রিহ্যাবের চার দিনব্যাপী আবাসন মেলা শুরু
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) আয়োজনে আজ বুধবার থেকে চার দিনব্যাপী আবাসন মেলা শুরু হয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ মেলা। এবারের মেলায় ২২০টি স্টলে আবাসন, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রীর প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবাগুলো প্রদর্শন করছে।
আজ মেলা উদ্বোধনের পরপরই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জন্য তা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। অন্য দিনগুলোয় প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা ঢুকতে পারবেন। মেলায় একবার প্রবেশের সিঙ্গেল টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা। তবে পাঁচবার প্রবেশের মাল্টিপল টিকিটের দাম ধরা হয়েছে ১০০ টাকা। এবারের রিহ্যাব মেলায় ২০টি প্রতিষ্ঠান স্পনসর করেছে।
মেলায় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই মূল্যছাড়সহ বিভিন্ন ধরনের অফার দিচ্ছে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে আবাসন মেলার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রিহ্যাবের সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে রাজউক চেয়ারম্যান মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সংশোধনের সুযোগ আরও আছে। তিনি বলেন, ‘ড্যাপ করতে গিয়ে রাজউককে অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আপনারা (আবাসন ব্যবসায়ী) একমত না হলেও মেনে নিয়েছেন। ড্যাপ সংশোধন এটাই শেষ নয়। এটাকে আরও উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে।’
আবাসন ব্যবসায়ীদের নিয়ম মেনে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘আসুন, ড্যাপ মেনে সঠিক নিয়মে কাজগুলো করি। রাজউক করবে। আপনারাও করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রাজউক থেকে কোনো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে চাই না। রাজউক ও আবাসন প্রতিষ্ঠান সততার সঙ্গে কাজ করলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার প্রয়োজনও হবে না।’
রিয়াজুল ইসলাম বলেন, একটি নগর গড়ে তুলতে ভবন নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত উদ্যোক্তা ও নির্মাণকারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যদি কোনো প্লটমালিকদের নিজের টাকায় বাড়ি নির্মাণ করতে বলা হয়, তাহলে ঢাকা শহরে কয়টি ভবন আদৌ তৈরি হতো, তা ভাবনার বিষয়। দীর্ঘদিন ধরে আবাসন খাত নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে একটা অবস্থানে পৌঁছেছে। বর্তমানে কিছুটা মন্দা থাকলেও এটি স্থায়ী নয়।
মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, আবাসন প্রতিষ্ঠান শুধু নিজেদের ব্যবসার কথা ভাবে। আমি বিশ্বাস করি, ধারণাটি সঠিক নয়। হয়তো হাতে গোনা কয়েকজন ব্যতিক্রম থাকতে পারেন। তবে সবাই একটি সুন্দর, পরিকল্পিত ও নিয়মের মধ্যে গড়ে ওঠা শহরই চান।’
জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোছা. ফেরদৌসী বেগম বলেন, দেশের অনেক মানুষ থাকলেও জমির স্বল্পতা আছে। অর্থায়নের সমস্যা আছে। রিহ্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো আবাসনের চাহিদা মেটাতে কাজ করছে। তবে সম্মিলিতভাবে কাজ না করলে আবাসন সমস্যার সমাধান হবে না। তিনি আরও বলেন, ফ্ল্যাট ও প্লট হস্তান্তরে অনেক গরমিল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
ড্যাপ সংশোধনের জন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রিহ্যাবের সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘ড্যাপ সংশোধনের কারণে আমরা মনে করছি, আবাসন খাতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ফিরে আসবে। রাজউকের কাছে এখন আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, ভবনের নকশা পাস করার ক্ষেত্রে যেন কোনো ধরনের দীর্ঘসূত্রতা না হয়।’
রিহ্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, রিহ্যাবের আবাসন মেলায় একই ছাদের নিচে ফ্ল্যাট ও প্লটের পাশাপাশি নির্মাণসামগ্রী, গৃহঋণের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে। ফলে ক্রেতারা আগ্রহ নিয়ে এই মেলার জন্য অপেক্ষা করেন। তিনি আরও বলেন, ‘একসময় রাজউক কার্যালয়ে যাওয়া মুশকিল ছিল, তবে এখন যাওয়া যায়। আমাদের প্রত্যাশা ভবিষ্যতেও এটি বজায় থাকবে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রিহ্যাব সহসভাপতি মোহাম্মদ আক্তার বিশ্বাস, পরিচালক মিরাজ মুক্তাদির, সুরুজ সরদার প্রমুখ বক্তব্য দেন। উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি আবদুল লতিফ, আবদুর রাজ্জাক, দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ। উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে অতিথিরা মেলা ঘুরে দেখেন।