কে কী করেছেন, ভোটাররা অবশ্যই বিবেচনা করবেন

আট বছর পর তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট হবে আগামী ৪ এপ্রিল। সংগঠনটির ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৩৫টি পরিচালক পদে সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের হয়ে লড়ছেন ৭০ জন প্রার্থী। নানাভাবে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন প্রার্থীরা। প্রচার-প্রচারণার ব্যস্ততার ফাঁকে নির্বাচনসহ তৈরি পোশাকশিল্পের নানা বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন সম্মিলিত পরিষদের ফোরামের প্যানেল লিডার এ বি এম সামসুদ্দিন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শুভংকর কর্মকার।

এ বি এম সামসুদ্দিন

প্রশ্ন :

আট বছর পর বিজিএমইএর নেতৃত্ব নির্বাচনে আবার ভোটের সংস্কৃতি ফিরছে। ফোরামের প্যানেল লিডার হিসেবে বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?

এ বি এম সামসুদ্দিন: সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের সমন্বিত প্যানেল বর্তমানে বিজিএমইএর পরিচালনায় রয়েছে। তাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে ফোরাম। তো সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে পর্ষদের একাংশ বর্তমান কমিটির মেয়াদ ছয় মাস বাড়াতে আলোচনা উত্থাপন করেছিল। প্রস্তাবে সম্মিলিত পরিষদের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সমর্থনও করেছিলেন। তবে পর্ষদের আরেক অংশ (সম্মিলিত পরিষদ) কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধিতে আপত্তি জানিয়ে নির্বাচন দাবি করে। করোনার পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। ইউরোপের অধিকাংশ দেশে লকডাউন চলছে। এপ্রিল মাসেও অনেক দেশ স্বাভাবিক হবে না। অন্যদিকে সামনে দুটি ঈদ। তখন শ্রমিকের বেতন-ভাতা দেওয়ার বিষয় আছে। এখন নির্বাচন না হলে বর্তমান পর্ষদ মালিকদের স্বার্থে সরকারের কাছে কোনো প্রস্তাব দেওয়ার প্রয়োজন হলে সেটিও করতে পারত। কিন্তু নির্বাচনের কারণে গত দুই মাস বিজিএমইএর পর্ষদ কোনো কাজ করতে পারছে না। যেহেতু একপক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে অনড়, সে কারণে ভোট হচ্ছে।

প্রশ্ন :

নির্বাচনের কারণে কী তৈরি পোশাকশিল্পের ক্ষতি হচ্ছে?

এ বি এম সামসুদ্দিন: লাভ-লোকসান তো জানি না। নির্বাচন ছয় মাস পর হলে বর্তমান পর্ষদ কারখানার মালিকদের আরেকটু সেবা দিতে পারত। করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য সবারই নাজুক। সামনে দুটি ঈদ। তখন সংকট হলে বর্তমান পর্ষদ সহজেই সামাল দিতে পারত।

প্রশ্ন :

তাহলে কি ফোরাম বাধ্য হয়ে নির্বাচন করছে?

এ বি এম সামসুদ্দিন: এটা বাধ্য হওয়া নয়। সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্বাধীন বিজিএমইএর আগের পর্ষদে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তিন দফায় ১৯ মাস বাড়তি সময় নিয়েছিল। সেই দলের লোকজনই যদি বলেন, দুই বছর হয়ে যাচ্ছে, এখনই নির্বাচন করতে হবে, তাহলে তো কিছু করার নেই। আমরা কেন বলব, নির্বাচন করব না। তাহলে তারা মনে করবে, আমরা দুর্বল।

প্রশ্ন :

অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের সমন্বয়ে আপনারা প্যানেল দিয়েছেন। আপনারা সুযোগ পেলে পোশাকশিল্পকে এগিয়ে নেওয়া ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কতটা ভূমিকা রাখতে পারবেন?

এ বি এম সামসুদ্দিন: আমাদের প্যানেলের প্রত্যেকেই উচ্চশিক্ষিত ও সফল ব্যবসায়ী। নির্বাচনে আমাদের পুরো প্যানেল যদি জয়ী হয়, তাহলে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বকে জয় করতে পারবে।

প্রশ্ন :

নির্বাচনী মাঠের অবস্থা কী?

এ বি এম সামসুদ্দিন: সেটি আমি বলতে পারব না।

প্রশ্ন :

আপনি তো প্যানেল লিডার—

এ বি এম সামসুদ্দিন: আমি প্যানেল লিডার হয়েছি তো কী হয়েছে। ভোট দেবেন ভোটার। ভোটার কাকে ভোট দেবেন, সেটি আমি কী করে বলব।

প্রশ্ন :

প্রতিদিনই তো ভোটারদের সঙ্গে আপনারা কথা বলছেন। ভোট চাইছেন—

এ বি এম সামসুদ্দিন: কোনো ভোটারই মুখের ওপর বলে না, আপনাকে ভোট দেব না। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা খেতখামার থেকে উঠে আসেননি। তাঁরা প্রত্যেকেই শিক্ষিত। কার মনে কী আছে, কে কাকে ভোট দেবেন, সেটি তো আমার জানার কথা নয়।

প্রশ্ন :

জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?

