খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পনগর হচ্ছে

কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে প্রথমবারের মতো খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পনগরী করতে যাচ্ছে সরকার। উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁও সদরে ৫০ একর জায়গার ওপর এ শিল্পনগরী স্থাপন করবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ শিল্পনগরী করতে যাচ্ছে বিসিক।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যথাযথ প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণ সুবিধার অভাবে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ফল ও সবজি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কৃষক তাঁর পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। আবার পণ্যের মূল্যেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ অবস্থায় কৃষিপণ্য নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিসিক চেয়ারম্যান মোশতাক হাসান বলেন, ‘কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতেই বিসিকের পক্ষ থেকে উত্তরাঞ্চলে একটি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পনগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুই বছরের মধ্যেই কাজটি শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।’

বিসিকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। দেশের খাদ্য চাহিদার ৫০ শতাংশ এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পের কাঁচামালের ৭০ ভাগের জোগান আসে এ অঞ্চল থেকে। এসব জেলায় প্রচুর পরিমাণে আলু, টমেটো, পেঁয়াজ, রসুন, আম, কলা, লিচু, কাঁঠাল, শাকসবজি, ফলমূল ও ধান উৎপন্ন হয়। কিন্তু খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পনগরী না থাকায় একদিকে কৃষক পণ্যের যথাযথ দাম পাচ্ছে না, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দামের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

কী থাকবে শিল্পনগরীটিতে

বিসিক বলছে, উত্তরাঞ্চলে প্রচুর আলু হয়। ঠাকুরগাঁওয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পনগরী হলে সেখানে আলু দিয়ে চিপসসহ নানা ধরনের খাবার তৈরির কারখানা করা যাবে। একইভাবে টমেটো প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে সসসহ নানা ধরনের খাবার তৈরির কারখানা গড়ে উঠবে। আম, লিচু প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে জুস তৈরির কারখানা করার সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়া শীতকালীন সবজি ফুলকপি, শিমসহ অন্যান্য পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থাও থাকবে। এসব কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে স্থানীয় কৃষকের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে বিসিক।

এ শিল্পনগরী স্থাপন নিয়ে ৫ নভেম্বর একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান, যে ৫০ একর জমির ওপর শিল্পনগরীটি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে ১২ একর জমি দুই ফসলি। ফলে প্রকল্পটি লাল চিহ্নিত। তাই প্রকল্পটি শুরুর আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছ থেকে পরিবেশগত ছাড়পত্র নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ধাপে ধাপে হবে আরও ৪টি

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও বিসিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উত্তরাঞ্চলে মোট পাঁচটি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পনগরী করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর মধ্যে বেজা করবে তিনটি অঞ্চল। বাকি দুটি করবে বিসিক। নীলফামারী, পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রামে তিনটি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল করার ব্যাপারে দুই বছর আগে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়ায় ৩০০ একর জায়গার ওপর প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পনগরী করতে চায় বিসিক।

বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষক নাজনীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, উত্তরাঞ্চলে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগটি ভালো। তবে কৃষকের সঙ্গে বাজারের সরাসরি যোগাযোগ করে দিতে হবে।