পোশাক ও বস্ত্র খাতে এখন ২০০ পরিবেশবান্ধব কারখানা

পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা প্লামি ফ্যাশনসের ভেতরে সবুজের সমারোহ।
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

অবশেষে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনে ডাবল সেঞ্চুরির মাইলফলকে পৌঁছাল বাংলাদেশ। বিষয়টি হলো, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ২০০ পরিবেশবান্ধব কারখানা রয়েছে।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা বলছে, গত সোমবার নতুন করে দুই কারখানা পরিবেশবান্ধব সনদ অর্জন করে। ফলে পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনে দ্বিশতকের মাইলফলক অর্জিত হয়।

নতুন করে যে দুটি কারখানা পরিবেশবান্ধব সনদ পেয়েছে, সেগুলো হলো—গাজীপুরের লিডা টেক্সটাইল অ্যান্ড ডায়িং ও লিজ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড।
বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘টেকসই শিল্পায়নের পথে এটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।’

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর দেশি-বিদেশি সমালোচনার মুখে ব্যবসা টেকাতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে মনোযোগী হন দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। তখন চাপ কিংবা বাধ্যবাধকতা না থাকলেও তাঁদের কেউ কেউ পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পরে আরও অনেক উদ্যোক্তা উৎসাহী হোন। ফলে বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক পরিবেশবান্ধব কারখানার মুকুট এখন বাংলাদেশের।

পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে ২০১২ সালে প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানা বাংলাদেশে যাত্রা শুরু। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে তিনি স্থাপন করেন ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। তাঁর দেখানো পথ ধরেই দেশে দুই শতাধিক পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়ে উঠেছে। তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের পাশাপাশি শিপইয়ার্ড, জুতা ও ইলেকট্রনিক খাতেও এখন পরিবেশবান্ধব কারখানা আছে। বাণিজ্যিক ভবনও হচ্ছে পরিবেশবান্ধব, যদিও সংখ্যায় কম।

বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)। তারা ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দেয়। লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন।

এই সনদ পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। সে জন্য নতুন ভবন নির্মাণ কিংবা পুরোনো ভবন সংস্কার করে আবেদন করা যায়।

১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউএসজিবিসি। সংস্থাটির অধীন কলকারখানার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভবন, স্কুল, হাসপাতাল, বাড়ি, বিক্রয়কেন্দ্র, প্রার্থনার কেন্দ্র ইত্যাদি পরিবেশবান্ধব স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলা যায়। লিড সনদের জন্য ৯টি শর্ত পরিপালনে মোট ১১০ পয়েন্ট আছে।

এর মধ্যে পয়েন্ট ৮০-এর ওপরে হলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ হলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ হলে ‘লিড সিলভার’ ও ৪০-৪৯ হলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ মেলে। বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব স্থাপনাগুলোর অধিকাংশই ইউএসজিবিসির অধীন সনদ পেয়েছে।

বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে লিড সনদ পাওয়া ২০০ পোশাক ও বস্ত্র কারখানার মধ্যে ৭৩টি লিড প্লাটিনাম, ১১৩ গোল্ড, ১০ সিলভার ও ৪টি সার্টিফায়েড সনদ পেয়েছে।

লিড সনদে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে বাংলাদেশের ময়মনসিংহের গ্রিন টেক্সটাইল লিমিটেড এখন বিশ্বের সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব কারখানা। ১১০ নম্বরের মধ্যে তারা পেয়েছে ১০৪। শুধু তারাই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নম্বর পাওয়া পরিবেশবান্ধব ১০টি কারখানার মধ্যে ৮টি বাংলাদেশের। সেগুলো হচ্ছে—রেমি হোল্ডিংস, ফতুল্লা অ্যাপারেলস, লিডা টেক্সটাইল অ্যান্ড ডায়িং, লিজ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি, তারাসিমা অ্যাপারেলস, প্লামি ফ্যাশনস ও সিলকেন সুইং।

বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ১০০ পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানার মধ্যে অর্ধেক বা ৫৩টি বাংলাদেশের।

মহিউদ্দিন রুবেল আরও বলেন, গত এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ১৯৫টি পরিবেশবান্ধব কারখানা ছিল। গত ২৪ মে টাঙ্গাইলের বার্ডস এ অ্যান্ড জেড; জুনে চট্টগ্রামের ইউনির্ভাসেল জিনস ও প্যাসিফিক নিটেক্স পরিবেশবান্ধব কারখানার সনদ পায়।

গত সোমবার একসঙ্গে দুই কারখানা সনদ পাওয়ায় তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যা ২০০-তে উন্নীত হলো, আরও বেশ কিছু কারখানা পাইপলাইনে আছে, অর্থাৎ তারাও এ সনদ পাওয়ার পথে।