এ বি এম সামসুদ্দিন: সেটিও আমি বলতে পারব না। নির্বাচনে সদস্যরা ভোট দেবেন। সেই ভোট গোনা হবে। এরপর বলতে পারব, আমি জিতেছি, নাকি হেরেছি।

প্রশ্ন :

বিজিএমইএর নির্বাচনের আগে প্রত্যেক প্যানেলই আনুষ্ঠানিকভাবে ইশতেহার দেয়। আপনারা আজ ২৪ মার্চ পর্যন্ত ইশতেহার দেননি। তো নির্বাচনে জয়ী হলে আপনারা কোন বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জোর দেবেন?

এ বি এম সামসুদ্দিন: বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে করোনা সংকট মোকাবিলা। কারণ, মহামারির কারণে গত এক বছর ব্যবসা ভালো হয়নি। আগামী এপ্রিলের আগে ইউরোপের কোনো দেশ খোলার সম্ভাবনা নেই। সাত মাস বন্ধ থাকার পর ক্রয়াদেশের কী অবস্থা হবে, সেটি বলা যাচ্ছে না। আবার সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশ হবে বাংলাদেশ। এরপর তিন বছরের মধ্যে আমরা জিএসপি হারাব। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। সরকার আমাদের তৈরি করে দেবে না। তাই আমাদের কাজের মধ্যে এগুলো প্রাধান্য পাবে। আমাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে মানুষকে খুশি করার জন্য কোনো মুখরোচক কথা নেই। বাস্তবসম্মত প্রতিশ্রুতি দেব, যা দিয়ে পোশাকশিল্প ও দেশকে এগিয়ে নেওয়া যাবে। তা ছাড়া ভবিষ্যতে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে বেশি। কারণ কোনো ঘোষণা ছাড়াই সমস্যা আসবে।

প্রশ্ন :

তাহলে আপনারা কি ইশতেহার দেবেন না?

এ বি এম সামসুদ্দিন: দেব। বর্তমান বোর্ডের কিছু কাজ পাইপলাইনে আছে। গত দুই বছর বোর্ড কিছু কিছু কাজ করেছে। কিছু কাজ আংশিক করেছে। আবার কিছু কাজ কেবল শুরু করেছে। এই বিষয়গুলো আমাদের ইশতেহারে প্রাধান্য পাবে। যাতে পোশাকমালিকদের প্রাথমিকভাবে কিছুটা সহযোগিতা করতে পারে। নীতিগত বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

প্রশ্ন :

ফোরামে নেতৃত্বাধীন বিজিএমইএর বর্তমান পর্ষদ বেশ কিছু ভালো কাজ করেছে। তাদের দু-একটি সিদ্ধান্তে সমালোচনাও হয়েছে। তো আগামী নির্বাচনে বর্তমান পর্ষদের কাজ আপনাদের এগিয়ে রাখবে, নাকি পিছিয়ে দেবে?

এ বি এম সামসুদ্দিন: আমি একটা কথা পরিষ্কার করে বলেছি, আমাকে ভোট দিলে নির্বাচিত হব। না হলে হব না। বর্তমান পর্ষদের কারণে আমরা নির্বাচনে এগিয়ে নাকি পিছিয়ে থাকব, সেটি সদস্যরা জানেন। তাঁদের মনের কথা আমার জানা নেই। বিজিএমইএর অতীতের পর্ষদ আর বর্তমান পর্ষদ কীভাবে কাজ করেছে, সেটি ভোটাররা অবশ্যই বিবেচনা করবেন বলে আমার মনে হয়।

প্রশ্ন :

ভোট কি সুষ্ঠু হবে?

এ বি এম সামসুদ্দিন: ঢাকায় র​্যাডিসন হোটেলে ভোট হবে। তাই সুষ্ঠু না হওয়ার কোনো কারণ নেই।

প্রশ্ন :

শিগগিরই কি তৈরি পোশাকের ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াবে?

এ বি এম সামসুদ্দিন: করোনার কারণে সামগ্রিকভাবেই ব্যবসা কম। এরপরও এশিয়ার প্রতিযোগী দেশের তুলনায় আমাদের ব্যবসা ভালো। তার কারণ গত বছর মজুরি দেওয়ার জন্য সরকার আমাদের স্বল্প সুদে চার মাসের মজুরি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এই সুবিধা এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো পায়নি। ঋণ না পেলে হয়তো কারখানা বন্ধ হয়ে যেত। তখন ক্রয়াদেশ এলেও কাজ করতে পারতাম না। তবে সার্বিক অবস্থা খারাপ, কারণ বিক্রি কম। ইউরোপ না খোলা পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না।

প্রথম আলো: ধন্যবাদ।

এ বি এম সামসুদ্দিন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

এ বি এম সামসুদ্দিন ,প্যানেল লিডার, ফোরাম