অনেক শ্রমিক তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত: মার্কিন রাষ্ট্রদূত

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের অনেক শ্রমিক তাঁদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। তিনি বলেন, ‘গত এক দশকে একাধিকবার শ্রম আইন ও বিধিমালা সংশোধন করা হয়েছে। তারপরও আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ, অনেক শ্রমিক তাঁদের মৌলিক অধিকার—শ্রমিক সংঘ করার স্বাধীনতা ও দর–কষাকষির মাধ্যমে দাবি আদায় থেকে বঞ্চিত। রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেডে) শ্রমিকেরাও তা পারেন না।’

ঢাকায় দিনব্যাপী সাসটেইনেবল অ্যাপারেল ফোরাম নামের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস এসব কথা বলেন। রাজধানীর র‌্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে আজ বৃহস্পতিবার এই সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সম্মেলনস্থলে টেকসই পণ্যের প্রদর্শনীতে অংশ নেয় ১১ প্রতিষ্ঠান।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, শ্রমিকেরাই টেকসই শিল্প গড়তে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন।’ টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পোশাকশিল্পের জন্য শ্রম অধিকার, বিশেষ করে শ্রমিকের সংগঠন করা ও দর–কষাকষির স্বাধীনতা, ভয়ভীতিহীন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের ওপর জোর দেন তিনি।

পিটার ডি হাস আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হবে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেশি মূল্য সংযোজন ও বেশি দামের পোশাক উৎপাদনের পাশাপাশি শ্রমিককে সুরক্ষা দিতে হবে। নিরাপদ কর্মপরিবেশের পাশাপাশি শ্রমিকের কণ্ঠস্বর শক্তিশালী হলে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজ হবে। যদিও এই জায়গায় আমরা খুব ধীরগতির উন্নতি দেখছি।’

অনুষ্ঠানে পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘ফ্যাশন বিশ্বে বর্তমানে টেকসই ব্যবসা পরিবেশ নিশ্চিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। গত কয়েক বছরে বেশ কিছু নিয়মনীতি এসেছে। ইইউ নতুন করে নিয়মনীতি করতে যাচ্ছে, যেখানে পরিবেশের পাশাপাশি মানবাধিকারসংক্রান্ত বিষয়াদিও বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। নিয়মনীতির প্রয়োজন আছে, তবে আমরা দেশ বা কোম্পানিভেদে ভিন্ন ভিন্ন নিয়মনীতি চাই না। আমরা চাই, বিশ্বের সব পোশাক উৎপাদক দেশের জন্য একই নিয়মকানুন প্রযোজ্য হবে। তাহলেই সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হবে।’ তিনি আরও বলেন, টেকসই ব্যবসা পরিবেশ নিশ্চিতে শুধু সরবরাহকারী নয়, সব পক্ষকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সেলিম রহমান, ইপিক গ্রুপের রঞ্জন মাথানি প্রমুখ। পরে বিভিন্ন অধিবেশনে বক্তব্য দেন শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তাফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলো নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে উৎপাদনব্যবস্থায় পুনঃপ্রক্রিয়াজাত কাঁচামালের ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য হারে কার্বন নিঃসরণ ও পানির ব্যবহার কমানোর মতো লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। যেমন এইচঅ্যান্ডএম, ইন্ডিটেক্সের মতো ব্র্যান্ড ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের ব্যবসায় ৪৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৬০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ তো সরবরাহব্যবস্থায় হয়। ফলে যারা ক্রেতাদের লক্ষ্য অনুযায়ী নিজেদের উৎপাদনব্যবস্থা টেকসই করতে পারবে না, তারা ঝরে পড়বে। টেকসই সরবরাহব্যবস্থা নিশ্চিত করা না গেলে ভবিষ্যতে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকের ব্যবসা টিকবে না।