গাড়ি কেনার আগে যা ভাবা জরুরি

অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটার সুবাদে এ দেশে গাড়ির চাহিদা বাড়লেও, তা এখনো সহজলভ্য নয়। তাই কষ্টের টাকায় গাড়ি কেনার আগে ক্রেতাকে টাকার জোগান ও দাম থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতির প্রাপ্যতা, চালকের বেতনসহ মাসিক খরচ এবং কয়েক বছর পর বেচে দিলে কত পাওয়া যাবে, এসব দিক ভাবতে হয়।

ঢাকার একটি বিক্রয়কেন্দ্রে গাড়ি দেখছেন একজন ক্রেতাছবি: প্রথম আলো

শহরের মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তদের মধ্যে গাড়ি কেনায় আগ্রহ বেড়েছে। সন্তানদের স্কুল-কলেজে আনা–নেওয়া আর নিজের অফিসে যাতায়াতসহ দৈনন্দিন চলাচলের জন্যই মূলত তাঁরা ব্যক্তিগত গাড়ি কিনতে চান। কিন্তু এ দেশে এখনো গাড়ি সহজলভ্য নয়। তাই কষ্টের টাকায় গাড়ি কেনার আগে একজন ক্রেতাকে নানা দিক ভাবতে হয়। দেখা যাক গাড়ি কেনার আগে একজন ক্রেতাকে কোন কোন বিষয় বিবেচনায় রাখতে হয়।

সবকিছুর আগে দাম

বাংলাদেশের বাজারে নানা দামের গাড়ি পাওয়া যায়। নতুন গাড়ির দাম বেশি। রিকন্ডিশন্ড, তথা আমদানি করা পুরোনো গাড়ির দাম কিছুটা কম। রিকন্ডিশন্ড গাড়ির মধ্যে সবচেয়ে বড় হিস্যা জাপানি টয়োটা ব্র্যান্ডের। এই ব্র্যান্ডের গাড়ির দামও ১০ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে ভালো ব্র্যান্ডের নতুন গাড়ি কিনতে চাইলে কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা গুনতে হবে। তাই গাড়ি কেনার আগে ক্রেতাদের নিজ নিজ সামর্থ্যের কথা ভেবে গাড়ি পছন্দ করতে হয়। সে জন্যই হয়তো সব মিলিয়ে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দিকেই বাংলাদেশের ক্রেতাদের বেশি ঝোঁক। তবে স্বপ্নের সঙ্গে সামর্থ্যের সংযোগ ঘটাতে না পারলে অনেকে আবার দেশে ব্যবহৃত পুরোনো গাড়ি কেনেন। সে ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম দামে গাড়ি মেলে। যা–ই হোক, ব্যক্তিগত গাড়ি হিসেবে ১৫০০ সিসির গাড়িই বেশি পছন্দ ক্রেতাদের।

টাকার জোগান

গাড়ি কেনার আগে টাকার জোগান কীভাবে হবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা দরকার। নিজের টাকায় গাড়ি কিনতে পারলে তো কথাই নেই। অনেকে নিজের কিছু জমানো টাকার পাশাপাশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েও গাড়ি কেনেন। ধরুন, আপনার নিজের ১০ লাখ টাকা আছে। ব্যাংক থেকে আরও ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনতে পারবেন। বর্তমানে ব্যাংকগুলো গাড়ির দামের ৫০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও সহজ শর্তে গাড়ির ঋণ দিয়ে থাকে।

যন্ত্রাংশের বাজার

শুধু গাড়ি কিনলেই হবে না, গাড়ি কেনার পর যেকোনো সময়ে গাড়ির সমস্যা হতে পারে। নির্দিষ্ট সময় পরপর গাড়ির কিছু যন্ত্র বা যন্ত্রাংশও পাল্টানোর দরকার পড়ে। ওই সব যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ যদি বাজারে না পাওয়া যায়, কিংবা সহজলভ্য না হয়, তাহলে তো বিপদ। কয়েক দিন গ্যারেজে বা ওয়ার্কশপে গাড়ি বসিয়ে রাখতে হবে। তাই গাড়ি কেনার আগে ক্রেতাকে যন্ত্রাংশের বাজারের কথাও চিন্তা করতে হয়। যেসব গাড়ির যন্ত্রাংশের বাজার সহজলভ্য, সেসব গাড়ি কিনতেই বেশি আগ্রহী হন ক্রেতারা। বাংলাদেশে টয়োটা ব্র্যান্ডের যন্ত্রাংশের বাজার বেশ ভালো বলেই এই গাড়ি কেনেন অধিকাংশ ক্রেতা।

গাড়ির পেছনে খরচ

একজন ক্রেতা গাড়ি কেনার আগে ভাবেন, গাড়িতে প্রতি মাসে কত খরচ হবে। শুধু গাড়ি কিনলেই তো আর হবে না, প্রতি মাসে গাড়ির পেছনে খরচের কথাও ভাবতে হয়। গাড়ির জ্বালানি, সার্ভিসিং ও যন্ত্রাংশের খরচ এবং চালকের বেতন—এসব বিবেচনা করে মাসে একটি খরচ প্রাক্কলন করতে হয়। সে অনুযায়ী দেশের বর্তমান বাজারে চালকসহ একটি গাড়ির পেছনে মাসে কমবেশি ২৫ হাজার টাকার মতো খরচ পড়ে বলে মনে করা হয়।

বিক্রি করলে দাম কেমন

গাড়ি কেনাসময় বিক্রির কথাও ভাবেন অনেক ক্রেতা। কয়েক বছর ব্যবহারের পরে বিক্রি করতে চাইলে কোন গাড়ির দাম কত পাওয়া যেতে পারে, তা চিন্তা করেও অনেক ক্রেতা কোন কোম্পানির গাড়ি কিনবেন, তা ঠিক করেন। পুরোনো গাড়ি বেচাকেনায় বাংলাদেশে টয়োটা গাড়ির বাজারই সবচেয়ে ভালো। কারণ, দেশের বাজারে এই ব্র্যান্ডের গাড়ির যন্ত্রাংশই অধিকতর সহজলভ্য।