সোনার অলংকার কিনছেন, দেখুন হলমার্ক আছে কি না

সোনার অলংকারফাইল ছবি: প্রথম আলো

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতায় সোনার দাম গত নভেম্বর থেকে ঊর্ধ্বমুখী। শিগগিরই দাম কমবে, সেই সম্ভাবনাও নেই। মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যাংকে টাকা রেখে তেমন মুনাফা মিলছে না। শেয়ারবাজার মন্দা। ফলে বিয়েশাদির মতো অনুষ্ঠান ছাড়া শুধু বিনিয়োগের জন্য সোনার অলংকার কেনার পরিকল্পনা করছেন অনেকে। তার কারণ, ভালো মুনাফা।

করোনার আগে অর্থাৎ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের বাজারে প্রতি ভরি সোনার দাম ছিল ৬১ হাজার ৫২৮ টাকা। তিন বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২৯ হাজার ৫৬৮ টাকা। বর্তমানে এক ভরি সোনার অলংকার কিনতে লাগছে ৯১ হাজার ৯৬ টাকা। তার মানে যিনি তিন বছর আগে ৬১ হাজার ৫২৮ টাকা বিনিয়োগ করে এক ভরি সোনার অলংকার কিনেছিলেন, তিনি এখন তা বিক্রি করলে ১১ হাজার ৩৪৯ টাকা মুনাফা পাবেন।

বিনিয়োগ, উপহার কিংবা ব্যবহার—যে জন্যই সোনার অলংকার কিনছেন, তাতে ঠকছেন না তো। এমন প্রশ্নের কারণ, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি হলমার্ক করা সোনার অলংকার বিক্রি বাধ্যতামূলক করলেও তা অনেক জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানই মানছে না। হলমার্ক হচ্ছে অলংকারে ব্যবহৃত সোনার গুণগত মান, যা লেজার মেশিন দিয়ে অলংকারের গায়ে খোদাই করে লেখা থাকে।

আরও পড়ুন

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি সোনার গয়না ও শিল্পকর্মে হলমার্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে ছয় সংখ্যার পরিচিতি নম্বর বা এইচইউআইডি ছাড়া সোনার গয়না ও শিল্প বস্তু বিক্রি করা যাবে না, এমন নির্দেশনা দিয়েছে দেশটির ভারতের ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (বিআইএস)। ক্রেতারা যাতে উচ্চ মানের বিশুদ্ধ সোনা কিনতে পারেন, সেই জন্যই এ সিদ্ধান্ত।

বাংলাদেশ সরকারের এমন কোনো নির্দেশনা নেই। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি ২০০৭ সালে ক্যাডমিয়াম পদ্ধতি চালু করে। তারপর হলমার্কও বাধ্যতামূলক করা হয়। তবে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরের জুয়েলারি ব্র্যান্ড ও নামীদামি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মটি মানলেও অন্যরা মানছে না। তাতে অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতারা প্রতারিত হন।

এমন তথ্য দিলেন জুয়েলার্স সমিতির নেতারা। তাঁরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের সোনার দাম নির্ধারণ করে জুয়েলার্স সমিতি। তারপরও অখ্যাত কিছু প্রতিষ্ঠান বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে কম দামে সোনার অলংকার বিক্রি করে। তারা ক্রেতাদের প্রতিশ্রুত বিশুদ্ধ সোনার চেয়ে কম দেওয়ার মাধ্যমে কাজটি করছে। তাদের অলংকারে হলমার্ক থাকে না। তারা রসিদও দেয় না। ফলে অলংকার বিক্রির সময় ক্রেতারা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হন।

আরও পড়ুন

বর্তমানে দেশে ২২, ২১ ও ১৮ ক্যারেটে সোনার অলংকার তৈরি হয়। ২২ ক্যারেটে ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা থাকে। আর ২১ ক্যারেটে ৮৭ দশমিক ৫ ও ১৮ ক্যারেটে বিশুদ্ধ সোনার পাওয়া যায়।

বিদেশে তৈরি সোনার অলংকারের গায়ে হলমার্ক হিসেবে ৯১৬, ৮৭৫ ও ৭৫০ খোদাই করা থাকে। কোনো অলংকারে ৯১৬ লেখা থাকার অর্থ সেটি ২২ ক্যারেটের। ৮৭৫ মানে ২১ ক্যারেট আর ৭৫০ মানে হচ্ছে ১৮ ক্যারেট।  

বাংলাদেশে দুই প্রতিষ্ঠান সোনার অলংকারে হলমার্ক করে। সেগুলো হচ্ছে বাংলা গোল্ড ও ঢাকা গোল্ড। জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান কারিগর দিয়ে অলংকার তৈরির পর তা বাংলা গোল্ড বা ঢাকা গোল্ডে পাঠায়। তারা সেগুলো পরীক্ষা করে অলংকারে লেজার দিয়ে ২২ বা ২১ ক্যারেট খোদাই করে দেয়। তার সঙ্গে অনেক সময় অলংকারের গায়ে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের পুরো নাম বা আদ্যাক্ষরও থাকে।

সোনার অলংকার ক্রয়-বিক্রয়ে হলমার্কের পাশাপাশি ক্যাশ মেমো বাধ্যতামূলক করেছে জুয়েলার্স সমিতি। ক্যাশ মেমোতে সোনার অলংকারের ওজনের পাশাপাশি গুণগত মানও উল্লেখ থাকতে হয়। কোনো জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটালে জরিমানা মুখোমুখি হতে হয়। তারপরও ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরের নামীদামি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকিরা হলমার্ক ছাড়া অলংকার বিক্রি করছে।
দেওয়ান আমিনুল ইসলাম, সহসভাপতি, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সহসভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সোনার অলংকার ক্রয়-বিক্রয়ে হলমার্কের পাশাপাশি ক্যাশ মেমো বাধ্যতামূলক করেছে জুয়েলার্স সমিতি। ক্যাশ মেমোতে সোনার অলংকারের ওজনের পাশাপাশি গুণগত মানও উল্লেখ থাকতে হয়। কোনো জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটালে জরিমানা মুখোমুখি হতে হয়। তারপরও ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরের নামীদামি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকিরা হলমার্ক ছাড়া অলংকার বিক্রি করছে।

দেওয়ান আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, সোনার অলংকারের ক্রেতাদের সুরক্ষা নিশ্চিতে জুয়েলার্স সমিতির পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহযোগিতা দরকার। ঢাকাসহ সারা দেশে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষাগার স্থাপন করতে হবে। তাহলে তদারকি বাড়ানো সম্ভব হবে।