অনলাইনেই মিলবে পোশাকের ক্রয়াদেশ

তৈরি পোশাকশিল্পে নতুন ক্রেতা কিংবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করা এমনিতেই বেশ ঝক্কির কাজ। ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বেলায় সেটি আরও কঠিন। অবশ্য সেই অবস্থা পরিবর্তনে তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতাকে এক ছাদে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছে মার্চেন্ট বে। প্ল্যাটফর্মটিতে সংযুক্ত থাকা বাংলাদেশের কারখানাগুলো অনলাইনেই দেশি-বিদেশি ক্রেতা খুঁজে নিতে পারবে। ক্রেতারাও চাইলে অনলাইনেই ক্রয়াদেশ নিতে পারবেন।

পোশাক রপ্তানির সঙ্গে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে যুক্ত সায়েম গ্রুপের উদ্যোগে মার্চেন্ট বে চালু হয়েছে। ই-বিটুবি এই প্ল্যাটফর্মে এখন পর্যন্ত পোশাক ও বস্ত্র খাতের ১ হাজার ১৭০ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৭০০ পোশাক কারখানা। বাকিগুলো বস্ত্র ও সরঞ্জাম উৎপাদনকারী কারখানা ও পাইকারি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে হাজারখানেক দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছে ৩০০ প্রতিষ্ঠান।

মার্চেন্ট বের কার্যক্রম নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবরার হোসেনের সঙ্গে সম্প্রতি প্রথম আলোর কথা হয়। তিনি জানান, কয়েক বছর ধরেই ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের ব্যবসার ধরন বদলে যাচ্ছে। নতুন নতুন উদ্ভাবনের কারণে দ্রুত ফ্যাশনে পরিবর্তন আসছে। ক্রেতারা নতুন প্রতিষ্ঠানে ক্রয়াদেশ দেওয়ার আগে অনলাইনে দেখে নিতে চান। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের একটি প্রোফাইল থাকলে ক্রেতা পেতে সহায়ক হয়।

মার্চেন্ট বের ওয়েবসাইটে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের একটি প্রোফাইলের পাশাপাশি কয়েকটি পণ্যের ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য থাকে। তাতে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই তাদের কাঙ্ক্ষিত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান খুঁজে নিতে পারবে। ক্রেতা চাইলে প্ল্যাটফর্মটির মাধ্যমে সরাসরি ক্রয়াদেশ দিতে পারবেন।

সেই ধারণা নিয়েই এক বছর ধরে কাজ করার পর গত মাসে আত্মপ্রকাশ করে মার্চেন্ট বে। প্ল্যাটফর্মটিতে যুক্ত হতে সরবরাহকারী ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে অনলাইনেই বিনা মূল্যে নিবন্ধন করতে হয়। পরে মার্চেন্ট বের কর্মীরা সেগুলো যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। ভেরিফায়েড সরবরাহকারী হলে বার্ষিক ফি ২০ হাজার টাকা।

মার্চেন্ট বের ওয়েবসাইটে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের একটি প্রোফাইলের পাশাপাশি কয়েকটি পণ্যের ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য থাকে। তাতে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই তাদের কাঙ্ক্ষিত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান খুঁজে নিতে পারবে। ক্রেতা চাইলে প্ল্যাটফর্মটির মাধ্যমে সরাসরি ক্রয়াদেশ দিতে পারবেন। আবার মার্চেন্ট বে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেও ক্রয়াদেশ দেওয়ার সুযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি অনেকটা বায়িং হাউসের মতো ক্রেতার হয়ে কাজ করবে।

তৈরি পোশাকের বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের অনেকগুলোর লিয়াজোঁ অফিস আছে ঢাকায়। তারা সরাসরি ক্রয়াদেশ দেওয়া থেকে শুরু করে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। ফলে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের ক্রয়াদেশ পাওয়া যাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আবরার হোসেন বলেন, তাঁরা ক্রয়াদেশ না দিলেও অনলাইনে কাপড় ও সরঞ্জামের দরদাম যাচাই করার সুযোগ পাবে। তাতে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ক্রয়াদেশ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে ছোট ও মাঝারি কারখানার সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে অনেক ছোট ছোট বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ৫০০ থেকে ২ হাজার পিস পোশাক উৎপাদনের ক্রয়াদেশ দিচ্ছে। তবে ভালো দাম দিয়েও অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান খুঁজে পেতে সমস্যায় পড়ে। সেই ক্রয়াদেশ পেতে মার্চেন্ট
বে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন আবরার হোসেন।

মার্চেন্ট বে প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক ক্রয়-বিক্রয় শুরু হয়নি এখনো। আগামী এক বছর তারা ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে আস্থা অর্জনে জোর দেবে।
মার্চেন্ট বের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবরার হোসেন

কেবল বিদেশি নয়, দেশীয় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান নিয়েও কাজ করছে মার্চেন্ট বে। তাদের জন্য পুরান ঢাকার ইসলামপুরের মতো পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরাও নতুন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হচ্ছেন। ইতিমধ্যে মার্চেন্ট বের মাধ্যমে স্থানীয় ক্রেতা ও বিক্রেতারা বেচাকেনা শুরু করেছেন।

আপাতত পোশাকশিল্পের সরবরাহকারী ও ক্রেতাদের নিয়ে কাজ করলেও ভবিষ্যতে পাট, চামড়া, জুতাসহ বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করবে মার্চেন্ট বে। এ ছাড়া কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে ও ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল সেবা দেবে প্রতিষ্ঠানটি।

আবরার হোসেন জানান, মার্চেন্ট বে প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক ক্রয়-বিক্রয় শুরু হয়নি এখনো। আগামী এক বছর তারা ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে আস্থা অর্জনে জোর দেবে। কোনো পক্ষই যাতে প্রতারিত না হয়, সে জন্য কঠোর তদারকি ব্যবস্থাও রয়েছে।