চতুর্থ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রাথমিক অনুমোদন পেল মেঘনা গ্রুপ

কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলায় চতুর্থ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে মেঘনা গ্রুপছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে মেঘনা গ্রুপকে প্রাথমিক অনুমোদন বা প্রি-কোয়ালিফিকেশন লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। ‘তিতাস ইকোনমিক জোন’ হবে মেঘনা গ্রুপের মালিকানাধীন চতুর্থ অর্থনৈতিক অঞ্চল।

আজ বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বেজা জানিয়েছে, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বেজার সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালসহ বেজা ও মেঘনা গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এর আগপর্যন্ত তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন পেয়েছে মেঘনা গ্রুপ। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলায় কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছে তারা। কিছু শর্ত পূরণের পর চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে তিতাস অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প উৎপাদনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে। দেশের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে মেঘনা গ্রুপের অধীনে।

বেজা জানিয়েছে, কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে চালিভাঙায় প্রায় ১৬১ একর জমিতে তিতাস অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবস্থান। পরবর্তী সময়ে এটিকে ৪০০ একরে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রস্তাবিত এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে নানা ধরনের পণ্য উৎপাদনের জন্য শিল্প স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ অঞ্চল হিসেবে এটিকে গড়ে তুলতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে কারখানা ও প্রশাসনিক ভবন, পণ্যাগার, লজিস্টিক এলাকা, পানি ও বর্জ্য শোধনাগার, সড়ক এবং অন্যান্য স্থাপনা গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়া সবুজ এলাকা, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র থাকবে সেখানে।

প্রাথমিক অনুমোদন প্রদান অনুষ্ঠানে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘ঢাকার নিকটবর্তী স্থানে হওয়ায় তিতাস অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়া যাবে। বিশেষ করে সেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা জমি বরাদ্দে প্রাধান্য পাবে বলে আশা করছি।’

অনুষ্ঠানে মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে ও রপ্তানিযোগ্য পণ্য তৈরিতে মেঘনা গ্রুপ সুনামের সঙ্গে কাজ করে এসেছে। বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের মাধ্যমে মেঘনা গ্রুপ দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য একটি ভালো ক্ষেত্র তৈরিতে আগ্রহী।

তিতাস অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হবে বলে আশা করছে মেঘনা গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, অর্থনৈতিক অঞ্চলটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে সেখানে প্রায় ৬০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রাথমিকভাবে তিতাস অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিভিন্ন ভারী শিল্প, পেট্রোকেমিক্যাল পরিশোধনাগার, পেপার ও বোর্ড, ফার্মাসিউটিক্যাল, তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য, পিভিসি, তৈরি পোশাক, রাসায়নিক, প্লাস্টিক পণ্য, প্যাকেজিং ও ইস্পাতসহ বৈচিত্র্যময় পণ্যের কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

মেঘনা গ্রুপের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের শতভাগ, মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থনৈতিক অঞ্চলের ৮০ শতাংশ ও কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চলের ২৫ শতাংশ জায়গা বরাদ্দ সম্পন্ন হয়েছে। এসব অঞ্চলে মোট ২৭টি শিল্পকারখানা নির্মিত হয়েছে, যার মধ্যে ৭টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান। এসব অঞ্চলে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি ডলার।

দেশে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া ৮টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে। এসব অঞ্চলে মোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬২। এর মধ্যে ৩৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে উৎপাদন কার্যক্রম চলছে; আর ২৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন রয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ এসেছে ও ৪২ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। মোটরসাইকেল, সিমেন্ট, ভোজ্যতেল, ব্যাগ, পেপার, টিস্যু, খেলনা, বেভারেজ, খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন খাতের পণ্য তৈরি হচ্ছে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে।