নির্মাণ ও সেবা খাতের কারণে অর্থনীতির গতি কমেছে

পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্সে (পিএমআই) প্রকাশ অনুষ্ঠানে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানসহ অন্যরা। গতকাল গুলশানে এমসিসিআই কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

দেশের অর্থনীতির গতিশীলতা চলতি বছরের মার্চের তুলনায় এপ্রিলে কিছুটা কমেছে। এই সময়ে নির্মাণ ও সেবা খাতের গতি কমে যাওয়ায় সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যদিও এপ্রিলে কৃষি ব্যবসা ও পণ্য উৎপাদন খাতের গতি ঊর্ধ্বমুখী ছিল।

দেশে অর্থনীতির গতিশীলতা নির্ণয়ে প্রথমবারের মতো প্রকাশিত পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্সে (পিএমআই) এই চিত্র উঠে এসেছে। মূলত কৃষি ব্যবসা, উৎপাদন, নির্মাণ ও সেবা—এই চার খাতের ভিত্তিতে এপ্রিল মাসের এই পিএমআই করা হয়েছে। গত মাস, অর্থাৎ এপ্রিলে বাংলাদেশের পিএমআইয়ের মান বা স্কোর মার্চের তুলনায় ২ দশমিক ১ শতাংশ কমে হয়েছে ৬২ দশমিক ২ শতাংশ। মার্চে এই সূচকের মান ছিল ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে পিএমআই ছিল ৫৫। তবে জাতীয় নির্বাচনের পর অর্থনীতির গতিশীলতা বাড়তে থাকে। টানা দুই মাস বৃদ্ধির পর মার্চ থেকে সূচকের মান কমতে শুরু করে।

রাজধানীর গুলশানে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ঢাকার কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই পিএমআই  প্রকাশ করা হয়। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, ঢাকায় নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল। স্বাগত বক্তব্য দেন এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, পিএমআইয়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি কতটা গতিশীল, তা বোঝা যাবে। এই সূচকের মাধ্যমে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা কোন দিকে আরেকটু নজর দেওয়া প্রয়োজন, সে বিষয়ে ধারণা পাবেন। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা অর্থনীতির চাকা কতটা গতিশীল, তার ওপর ভিত্তি করে ব্যবসা ও বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে নিতে পারবেন।

পিএমআই চালু করেছে ব্যবসায়ীদের সংগঠন এমসিসিআই ও পলিসি এক্সচেঞ্জ। এতে সহযোগিতা করছে যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কার্যালয় (এফসিডিও) এবং সিঙ্গাপুর ইনস্টিটিউট অব পারচেজিং অ্যান্ড ম্যাটেরিয়ালস ম্যানেজমেন্ট (এসআইপিএমএম)।

পিএমআই প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এসআইপিএমএমের নির্বাহী পরিচালক স্টিভেন পোহ ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ। তাঁরা জানান, ১৯৪৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পিএমআই চালু করে। ১০-১৫ বছর আগে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশে এই সূচক চালু হয়েছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কৃষি, নির্মাণ, উৎপাদন ও সেবা খাতের ৪০০টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের মতামতের ভিত্তিতে পিএমআই প্রকাশ করা হয়েছে। সূচক তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাঁচামাল ক্রয়, পণ্যের ক্রয়াদেশ, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য নেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসের ৭ তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে এ সূচক প্রকাশ করা হবে।

পিএমআই মান শূন্য থেকে ১০০ নম্বরের মধ্যে পরিমাপ করা হবে। আগের মাসের তুলনায় স্কোর বা মান ৫০-এর বেশি হলে অর্থনীতির সম্প্রসারণ এবং স্কোর ৫০-এর নিচে হলে সংকোচন বোঝাবে। আর স্কোর ৫০ থাকলে বুঝতে হবে, সংশ্লিষ্ট খাতে ওই মাসে কোনো পরিবর্তন হয়নি।

এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, কৃষি ব্যবসা, নির্মাণ, উৎপাদন ও সেবা খাতের ওপর ভিত্তি করে পিএমআই করা হয়েছে। চলতি বছরের মার্চের তুলনায় এপ্রিলে কৃষি ব্যবসায় সূচক ৫৫ দশমিক ৭ থেকে বেড়ে ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে। একইভাবে উৎপাদন খাতের সূচক ৬৮ দশমিক ৪ থেকে বেড়ে ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ হয়। অন্যদিকে মার্চের তুলনায় এপ্রিলে নির্মাণ খাতের সূচক ৬৭ দশমিক ৭ থেকে কমে ৬৩ দশমিক ৮ শতাংশ হয়েছে। আর সেবা খাতের সূচক ৬৩ দশমিক ৬ থেকে ৫৬ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে। মূলত মৌসুম শেষ হওয়ায় নির্মাণ খাতে গতি কমেছে। রমজান মাস ও ঈদের দীর্ঘ ছুটির কারণে গত মাসে সেবা খাতের গতি কমেছে।

পিএমআই স্কোর ৬২ দশমিক ২ ভালো না মন্দ, এমন প্রশ্নের জবাবে এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘একদিকে ভালো। তবে বেশি খুশি হওয়ার কারণ নেই। কারণ, সম্প্রসারণ অর্থনীতির সর্বনিম্ন স্কোর হচ্ছে ৫০। সেই হিসাবে আমাদের স্কোর খুব বেশি নয়।’

এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির মতো অর্থনৈতিক সূচকের সঙ্গে পিএমআই সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তাঁর বিশ্বাস, এই সূচক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মহলের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হলে অগ্রাধিকারমূলক বাজার–সুবিধা থাকবে না। তখন অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া বা নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে তথ্য-উপাত্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

অনুষ্ঠানে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, পরিসংখ্যান থাকলে সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। যথাযথ পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে চান বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, সরকার ব্যবসার খরচ কমানোর চেষ্টা করছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন এমসিসিআইয়ের সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম, সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির, সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।