গরমে এক খামারে মারা গেছে দেড় লাখ মুরগি, অন্যান্য খামারের অবস্থা কী

যশোরে এক খামারে দেড় লক্ষাধিক মুরগি মারা গেছে গত এক সপ্তাহে। বাধ্য হয়ে অনেকে মুরগি বিক্রি করে দিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছেন খামার।

ব্রয়লার মুরগির খামারছবি: সংগৃহীত

সারা দেশে প্রচণ্ড গরমে মারা যাচ্ছে বিভিন্ন খামারের মুরগি। যশোরের একটি খামারে গত এক সপ্তাহের প্রচণ্ড গরমে দেড় লক্ষাধিক মুরগি মারা গেছে। যশোর ছাড়া কক্সবাজার, পাবনা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খামারেও মুরগি মারা যাচ্ছে। খামারিরা বলছেন, মুরগি মারা যাওয়ার পাশাপাশি ডিমের উৎপাদনও কমেছে।

যশোরের সবচেয়ে বড় মুরগির খামার আফিল অ্যাগ্রো লিমিটেড। এই খামারে সব মিলিয়ে ১৩ লাখ মুরগি ছিল। গত এক সপ্তাহে প্রচণ্ড গরমে এই খামারের দেড় লক্ষাধিক মুরগি মারা গেছে বলে খামারটির কর্মকর্তারা জানান।

আফিল অ্যাগ্রোর পরিচালক মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত রোববার পর্যন্ত ১ লাখ ৪০ হাজার ব্রয়লার ও ১৪ হাজার লেয়ার মুরগি মারা গেছে। গরমে খামারে মুরগি রাখা যাচ্ছে না। ফলে বিক্রির উপযোগী না হলেও অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্রয়লার মুরগি বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে আমাদের লোকসান হচ্ছে। খামারে মুরগি বাঁচিয়ে রাখতে গত এক সপ্তাহে অতিরিক্ত ৬০ লাখ টাকার ওষুধ ব্যবহার করতে হয়েছে।  

যশোরের এই খামারে ব্যাপকভাবে মুরগি মারা যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রাশিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে সব খামারেই কিছু মুরগি মারা যেতে পারে। কিন্তু আফিল অ্যাগ্রো খামারে ১ লাখ ৫৪ হাজার মুরগি মারা যাওয়ার কথা নয়। কারণ, এই খামার নিয়ন্ত্রিত খামার। তারপরও আমরা খোঁজখবর নিয়ে দেখব, কেন এত মুরগি মারা যাচ্ছে।’

যশোরের কেশবপুর পৌর এলাকার ইমন পোলট্রি ফার্মের উদ্যোক্তা মশিয়ার রহমান জানান, ‘মুরগি বাঁচাতে ফ্যান দিয়ে তাপ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তারপরও দেখা যাচ্ছে বিদ্যুতের লোডশেডিং হলেই দুই চারটি মুরগি মারা যাচ্ছে। এ কারণে বাধ্য হয়ে আট হাজার মুরগি বিক্রি করে দিয়েছি। এখন খামারে আছে দুই হাজার মুরগি।’

এ ছাড়া মুরগি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে পাবনার একাধিক খামারে। পাবনার চাটমোহরের শাহিন পোলট্রির স্বত্বাধিকারী শাহিন ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, গত এক সপ্তাহে তাঁর খামারের ৩০০ মুরগি মারা গেছে। এতে তিনি বেশ লোকসানে পড়েছেন। এ কারণে খামারে এখন নতুন করে মুরগি তুলছেন না।

এদিকে, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খামারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব এলাকার বিভিন্ন খামারেও প্রচণ্ড গরমে মুরগি মারা যাচ্ছে। এ চার জেলার সাতজন পোলট্রি খামারির সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর প্রতিবেদকের। এ সাত খামারে সব মিলিয়ে ২৭ হাজার মুরগি ছিল, যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মুরগি গত ১০ দিনে মারা গেছে বলে এসব খামার মালিকেরা জানিয়েছেন। তাঁরা আরও জানান, গরমের তীব্রতায় কমে গেছে ডিমের উৎপাদনও।

দেশের বিভিন্ন জেলার প্রান্তিক একাধিক খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুরগি মারা যাওয়ায় অনেকে মুরগি বড় হওয়ার অপেক্ষা না করে বিক্রি করে দিচ্ছেন। লোকসান দিয়েই খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে জানান তাঁরা।

প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, গরমে মুরগিদের বাঁচিয়ে রাখতে খামারিরা খামারে পানি ছিঁটাচ্ছেন। মুরগিকে বেশি বেশি পানি খাওয়াচ্ছেন। এরপরও মুরগি মারা যাচ্ছে। ছোট–বড় খামারে দিনে গড়ে ১০০ থেকে ১ হাজার মুরগি মারা যাচ্ছে—এমন খবরও আমরা পাচ্ছি।

অনেকে মুরগি বিক্রি করে দিয়ে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। গরমের এ তীব্রতা অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। মুরগির বাজারেও তার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে লোডশেডিং বাড়লে মুরগির খামারের পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) গত বছরের তথ্যানুযায়ী, দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে মুরগির খামার আছে ৮০ থেকে ৯০ হাজার। করোনার আগে ছিল ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশে প্রতিদিন ৪ কোটির বেশি ডিম ও ৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন মুরগির মাংস উৎপাদিত হয়। পোলট্রিশিল্পের বাজার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার।