টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোড়াই শিল্পাঞ্চলে গ্যাসের চাপ কম থাকায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে কারখানার উৎপাদন। এরই মধ্যে কয়েকটি কারখানার কয়েকটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে অধিকাংশ কারখানার উৎপাদন বন্ধের শঙ্কা রয়েছে।
একাধিক শিল্পকারখানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত ঈদুল আজহার পর থেকেই এ এলাকায় পাইপ লাইনে গ্যাসের চাপ কম। আস্তে আস্তে এ সংকট আরও প্রবল হয়। এর মধ্যে গত ১৫ দিন ধরে এ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
সম্প্রতি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ধেরুয়া-সোহাগপুর এলাকার নাসির গ্লাস কারখানায় গিয়ে জানা যায়, গ্যাস-সংকটে প্রতিষ্ঠানটির চারটি ইউনিটের মধ্যে একটি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক জয়নাল আবেদীন জানান, বর্তমানে যে তিনটি ইউনিট সচল রয়েছে, সেখানেও অর্ধেক উৎপাদন চলছে।
গোড়াই শিল্পাঞ্চল এলাকার সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নাহিদ গ্রুপ অব কোম্পানিজের কারখানায় গিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির ১০টি ইউনিটে প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে দুটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ থাকায় প্রায় দুই হাজার শ্রমিক অলস সময় কাটাচ্ছেন। কারখানাটিতে তিনটি পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। কারখানাটির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) ইদ্রিস আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের তিনটি পাইপ লাইনের মধ্যে একটি দিয়ে গ্যাস সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। অন্য দুইটি লাইনে যেখানে ১৫০ পিএসআই গ্যাস পাওয়ার কথা, সেখানে মাত্র ১১-১২ পিএসআই গ্যাস পাচ্ছি। গত ঈদুল আজহার পর থেকে এ অবস্থা চলছে। এতে উৎপাদন কমে ৩০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। এতে আয়ও কমে যাচ্ছে। এমন এক পরিস্থিতিতে কীভাবে কারখানা চালু রাখব বুঝতে পারছি না।’
টাঙ্গাইলের পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কমফিট কম্পোজিট নিটের কারখানায়ও একই অবস্থা। কারখানাটির উপমহাব্যবস্থাপক (ডায়িং অ্যান্ড ফিনিশিং) মো.আবদুল বাসিত বলেন, গত ১২ দিন ধরে কারখানায় গ্যাস–সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে আগে দিনে যেখানে ৪৫ টন কাপড় তৈরি হতো, সেখানে এখন তৈরি হচ্ছে গড়ে ৫ থেকে ৭ টন কাপড়। এ অবস্থা আরও কয়েক দিন চললে উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হবে। দেখা যায়, পোশাক কারখানার সবগুলো যন্ত্রই বন্ধ। শ্রমিকেরা যে যার মতো গল্প-গুজব করে অলস সময় পার করছেন।
কারখানাটির পোশাক ইউনিটের সুপারভাইজার মো.সুজন মিয়া জানান, শ্রমিকেরা প্রতিদিনই সময় মতো কাজে আসছেন। কিন্তু গ্যাস নেই বলে কাজ বন্ধ। তাই বেশির ভাগ শ্রমিক অলস সময় কাটাচ্ছেন।
প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক অমল কৃষ্ণ সরকার বলেন, ‘গত ২৩ তারিখ বিকেল থেকে হঠাৎ গ্যাস জিরো পিএসআইয়ের কাছাকাছি চলে আসে। তিতাসের সঙ্গে আমাদের চুক্তি ১০ পিএসআই গ্যাস সরবরাহের। কিন্তু সেখানে এক, দেড় কিংবা দুই পিএসআই গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে।’
মির্জাপুর, কালিয়াকৈর ও কোনাবাড়ী ইন্ডাস্ট্রিজ ফোরামের সভাপতি ও উত্তরা স্পিনিং মিলসের প্রকল্প পরিচালক বিধান সরকার বলেন, গোড়াই শিল্পাঞ্চলে সুতা ও পোশাকের প্রায় ২০টি কারখানায় ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। গ্যাস–সংকটের দ্রুত সমাধান না হলে অনেক কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে। তাতে অনেক শ্রমিক বেকার হবেন। এতে দেশের পোশাকশিল্পের ওপরও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির টাঙ্গাইলের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গ্যাসের স্বল্পতার কারণে সরকার রেশনিং পদ্ধতিতে গ্যাস সরবরাহ করছে। এতে কোনো স্থানে একসময় চাপ কমে যাচ্ছে। একসময় ঠিক হচ্ছে। এ নিয়ে আমাদের তেমন কিছু করার নেই।’