উড্ডয়ন বাড়াতে নতুন প্রকল্প

  • আকাশপথের যাত্রা বাড়াতে চায় সরকার। এ জন্য সৈয়দপুর, রাজশাহী ও যশোর বিমানবন্দরের রানওয়ে উন্নয়নে নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

  • সৈয়দপুর, রাজশাহী ও যশোর বিমানবন্দরের রানওয়েতে নতুন ঢালাই হবে।

  • রাতে ফ্লাইট চলাচলের উপযোগী বাতি লাগানো হবে।

  • উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ করা হবে।

আকাশপথের যাত্রা উৎসাহিত করা হচ্ছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের ফলে আকাশপথে উড্ডয়ন বেড়েছে।

আকাশপথের যাত্রা উৎসাহিত করা হচ্ছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের ফলে আকাশপথে উড্ডয়ন বেড়েছে। তাতে ব্যস্ততা বাড়ছে অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর। যাত্রীসংখ্যাও বাড়ছে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের কয়েকটি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল নির্মাণের কাজ চলছে।

এই অবস্থায় তিনটি বিমানবন্দরের রানওয়ে উন্নয়নের আরেকটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই তিন বিমানবন্দর হচ্ছে যশোর, সৈয়দপুর ও রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দর। এ জন্য ৫৬৭ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এতে ওই তিন বিমানবন্দরে ফ্লাইটের সংখ্যা যেমন বাড়বে, তেমনি রাতেও উড়োজাহাজ ওঠানামা করা সম্ভব হবে।

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘যশোর, সৈয়দপুর ও রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের রানওয়ে সারফেসে অ্যাসফল্ট উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এই প্রকল্পের আওতায় যশোরে ২৮০ মিলিমিটার, সৈয়দপুরে ২১০ মিলিমিটার ও রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের ২৭০ মিলিমিটার পুরু অ্যাসফল্ট কংক্রিট ওভারলে করা হবে। এর মানে, নতুন করে রানওয়ের ঢালাই দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি এসব বিমানবন্দরে এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং (এজিএল) সিস্টেমের আপগ্রেডেশন, রানওয়ে সাইড-স্ট্রিপসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং প্রতিটি বিমানবন্দরের জন্য পর্যাপ্ত ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি করে আধুনিক অগ্নিনির্বাপক গাড়ি কেনা হবে।

রানওয়ে উন্নয়নের এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। গত তিন দশকে ওই তিন বিমানবন্দরের রানওয়ের নুড়ি পাথর ওঠে যাওয়াসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরও বেশি উড়োজাহাজ ওঠানামার জন্য উপযোগী নয়। এসব কারণে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, করোনার কারণে বিমান চলাচল কমেছে। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে যশোর বিমানবন্দরে প্রতিদিন ৮-৯টি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ওঠানামা করে। এই বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৮ হাজার ৬০০ ফুট। সৈয়দপুর বিমানবন্দরে দৈনিক গড়ে ১৫টি উড়োজাহাজ ওঠানামা করে। এই বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৮০০ ফুট। রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে দিনে চারটি ফ্লাইট চলে। রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৬০০ ফুট।
একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী অভ্যন্তরীণ পথে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আসাদুল ইসলাম আরও বলেন, মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হচ্ছে। সারা দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চলও হচ্ছে।
পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম

বর্তমানে ভুটান ও নেপাল সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে ‘ট্রানজিট হাব’ হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। এই বিমানবন্দরের মাধ্যমে পণ্য আনা-নেওয়ায় আগ্রহী ওই দুটি দেশের ব্যবসায়ীরা। উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে দিন দিন এই বিমানবন্দরের গুরুত্ব বাড়ছে। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গের এনজিও কার্যক্রম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় সৈয়দপুর ও রাজশাহী বিমানবন্দরের যাত্রী চলাচল আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।

গতকাল একনেক সভায় মোট চারটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। এই প্রকল্পগুলোতে মোট ১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা খরচ করা হবে। অন্য প্রকল্পগুলো হলো ৩০১ কোটি টাকার ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন কদমরসুল অঞ্চলে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন; এবং ২৫১ কোটি টাকার ভূ–উপরিস্থ পানি উন্নয়নের মাধ্যমে বৃহত্তর দিনাজপুর ও জয়পুরহাট জেলায় সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প।

একনেক সভা শেষে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে প্রকল্পের সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের সামনে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম। তিনি জানান, একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী অভ্যন্তরীণ পথে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আসাদুল ইসলাম আরও বলেন, মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হচ্ছে। সারা দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চলও হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ পথে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ছে। তাই বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত আলো বা লাইটিং নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, যেন রাতেও ফ্লাইট ওঠানামা করতে পারে।

এদিকে সারা দেশের কয়েকটি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের উন্নয়নের কাজও চলমান আছে। এ জন্য একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বেবিচক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ। এ ছাড়া চট্টগ্রামের হজরত শাহ আমানত বিমানবন্দরের রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ে সম্প্রসারণের কাজ চলছে। অন্যদিকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কক্সবাজার, সৈয়দপুর, যশোর বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণের কাজ চলমান। এসব প্রকল্প শেষ হলে একদিকে আগের চেয়ে বেশি ফ্লাইট চলাচল করতে পারবে, আবার আধুনিক যাত্রীসেবা উন্নত হবে।

এই প্রকল্পসহ গতকাল একনেক সভায় মোট চারটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। এই প্রকল্পগুলোতে মোট ১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা খরচ করা হবে। অন্য প্রকল্পগুলো হলো ৩০১ কোটি টাকার ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন কদমরসুল অঞ্চলে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন; এবং ২৫১ কোটি টাকার ভূ–উপরিস্থ পানি উন্নয়নের মাধ্যমে বৃহত্তর দিনাজপুর ও জয়পুরহাট জেলায় সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প। মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে বাড়তি ৫৪৯ কোটি টাকা খরচের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফলে এই প্রকল্পে খরচ দাঁড়াল ২ হাজার ১০৯ কোটি টাকা।