২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের পোশাক ও বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা আশা করেছিলেন, পোশাকশিল্পকে সহায়তা দেওয়া হবে। তাঁরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে রপ্তানি আয় বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে এ রকম ঘোষণা না আসায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
বিষয়টি হলো, চলতি অর্থ বছরের ১১ মাসে দেশের পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। কেবল মে মাসে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৭ শতাংশ। সে কারণে পোশাক ও বস্ত্র খাতের প্রত্যাশা ছিল, প্রস্তাবিত বাজেটে সহায়তার ঘোষণা আসবে।
আজ শনিবার বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন সংগঠনটির নেতারা। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিজিএমইএর সভাপতি এস এম মান্নান। রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে এই সংবাদ সম্মেলন হয়েছে।
তিন সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, তাদের প্রত্যাশা ছিল রপ্তানির এই অধোগতির মধ্যে বাজেটে পোশাকশিল্পের জন্য কিছু নীতিসহায়তা থাকবে। বিশেষ করে তাদের প্রত্যাশা ছিল, উৎসে কর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে এবং এটিকে চূড়ান্ত কর দায় হিসেবে গণ্য করা হবে। সংগঠন তিনটি বলেছেন, এ বিষয়ে তাদের গভীর প্রত্যাশা ছিল; সেই প্রত্যাশা এখনো আছে তাদের।
পাশাপাশি আরও কিছু প্রত্যাশা ছিল তিনটি সংগঠনের। যেমন, বাজেটে প্রণোদনার ওপর আয়কর অব্যাহতি, শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ভ্যাটমুক্ত রাখা, এইচএস কোড ও ওজনসংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা, ইআরকিউয়ের ওপর আয়কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, অগ্নি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম পুনঃস্থাপনের ক্ষেত্রে আমদানি কর রেয়াত, পোশাকশিল্পের ঝুট থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট এবং রিসাইকেল ফাইবার সরবরাহের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণা আসবে। কিন্তু এসব ঘোষণা না আসায় হতাশা প্রকাশ করেছে তিন সংগঠন।
সংগঠন তিনটি মনে করে, শিল্প টিকে থাকলে রাজস্ব আসবে, নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪৭ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের। ভবিষ্যতে রপ্তানি বৃদ্ধির আরও সম্ভাবনা আছে। সরকারের অব্যাহত সহযোগিতায় রপ্তানিতে কাঙ্ক্ষিত সম্ভাবনা কাজে লাগানো গেলে কর হার না বাড়িয়েও রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব। এতে অর্থনীতি বেশি উপকৃত হবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে।
তিনটি সংগঠনের দাবি, কাস্টমস আইন ২০২৩-এর ১৭১ ধারায় আমদানি করা পণ্যের এইচ এস কোড ভুল হলে যে ২০০ থেকে ৪০০ শতাংশ জরিমানার বিধান করা হয়েছে, সেটা তারা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে। ভুলের জন্য অতি উচ্চ হারে মাশুল নেওয়া কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়। পাশাপাশি নতুন কাস্টমস আইন বাস্তবায়নের আগে সব অংশীদারের সঙ্গে আলোচনা করার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ বলেছে, তাদের মূল দাবিগুলো আমলে নেওয়া না হলেও কিছু কিছু প্রস্তাব শিল্পের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সেগুলো হলো:
১. আগে ভ্যাট আপিলের ক্ষেত্রে দাবিকৃত অর্থের ২০ শতাংশ জমা দিতে হতো; সেটা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
২. ১৭টি বিভিন্ন টেক্সটাইল পণ্য রেয়াতি হারে আমদানির সুবিধা দেওয়া
৩. শিল্পকারখানায় ৫০ টন বা অধিক ক্ষমতার চিলার আমদানির ক্ষেত্রে সর্বমোট কর ১০৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। আগে এটি ১ শতাংশ রেয়াতি হারে আমদানির বিধান ছিল। তারা আবারও এই রেয়াতি হারে আমদানির অনুমোদন দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।
৪. নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসাহিত করতে ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া
৫. পলিয়েস্টার ফাইবার ও পেট চিপস উৎপাদনে ব্যবহৃত দুটি কাঁচামালের আমদানি শুল্ক ১০ ও ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী।