অগ্রিম কর কমানো আর সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ

ওয়েবিনারে আলোচকেরা।
ঢাকা চেম্বারের সৌজন্যে

আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে অগ্রিম কর কমানোর পাশাপাশি তা আদায়ের ব্যবস্থা সহজ করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেছেন, করোনার প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে স্থবিরতা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় করহার বাড়ানোর পরিবর্তে রাজস্ব আহরণ ঠিক রাখতে এর আওতা বাড়াতে হবে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল ও চ্যানেল ২৪–এর যৌথ আয়োজনে আজ শনিবার অনুষ্ঠিত ‘প্রাক্‌–বাজেট আলোচনা: অর্থবছর ২০২১-২২’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বক্তারা বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোরও প্রস্তাব করেন।  

অতিক্ষুদ্র, কুটির ও এসএমই (সিএমএসএমই) খাতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা সঠিকভাবে বিতরণ হয়নি। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক যেমন আগ্রহী নয়, তেমনি গ্রাহকেরাও যথেষ্ট দক্ষ নয়। এই খাতের জন্য ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করতে পারে। সিএমএসএমইর জন্য বাজেটে বিস্তারিত পরিকল্পনা দরকার।
হোসেন জিল্লুর রহমান,চেয়ারপারসন, ব্র্যাক

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান এবং ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান। আর্থিক খাত, কর ও ভ্যাট, শিল্প-বাণিজ্য এবং অবকাঠামো—এই চার পর্বে আলোচনা হয়। অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস বিভাগের সদস্যরা অংশ নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব শোনেন ও মতামত রাখেন।
ওয়েবিনারে মসিউর রহমান বলেন, অর্থনীতির অগ্রগতি বা প্রবৃদ্ধির জন্য সরকারের রাজস্ব দরকার। রাজস্ব না বাড়লে সরকার যথাযথ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করতে পারবে না। অর্থনীতি সম্প্রসারিত ও দক্ষ না হলে রাজস্ব আদায়ও কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ে না । তিনি বলেন, যাঁরা কর সুবিধা চান, তাঁরা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ব্যাহত না করে কী হারে রাজস্ব আয় বাড়ানো উচিত, তার একটা ধারণা সরকারকে দিতে পারেন।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, করোনার কারণে বর্তমানে একটা বিশেষ সময় যাচ্ছে। এর ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রভাব আছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা পুনরুদ্ধারে গেলেও তারা আবার খারাপ অবস্থায় পড়ে গেছে। এ জন্য আগামী বাজেটে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বড় উদ্যোগ থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, অতিক্ষুদ্র, কুটির ও এসএমই (সিএমএসএমই) খাতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা সঠিকভাবে বিতরণ হয়নি। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক যেমন আগ্রহী নয়, তেমনি গ্রাহকেরাও যথেষ্ট দক্ষ নয়। এই খাতের জন্য ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করতে পারে। সিএমএসএমইর জন্য বাজেটে বিস্তারিত পরিকল্পনা দরকার। তিনি শহরের দরিদ্রদের সামাজিক নিরাপত্তায় অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো এবং শহরের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দেন।

সরকার খেলাপি ঋণ আদায়ে একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি করতে যাচ্ছে। এই কোম্পানি সরকারি–বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে করা হোক।
মমিনুল ইসলাম,ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আইপিডিসি

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। তিনি বলেন, করোনার মধ্যেও দেশের অর্থনীতি এগিয়েছে। এ অগ্রগতি ধরে রাখতে ব্যবসাবান্ধব রাজস্বব্যবস্থা দরকার। অর্থনীতি পুনরুদ্ধার মাথায় রেখে বাজেট সাজাতে হবে। আয়কর ও ভ্যাট হতে হবে ব্যবসাবান্ধব।
আলোচনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিনুল ইসলাম বলেন, বন্ডের সুদের ওপর করহার কমানো হলে করপোরেট বন্ড মার্কেট দাঁড়াবে। এতে ব্যাংকের ওপর চাপ কমে আসবে। তিনি বলেন, সরকার খেলাপি ঋণ আদায়ে একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি করতে যাচ্ছে। এই কোম্পানি সরকারি–বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে করা হোক।

ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির করহারের ব্যবধান বাড়াতে হবে।
আসিফ ইব্রাহিম,সভাপতি, সিএসই

বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয় বলেন, বন্ডের সুদহার কমানো এবং ঋণের সুদে প্রণোদনা দেওয়া উচিত। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমকে আরও প্রসারিত করে এসএমই খাতকে আরও সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেন।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির করহারের ব্যবধান বাড়াতে হবে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার আরও কমানো যেতে পারে।
এনবিআরের সদস্য (শুল্কনীতি) সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া বলেন, মোট ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে। এ বিষয়েও ব্যবসায়ীদের ভাবতে হবে। তিনি বলেন, এসএমই, কৃষি, প্রাণিসম্পদ সরকারের অগ্রাধিকার খাত। ফলে এসব খাতে আমদানি পর্যায়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা থাকবে।

বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, তৈরি পোশাক খাতে সবুজ কারখানায় বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিচ্ছে। পরিবেশ রক্ষায় ইটিপি জরুরি। তিনি পোশাক কারখানার ইটিপির জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় ইটিপির মেশিনারিজ আমদানির সুবিধা চান।
বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিমউদ্দিন বলেন, ক্ষুদ্র, কুটির ও এসএমই খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখছে। এ খাতের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। কর কম আদায় হলেও এই খাতে এনবিআরের লোকবল বেশি ব্যবহার হয়। এসব খাতে নিজস্ব মূল্যায়নের ভিত্তিতে কর প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। অর্থায়ন সমস্যা দূর করা না গেলে সিএমএসএমই খাতকে ধরে রাখা যাবে না।