ফ্রিজে দীর্ঘদিন নিরাপদে খাবার সংরক্ষণের উপায়

ছবি সংগৃহীত

প্রতিদিন বাজারের ঝামেলা এড়াতে আমরা মাছ-মাংস কিনে ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করি। এর ফলে জীবন হয়েছে সহজ। কিন্তু সহজ জীবন যাপন করতে গিয়ে আমরা কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছি না তো? এমন প্রশ্ন প্রায়ই উঁকি দেয় মনে। কোন খাবার কত দিন ফ্রিজে রেখে খাওয়া যাবে, দীর্ঘদিন রেখে খেলে খাবারের পুষ্টিমান কতটুকু ঠিক থাকে—এমন ভাবনা অনেকের।

দীর্ঘদিন ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণ করলে সেই খাবার কতটা নিরাপদ থাকে, তা নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন র‌্যাংগস ই-মার্টের হেড অব মার্কেটিং সায়েদুর রহমান খান।

ফ্রিজে কাঁচা খাবার সংরক্ষণের পদ্ধতি এক রকম, আবার রান্না করা খাবার সংরক্ষণের পদ্ধতি ভিন্ন। এই দুই ধরনের খাবার ফ্রিজে আলাদা করে রাখা উচিত। আমরা অনেকেই একগাদা খাবার ফ্রিজে একসঙ্গে রাখি। খুব বেশি খাবার একসঙ্গে না রেখে দরকার অনুযায়ী ছোট ছোট ভাগ করে রাখতে হবে। একসঙ্গে অনেক খাবার রাখলে বের করে রান্নার আগে কাঁচা মাছ বা মাংস পুরোটাই ভিজিয়ে রাখতে হয়। এতে করে ব্যাকটেরিয়া ছড়ায়।

ফ্রিজে খাবার বক্স ভর্তি করে রাখার সময় বক্সগুলোর মধ্যে কিছুটা জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে। তাহলে ভেতরে বাতাস চলাচল করতে পারবে। ফ্রিজের তাপমাত্রার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী ফ্রিজের তাপমাত্রা কমিয়ে-বাড়িয়ে দিতে হবে।

অনেকের ফ্রিজে দেখা যায়, সংরক্ষিত কোরবানির ঈদের মাংস পরের বছরের কোরবানির ঈদ পর্যন্তও আছে। আমের মৌসুম শেষ হওয়ার ছয় মাস পরও আম থাকে ফ্রিজে। এভাবে দীর্ঘদিন রাখার ফলে খাবারের পুষ্টি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। মনে রাখতে হবে, মাংস দুই থেকে সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করাই যৌক্তিক। আর মাছ রাখা যেতে পারে সর্বোচ্চ ১৫ দিন। তবে মাছের মাথাগুলো খুব বেশি দিন ফ্রিজে না রেখে রান্না করে ফেলা ভালো।

ডিপ ফ্রিজে মাছ-মাংস কত দিন সংরক্ষণ করা যাবে এবং দীর্ঘদিন সংরক্ষণে কতটা নিরাপদ হবে—এ বিষয়ে সায়েদুর রহমান খান বলেন, ‘সতেজ খাবার খাওয়া সব সময়ের জন্যই ভালো। ডিপ ফ্রিজে মাছ ও মাংস অনেক দিন পর্যন্ত ভালো থাকলেও সময়ের সঙ্গে এগুলোর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর রান্না করলে স্বাদেরও তারতম্য হয়। কাঁচা মাছ-মাংস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে সেই সংরক্ষিত খাবারগুলো নিরাপদ থাকবে। বাড়াবে না স্বাস্থ্যঝুঁকি।’

আসুন জেনে নিই, সংরক্ষিত খাবার নিরাপদ রাখার উপায়—

*মাছ-মাংস ফ্রিজে একসঙ্গে না রেখে অল্প অল্প করে ভাগ করে রাখতে হবে। ফ্রিজ থেকে মাছ-মাংস বের করে বরফ গলানোর পর আবার ফ্রিজে ওঠানো একদমই উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে।

*মাংস বড় টুকরা করে রাখতে হবে। মাছ ভালো করে ধোয়া না হলে মাছের ফুলকা বা কানকোতে ব্যাকটেরিয়া থেকে যায়। এগুলো ঠান্ডা তাপমাত্রায় বংশবিস্তার করে মাছ নষ্ট করে দেয়। সবচেয়ে ভালো হয় বায়ুরোধী বাক্সে করে মাছ-মাংস ফ্রিজে রাখলে। এভাবে সংরক্ষণ করে মাছ সর্বোচ্চ ১৫ দিন এবং মাংস সর্বোচ্চ দুই-তিন মাস রেখে খাওয়া ভালো।

*মাছ-মাংসের মতো দুধও সংরক্ষণ করতে হয় ফ্রিজে। গরমে প্যাকেটজাত দুধ কেনার সময় অবশ্যই মেয়াদ দেখে নিতে হবে। ফ্রিজে সংরক্ষণ করলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই খেয়ে ফেলতে হবে।

* সবজি বাজার থেকে এনে ধুয়ে পানি শুকিয়ে ফ্রিজে রাখতে হবে। দুই থেকে তিন দিনের বেশি ফ্রিজে সবজি না রেখে টাটকা সবজি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

*সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ফ্রিজে সংরক্ষণের আগে দেখে নিতে হবে, খাবারটা ঠিক আছে কি না। এর সঙ্গে ফ্রিজে রাখার পর যদি কখনো কোনো খাবারের বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদ পরিবর্তন হয়ে যায়, তাহলে সেটা আর না খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ।

ফ্রিজ আছে আমাদের কাজটাকে সহজ করে তুলতে। তাই সচেতন হয়ে খাদ্য সংরক্ষণ করলে তা স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ হবে।