এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে প্রতারণা

পণ্য ছাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আদলে ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে এক আমদানিকারকসহ দুজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার বন্দর থানায় এ মামলা করেন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সহকারী শুল্ক কর্মকর্তা সুজয় দেবনাথ।
মামলায় ঢাকার মৌলভীবাজারের আমদানিকারক সিয়াম এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মো. জলিল এবং তাঁর পক্ষে পণ্য খালাসে নিয়োজিত চট্টগ্রামের সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান খান এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার গোলাম মওলা খানকে আসামি করা হয়েছে।

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নিজাম উদ্দিন আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, প্রতারণাসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়েছে। এটি তদন্ত করা হচ্ছে।

যেভাবে জালিয়াতি

কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, মালয়েশিয়া থেকে গত এপ্রিলে আনা চালানটির নথিপত্রে ছিল চিনাবাদাম ও জলপাই তেল (অলিভ ওয়েল)। চালানটি পরীক্ষা করে পাওয়া যায় ২১ টন শিশুখাদ্য। মিথ্যা ঘোষণার অপরাধে আমদানিকারককে মোট ৭৬ লাখ টাকা জরিমানা করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। জরিমানা দিয়ে খালাস করতে হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ক্লিয়ারেন্স পারমিট’ বা ছাড়পত্র নিতে হবে—এমন আদেশও দেওয়া হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানিনীতি আদেশ ভঙ্গ করায় এই ছাড়পত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতা জুড়ে দেওয়া হয় সেখানে। তবে এখানেও জালিয়াতির আশ্রয় নেয় মেসার্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজ। কাস্টমস হাউসে জমা দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জাল ছাড়পত্র। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের আদলে তৈরি করেন ভুয়া ওয়েবসাইট। জাল ছাড়পত্রে তৈরি করা সেই ভুয়া ওয়েবসাইটের ঠিকানাও লিখে দেন।

মূল ছাড়পত্রে বলা হয়, আমদানিনীতি আদেশ প্রতিপালন না হওয়ায় এই পণ্য চালানের ছাড়পত্র ইস্যু করার সুযোগ নেই। অনুমতি না পাওয়া পণ্য খালাস করা যাবে না জেনে আমদানিকারক আসল ছাড়পত্রটি কাস্টমস হাউসে জমা দেননি। তখন মূল ছাড়পত্রের তারিখ ও নথি ঠিক রেখে পণ্য খালাস করা যাবে উল্লেখ করে নকল ছাড়পত্র তৈরি করেন তিনি।

কর্মকর্তারা জানান, আমদানিকারক জানতেন, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে শর্তযুক্ত পণ্য আমদানি করেছেন তিনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এই পণ্য খালাসের ছাড়পত্র পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই একদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নথিপত্র দিয়ে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেন, অন্যদিকে ১ অক্টোবর কাস্টমস হাউসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি জাল ছাড়পত্র দিয়ে পণ্য খালাসের চেষ্টা চালান। এরপর ৭ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ওই আমদানিকারক বরাবর মূল ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

মূল ছাড়পত্রে বলা হয়, আমদানিনীতি আদেশ প্রতিপালন না হওয়ায় এই পণ্য চালানের ছাড়পত্র ইস্যু করার সুযোগ নেই। অনুমতি না পাওয়া পণ্য খালাস করা যাবে না জেনে আমদানিকারক আসল ছাড়পত্রটি কাস্টমস হাউসে জমা দেননি। তখন মূল ছাড়পত্রের তারিখ ও নথি ঠিক রেখে পণ্য খালাস করা যাবে উল্লেখ করে নকল ছাড়পত্র তৈরি করেন তিনি। দ্বিতীয়বারের মতো কাস্টম হাউসে জমা দেন আমদানিকারক।

পরপর দুটি ছাড়পত্র দেখে সন্দেহ হয় কাস্টমস কর্মকর্তাদের। কাস্টমসের সহকারী কমিশনার নূর-এ-হাসনা সানজিদা অনসূয়া তাঁর সন্দেহের বিষয়টি কাস্টমস কমিশনার ফখরুল আলমকে জানান। তিনি দুটো ছাড়পত্রই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে ও সরাসরি কথা বলে যাচাই করার নির্দেশ দেন। কমিশনারের নির্দেশে ছাড়পত্র ইস্যুকারী কর্মকর্তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আবদুল আউয়ালের সঙ্গে কথা বলে ছাড়পত্র নকল বলে জানতে পারেন। তখনই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু হওয়া আসল ছাড়পত্র এনে জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত হন কাস্টমস কর্মকর্তারা।

এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমদানিকারকেরা যেভাবে নথিপত্র দেন, সেভাবেই আমরা পণ্য খালাসের জন্য কাস্টম হাউসে জমা দিই।
খান এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার গোলাম মওলা খান

মামলার বিষয়ে জানতে মেসার্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মো. জলিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আমদানিকারকের পক্ষে পণ্য খালাসে নিয়োজিত খান এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার গোলাম মওলা খানের মুঠোফোনে আজ যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমদানিকারকেরা যেভাবে নথিপত্র দেন, সেভাবেই আমরা পণ্য খালাসের জন্য কাস্টম হাউসে জমা দিই।’