনির্ভর কারখানার মধ্যে ইস্পাত ও কাচ কারখানা বেশি রয়েছে। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকলেও সীতাকুণ্ডে পিএইচপির কাচ কারখানা বিকল্প উপায়ে উৎপাদন চালু রেখেছে। অন্যদিকে ইস্পাত কারখানার বেশ কয়েকটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বন্ধ কারখানার মধ্যে জিপিএইচ ইস্পাতের একটি, বিএসআরএম গ্রুপের চারটি কারখানা এবং মোস্তফা হাকিম গ্রুপের দুটি কারখানা রয়েছে। রড তৈরির কারখানায় সবচেয়ে বেশি দরকার হয় গ্যাস। আর রডের মধ্যবর্তী কাঁচামাল বিলেট তৈরির কারখানায় বিদ্যুৎ লাগে বেশি।

জানতে চাইলে বিএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, গ্রুপের বিলেট তৈরির চারটি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে রড তৈরির দুটি কারখানায় বিকল্প উপায়ে আংশিক উৎপাদন চালু রাখা হয়েছে। গ্যাসের পরিবর্তে ফার্নেস ও ডিজেল ব্যবহার করে উৎপাদন আংশিক চালু রাখা হয়েছে।

মোস্তফা হাকিম গ্রুপের দুটি ইস্পাত কারখানাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শনিবার রাত থেকে গ্রুপটির সীতাকুণ্ডের কুমিরায় গোল্ডেন ইস্পাতের কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর কর্ণফুলী উপজেলায় এইচএম স্টিলের কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

মোস্তফা হাকিম গ্রুপের পরিচালক মো. সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারী শিল্পের জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ দরকার। দুর্যোগের কারণে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুতেরও সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দুর্যোগ কেটে যাওয়ায় খুব শিগগির গ্যাস সরবরাহব্যবস্থা চালু হবে।’

গ্যাসনির্ভর আরেকটি শিল্প হলো কাচ। কাচশিল্পে চুল্লিতে ১ হাজার ৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কাঁচামাল গলিয়ে উৎপাদন করা হয়। এ জন্য এ শিল্পের অপরিহার্য উপাদান গ্যাস। কোনো কারণে গ্যাসের অভাবে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে চুল্লি ধ্বংস হয়ে যায়। গ্যাস না থাকায় সীতাকুণ্ডের পিএইচপি ফ্লোট গ্লাসের কারখানা বিকল্প উপায়ে উৎপাদন সচল রেখেছে বলে কারখানার একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান।

সংকট কাটবে কত দিনে
ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে কক্সবাজারের মহেশখালীতে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত এলএনজি টার্মিনালের সুরক্ষায় টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেখানে ভাসমান দুটি টার্মিনালের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আমদানি করে আনা এলএনজি রূপান্তর করে সরবরাহ করা হয় জাতীয় পাইপলাইনের মাধ্যমে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ায় শুক্রবার রাত ১১টায় দুটি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হয়।

আজ রোববার সচিবালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেছেন, দুটি ভাসমান টার্মিনালের মধ্যে একটি গভীর সমুদ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সেটি থেকে এলএনজি সরবরাহ শুরু হতে ১২–১৫ দিন সময় লাগতে পারে। আর যেটি কাছাকাছি আছে, তা থেকে শিগগিরই এলএনজি সরবরাহ শুরু হবে। এতে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

অবশ্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহকারী কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হতে ছয় থেকে সাত দিন লাগতে পারে। জানতে চাইলে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল থেকে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এলএনজি টার্মিনাল চালু না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যা থাকবে।

ঘূর্ণিঝড় মোখা আজ দুপুরের পর থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সন্ধ্যা নাগাদ চট্টগ্রামে বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়েনি।