এত প্রবাসী আয় কোথা থেকে আসছে

  • বিশ্লেষকেরা বলছেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণ হলো, দুরবস্থার মধ্যে প্রবাসী শ্রমিকদের বেশি টাকা পাঠানোর প্রবণতা।

  • গত বছরের এপ্রিল মাসে বিশ্বব্যাংক প্রাক্কলন করেছিল, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় প্রায় ২০ শতাংশ হ্রাস পাবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, মহামারির মধ্যে দেশে প্রবাসী আয় আসা কমেনি, বরং বেড়েছে।

  • বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন ছিল, ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার রেমিট্যান্স ২২ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পাবে।

গত বছরের এপ্রিল মাসে বিশ্বব্যাংক প্রাক্কলন করেছিল, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় প্রায় ২০ শতাংশ হ্রাস পাবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, মহামারির মধ্যে দেশে প্রবাসী আয় আসা কমেনি, বরং বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের এই প্রাক্কলনের কারণ ছিল এই যে প্রবাসী শ্রমিকেরা যেসব দেশে কাজ করছেন, সেসব দেশের অবস্থাও ভালো নয়। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, উল্টো রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণ হলো, দুরবস্থার মধ্যে প্রবাসী শ্রমিকদের বেশি টাকা পাঠানোর প্রবণতা।

এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন ছিল, ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার রেমিট্যান্স ২২ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পাবে। কিন্তু দেখা গেল, ভারতে ৩২ শতাংশ হ্রাস পেলেও বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে প্রবাসী আয় বেড়েছে। বাংলাদেশে বেড়েছে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কায় ৪ শতাংশ। গতকাল রোববার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক কমিটি আয়োজিত ‘সাম্প্রতিক রেমিট্যান্স প্রবাহ: এত টাকা আসছে কোথা থেকে’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তাঁর সংশয়, ২০২০ সালে দেশে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পেলেও ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত রাখা কষ্টকর হবে। যাঁরা দেশে ফেরত এসেছেন বা আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁরা অনেকেই সরকারঘোষিত প্রণোদনার আওতায় আসছেন না। তিনি এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ ছাড়া সরকার ফেরত আসা প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, সেগুলোর আরও প্রচারণা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

প্রবাসী আয়ের ওপর উপস্থাপনা দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, প্রবাসী আয় প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে যে দরিদ্র পরিবারের উন্নয়ন হচ্ছে, তা ভাবা সঠিক হবে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই প্রবাসী আয়ের ৫০ শতাংশের বেশি আসে দারিদ্র্যসীমার ওপরে থাকা মানুষের কাছে। বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাগজপত্র দেখতে না চাওয়া, সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে বিকাশসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের অতিরিক্ত প্রণোদনা ইত্যাদি।

দেশে ফেরত আসা প্রবাসীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এই সংলাপে অংশ নেন। তাঁরা বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় পাঠানো হলে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হবে—সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রবাসী আয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

সরকার ফেরত আসা শ্রমিকদের জন্য ঋণের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এই ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা অসুবিধার কথা তুলে ধরেন তাঁরা। এ ছাড়া প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের ঋণসুবিধার এই তথ্য অনেকেই পাননি বলে জানান তাঁরা। কর্মক্ষেত্রে ফিরে যেতেও নানা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন তাঁরা।

অনুষ্ঠানে আরও অংশ নেন সেন্টার ফর নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিস (এনআরবি) সভাপতি এম এস সেকিল চৌধুরী, রামরুর চেয়ারম্যান তাসনিম সিদ্দিকী, ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান প্রমুখ।